আবার সীমান্ত উত্তেজনায় জড়িয়ে পড়তে পারে চীন ও ভারত
গত বছর দুই দেশ দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ভারত-চীন-ভুটান সীমান্তের ওই মালভূমিতে একে অপরের মুখোমুখি ছিল।ভুটান ও চীনের দাবি করা একটি স্থানে চীনা ইঞ্জিনিয়ারদের রাস্তা নির্মাণ বন্ধে ১৬ জুন ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী হস্তক্ষেপ করার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
ওই এলাকার ওপর ভুটানের দাবিকে সমর্থন করে ভারত। স্থানটি শিলিগুড়ি করিডোর তথা চিকেন্স নেক হিসেবে পরিচিত সংকীর্ণ একটি কৌশলগত এলাকার খুব কাছে অবস্থিত। এই এলাকাটির মাধ্যমেই উত্তর-পূর্ব ভারতীয় রাজ্যগুলোর সাথে ভারতের মূল ভূখণ্ড সংযুক্ত।
ভারতীয় মিডিয়ায় উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে বিশ্লেষকেরা বলছেন, উভয় দেশ দোকলামের কাছাকাছি এলাকায় শক্তি বৃদ্ধি করছে। ভারতের শক্তি বৃদ্ধির তুলনায় চীনা শক্তি বৃদ্ধি অনেক বেশি।
জওহের লাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা স্টাডিজের অধ্যাপক ড. শ্রীকান্ত কোন্ডাপালি বলেন, সাম্প্রতিক উপগ্রহ চিত্রে দেখা যায়, উভয় দেশের শক্তি বাড়ছে। চীন বাড়াচ্ছে অনেক বেশি শক্তি।
তিনি বলেন, উভয় দেশ নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকলে আমরা আরেকটি ঘটনা দেখতে পাবো। এর প্রবল সম্ভাবনা থাকবে। যেটা পরিষ্কার তা হলো, উভয় পক্ষ তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে। ঠাণ্ডা আবহাওয়ার মধ্যেও চীন দোকলামে ১৮০০ সৈন্য পাঠিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
আমেরিকান ভূ-রাজনৈতিক গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান ও প্রকাশক স্ট্র্যাটফোর দুটি চীনা ও দুটি ভারতীয় বিমান ঘাঁটির ছবি বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, ‘কৌশলগত শক্তিবৃদ্ধি বেড়েছে, বিশেষ করে চীনাদের।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উপগ্রহ চিত্রে দেখা যাচ্ছে, কাছাকাছি দুটি ঘাঁটিতে চীনা জঙ্গি বিমান ও হেলিকপ্টারের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে। শিগ্যাটসে পিস এয়ারপোর্টের বিমানক্ষেত্রে আধুনিকায়নও করেছে চীন। স্থানটি দোকলাম থেকে ২২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তারা মধ্য ডিসেম্বরে একটি নতুন রানওয়ে এবং আটটি নতুন হেলিপ্যাডও তৈরি করেছে।
অন্যদিকে ভারত শিলিগুড়ি বাগদোগ্রা বিমান ঘাঁটি ও হাসিমারা এয়ার ফোর্স স্টেশনে সু-৩০এমকেআই জঙ্গিবিমান মোতায়েন করেছে। দোকলাম থেকে স্থান দুটির দূরত্ব যথাক্রমে ৯৭ কিলোমিটার থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
স্ট্র্যাটফোর বিশ্লেষণে বলা হয়, এতে বোঝা যাচ্ছে, দোকলামের কাছে ভারত তাদের শক্তি বাড়িয়েছে।ভারত ও চীনের মধ্যকা প্রায় চার হাজার কিলোমিটার সীমান্তের অনেক স্থান নিয়ে বিরোধ রয়েছে। তবে ১৯৯০-এর দশকে দুই দেশ একমত হয়, তাদের মধ্যকার সীমান্ত বিরোধ অর্থনীতিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রভাব সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। ফলে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়, ভারতের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে বহাল থাকে চীন।
তবে দোকলাম সঙ্কট অনেক গুরুত্বপূর্ণ উত্তেজনা। চীনের রাস্তা নির্মাণকাজ ভারত বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বিরোধটি মেটেনি।
দিল্লির ইনস্টিটিউট অব চায়নিস স্টাডিজের অনারারি ফেলো অধ্যাপক শ্রীমতি চক্রবর্তী বলেন, ভারত যদি আবারো রাস্তা নির্মাণে বাধা দেয়, তবে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। রাস্তা নির্মাণ না করার কোনো প্রতিশ্রুতি চীন কখনো দেয়নি।
তবে দোকলামে নিজের শক্তি বৃদ্ধির কথা অস্বীকার করেছে ভারত। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মধ্য জানুয়ারিতে জানিয়েছে, দোকলামের স্থিতিবস্থা বহাল রয়েছে।
বিশ্লেষকেরা অবশ্য বলছেন, ভারত বা চীন কেউই বৈরিতা বাড়াতে চায় না।
খবর সাউথএশিয়ান মনিটরের।
ই- বার্তা/ এ এস