একজন প্রতিভাবান তরুণ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতার গল্প
ই- বার্তা।। প্রথম সিনেমা ‘তবে কি পলায়নেই মঙ্গল’ দিয়েই বাজিমাত করেছেন তরুণ চলচিত্র নির্মাতা ফুয়াদুজ্জামান ফুয়াদ। তার নতুন সিনেমার নাম ‘দালির শুক্রাণু’। এই বছরেই মুক্তি পাবে সিনেমাটি। গল্পের দৈর্ঘ প্রায় সাড়ে আট মিনিট। গল্প বলার চাপ অনুভব করলেই গল্প বলতে ভালোবাসেন। সেটা সিনেমা, নাটক কিংবা ওয়েব সিরিজে হোক না কেন। বেশ কয়েকটা মন ছুঁয়ে যাওয়া স্বল্প দৈর্ঘের চলচিত্রের নির্মাতা তিনি।
স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করে অনেক তরুণ বড় পরিসরে কাজ করার সুযোগের পাশাপাশি পাচ্ছেন পরিচিতি এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মান।তেমনি একজন ফুয়াদুজ্জামান ফুয়াদ। বেড়ে উঠা সিরাজগঞ্জে, স্নাতক শেষ করেছেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব) থেকে।
সুবিধাবঞ্চিত মানুষ, পথশিশুদের অধিকার সচেতন করতেই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে আসা এই তরুণের।
ই-বার্তার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসে বলেছেন তার সিনেমার বিশ্বাস, নিজের কথা, নতুন ছবি, আগামীর নির্মাতাদের জন্য কথাসহ তার নিজস্ব প্রেম ভাবনা। ই-বার্তার হেড অফ নিউজ আহাদ সাগরের সঙ্গে বলেছেন তার নিজেকে নিয়ে অনেক কথা। সেই সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ…
২০১৭ সালে আমার প্রথম চলচিত্রের কাজ শুরু, এরপর সেটা শেষ করতে করতে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসে শেষ হয়। কাজ শেষে এটা ড্রিস্টিবিশন করা হয়, বিভিন্ন ফেস্টিভালে আমরা এটার ড্রিস্টিবিউশন করি। প্রথম সিনেমার নাম ছিল ‘তবে কি পলায়নে মঙ্গল’।
এরপর ২০১৮ সালের শেষের দিকে সেপ্টেম্বর মাসে ‘সালভেশন অব অক্সিজেন’। আমরা এমন একটা সময়ে এক্সিস্ট করতেছি যার একটা ইমাজিনেশন ছিল। সিনেমার গল্পটা খানিকটা এরকম ছিল, আসলে আমরা এমন একটা সময়ে এক্সিস্ট করি যে সময়টায় কোনো গাছ নেই। পৃথিবীতে যখন গাছ নেই বা কিছু সংখ্যক গাছ আছে মানুষ তখন তার নিজের অক্সিজেনের জন্য নিজেই গাছ হাতে নিয়ে ঘুরে। যে রকম একটা ল্যাপটপ অথবা ফোন যেমন নিজের প্রয়োজনে সারক্ষণ হাতে রাখি, নিজের কাছে রাখি ঠিক সেরকম। গাছটা সেরকম আমরা নিজের হাতে নিয়ে ঘুরছি অক্সিজেনের জন্য। এরকম একটা চিন্তার জায়গা থেকেই ‘সালভেশন অব অক্সিজেন’ সিনেমাটা বানানো।
এরও আগে ‘ত্রিকোণোমিতি’ নামে আমি এক শটে একটি সিনেমা বানাই। সিনেমাটা আমার ভার্সিটির প্রজেক্টের জন্য নির্মিত ছিল। এটা দিলে আমি পাশ করতে পারব এরকম একটা বিষয় ছিল। পরবর্তীতে এই সিনেমাটা বেশ কয়েকটা ফেস্টিভালে অংশগ্রহণ করে নেয়, বিশেষ করে ইন্ডিয়ার একটা ফেস্টিভাল, ‘পূনে ফিল্ম ফেস্টিভাল’ সেখানে সিনেমাটি সিলেক্ট হয় এবং এটা বেস্ট ডিরেক্টরের নমিনেশন পায়। যদিও আমরা সেখান থেকে কোনো পুরস্কার পাইনি।
‘সালভেশন অব অক্সিজেন’ প্রথম বাংলাদেশে ‘ঢাকা মোবাইল ফিল্ম ফেস্টিভাল’ হয় সেখানে এই সিনেমাটা সিলেক্ট হয়। সিনেমাটা এরপর বাইরেরও দুটি দেশে সিলেক্ট হয়। এরমধ্যে ওয়াশিংটন ডিসি ইউনিভার্সিটিতে একটা ফেস্টিভালে সিলেক্ট হয়। বেলজিয়ামের বেস্ট ইলেভেনে সিনেমাটি স্থান পায়।
আমার আপকামিং সিনেমা ‘দালির শুক্রাণু’। এই সিনেমাটি আমি শুট করি এখন থেকেও মোটামুটি বছরখানেক আগে। বিভিন্ন কারনে সিনেমাটি দর্শকদের সামনে নিয়ে আসতে দেরি হয়। সিনেমাটার শুট করা শেষে যখন এডিট করার সময় আমরা কিছু সমস্যা অনুভব করি। উত্তরণের পথ খুজে বের করে আমরা আবারও সিনেমাটার শুট করার সিদ্ধান্ত নেই। পরিকল্পনা করে এগোই, আর্টিস্টদের সাথে কথা বলি এবং আমি নিজ উদ্যোগে সিনেমাটি শেষ করার সিদ্ধান্ত নেই। অনেক চড়াইউতরাইয়ের পরে বর্তমানে সিনেমাটির পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ চলছে, মিউজিকেও শেষ বারের মত ঝালাই চলছে। আগামী বছরের শুরুতেই দর্শকরা সিনামটা উপভোগ করতে পারবেন। বিশেষ কারণে সিনেমার মূল কাহিনী দর্শকদের সামনে উন্মুক্ত করা যচ্ছে না, শেষ পর্যন্ত জানতে হলে দর্শকদের অবশ্যই সিনেমাটি দেখতে হবে, বলছিলেন এই তরুণ চলচিত্র নির্মাতা।
‘দালির শুক্রাণু’ সিনেমাটির গল্পের রচয়িতা আমার বন্ধু সাইদ। আমার সব থেকে ভালো লাগার বিষয় হচ্ছে এই সিনেমার প্রডিউসর হচ্ছে আমার মা এবং আমার ভাইয়া।
আমার সিনেমা বানানোর শুরুটা হয়েছে ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর। যখন আমি ২০১৪ সালে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ(ইউল্যাব) এ মিডিয়া স্টাডিজ এন্ড জার্নালিজম ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হই তখন থেকেই আমি সিডি চয়েস’এ কজ করতাম। ওরা মিউজিক ভিডিও বানায়। এখানে আমি কিছু মিউজিক ভিডিও নিয়ে কাজ করি। ঐ সময়টাতে আমি তখনও কিছু বুঝতাম না। গ্রাম থেকে আমার শহরে আসা সিনেমার প্রতি ভালোবাসা থেকে। তখনও আমি ভালোভাবে কিছু বুঝতাম না। ভালো খারাপের বিচার করতে পারতাম না। আসলেসে সমটাতে বিচার করার মতো সুযোগও আমি পাইনি।
২০১২ সালের দিকে গ্রামে তখনও ইন্টারনেট পৌঁছায়নি। টেলিভিশনে দেখে যতটুকু শিখেছি। গদবাধা কিছু মিউজিক ভিডিও দেখতাম, সিনেমা দেখতাম আর ভাবতাম এইটাই সেরা, এইটাই অনেক। এরপরে ঢাকাতে এসে সিডি চয়েসে প্রায় এক বছরের মত কাজ করে নিজেকে জাজ করতে শিখেছি।
আমি যখন তৃতীয় সেমিস্টারে পড়ি তখন আমার বন্ধু জাহিন হাসানের সাথে পরিচয় হয়। আমরা এক সাথে আড্ডা দিতাম, ক্লাস করতাম। একটা সময় আমার বন্ধু জাহিন হাসান আমার কাজের প্রতি আগ্রহটা বুঝতে পারে। প্রথমে তো অনেক খারাপ জিনিস বানাইতাম পরে ও বলল যে এইভাবে কাজ গুলো করলে আরও বেশি ভাল হবে। সত্যি কথা বলতে আমার যে টার্নিংটা সেটা করিয়েছে বন্ধু জাহিন। আমি যে গদবাধা জিনিস দেখতাম ওই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে সে আমাকে সাহয্য করেছে। সবসময় বলত তুই এই ধরনের সিনেমা দেখ তখন বুঝতে পারবি যে আসলে সিনেমাটা কি এবং কিভাবে বানানো হয়। পরে ওর কথা মতোই আমি ইউল্যাবের ‘সিনেমাস্কোপ’ এর সদস্য হই। সেখানে সিনেমার চর্চা হয়।
ফুয়াদুজ্জামান ফুয়াদ আরও বলেন, আমার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায় তা হলো সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অধিকার, দেশপ্রেম এবং মুক্তচিন্তা। এসব স্বল্পদের্ঘ্য চলচ্চিত্রের দৈর্ঘ্য ছোট হলেও উগ্র ধর্মান্ধ মৌলবাদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য যেন শক্তিশালী হয়। যে ভাবে নির্মাণ করুক না কেন আমাদের একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, সমাজ পরিবর্তনে যাতে ভালো কোনো বার্তা থাকে। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আমি অনেক বড় পরিসরে কাজ করতে চাই, এমন একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাই যা দেখে দর্শক মুগ্ধ হবে।