ইনসুলিনের সাতকাহন
ইনসুলিন একটি প্রোটিনধর্মী হরমোন। এই হরমোনটি ব্যবহৃত হয় বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস রোগে। শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন দেওয়া হয়। প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন তৈরি হয়। অগ্ন্যাশয় হলো ইনসুলিন তৈরির কারখানা। ধূসর বাদামি অগ্ন্যাশয়ের ওজন ৮০ থেকে ৯০ গ্রাম। আকৃতিতে অর্ধডিম্বাকৃতির। এ অঙ্গের সামনের দিক গোলাকার এবং পেছনের দিক কোণাকৃতির। অগ্ন্যাশয়কে এক হাতে (পাঁচ আঙুলের মধ্যে) নেওয়া যায়। এটি লম্বায় প্রায় ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার, তিন সেন্টিমিটার চওড়া এবং দুই সেন্টিমিটার প্রশস্ত।
এর সামনের গোলাকার অংশকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় মাথা, মাঝের অংশ দেহ এবং শেষের কোণাকৃতি অংশটা লেজ। অগ্ন্যাশয়ে রয়েছে অসংখ্য নালি। এই নালিগুলো বিভিন্ন নিঃসরণকারী কোষ দিয়ে আবৃত। এ কোষগুলো একত্র হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রন্থি তৈরি করে। এমনই একটি গ্রন্থি হলো আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স। এই গ্রন্থি থেকে ইনসুলিন, গ্লুকাগন, গ্যাস্ট্রিন, সোমাটোস্ট্যাটিন প্রভৃতি হরমোন নিঃসৃত হয়। হরমোনগুলোর মধ্যে ৭৫ শতাংশ তৈরি হয় ইনসুলিন এবং ২০ শতাংশ গ্লুকাগন। ইনসুলিন তৈরি হয় আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্সের বিটা কোষ থেকে। অগ্ন্যাশয়ের এই বিটা কোষ নষ্ট বা দুর্বল হয়ে গেলে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা কমে যায়। ইনসুলিন রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজকে কমিয়ে দেয়। বহুমূত্র রোগের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে অগ্ন্যাশয় দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন ইনসুলিনের ঘাটতি দেখা দেয়, ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ে। তখন ইনসুলিন নিতে হয়। গ্লুকাগন হরমোন দেহে গ্লুকোজের মাত্রা কমে গেলে তা বাড়ায়। গ্যাস্ট্রিন পাকস্থলী থেকে এনজাইম নিঃসরণ করে, হজমে সাহায্য করে। অর্থাৎ গ্যাস্ট্রিন এক ধরনের পাচক-রস।
যত্ন নিন অগ্ন্যাশয়ের-
১। শরীরে ইনসুলিন ও গ্লুকাগনের মধ্যে সাম্যাবস্থা রাখা জরুরি। তাই সব সময় উচ্চ রক্তচাপ, বহুমূত্র রোগ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
২। তৈলাক্ত খাবার কম খেয়ে ফল, ফলের রস, পানি ও তরলজাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে অগ্ন্যাশয়ে চর্বি জমবে না। আর অগ্ন্যাশয় থেকে হরমোন ও পাচক-রস সঠিকভাবে নিঃসৃত হবে।
৩। উচ্চমাত্রার ডায়াবেটিক রোগীরা বহু বছর ধরে ইনসুলিন নিলে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়। তাই এ বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৪। হঠাৎ খাওয়াদাওয়া খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ করবেন না। এতে শরীরে গ্লুকোজ খুব কমে যেতে পারে, ফলে গ্লুকাগন ইনসুলিনের মধ্যে সাম্যাবস্থায় বিঘœ ঘটবে।
৫। খাবার ভালোমতো চিবিয়ে খান। আমাদের মুখের লালায় অসংখ্য এনজাইম বা উৎসেচক রয়েছে। এই এনজাইমগুলো খাবার হজমে সাহায্য করে। খাবার ঠিকমতো চিবিয়ে না খেলে পাচক-রস তৈরিতে সমস্যা হয় (অগ্ন্যাশয়ের)।
৬। ডায়াবেটিক রোগীরা রোগের মাত্রা বুঝে খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণ করুন।
৭। বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
ডাঃ ফারহানা মোবিন
রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ
স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা।
এম.পি.এইচ, সিসিডি (বারডেম হাসপাতাল)
সি-কার্ড (ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন)
কোয়ান্টাম গ্রাজুয়েট (কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন)