`এক খণ্ড বাংলাদেশ` আরবের মক্কা প্রদেশে তায়েফের বুকে
ই-বার্তা ডেস্ক ।। শাহ আলমঃ সৌদি আরবের মক্কা প্রদেশের একটি শহর ‘তায়েফ’। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনার পর এটি সবচেয়ে পবিত্র স্থান। মরুভূমির লোহিত সাগরের কাছের শুষ্ক ও অনুর্বর অঞ্চলের আবহাওয়া থেকে তায়েফের আবহাওয়া ভিন্নতর। দীর্ঘকাল ধরে তায়েফ গম ও আঙুরসহ ফলমূল উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ। বর্তমানে তায়েফে বিভিন্ন ফলের পাশাপাশি ফুলের চাষ হয়।
তবে গত কয়েকবছর ধরে বাংলাদেশিরা ফল-ফুল চাষের বদলে সবজি চাষ করছেন। কোথাও উপত্যকার সমতলে, কোথাও আবার একেবারে পাহাড়ের চূড়ায় চাষাবাদ হচ্ছে কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের শাকসবজি এবং ফলমূল। প্রায় ছয় হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের তায়েফ নগরীতে বাগানগুলো দেখে মনে হবে এ যেন ‘এক খণ্ড বাংলাদেশ’। সেখানে উৎপাদন হচ্ছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, গাজর, মূলা, বেগুন, পটল, শসা ও ধনেপাতা। আবার কোথাও কোথাও দেখা মেলে মাচার নিচে ঝুলে আছে চালকুমড়া, লাউ, ঝিঙার মতো লতানো সবজি। উৎপাদিত শাক-সবজিগুলো বিক্রি হচ্ছে মক্কা থেকে জেদ্দা পর্যন্ত নানান শহরে।
তায়েফের মাটিতে যে কয়েক জন বাংলাদেশী সবজি চাষ করেন, তাদের মধ্যে অন্যতম শাহ আলম রানা। তিনি কুমিল্লার বরুড়ার চেংহাটা গ্রামের আবদুল হামিদের ছেলে। তায়েফ শহরের পাশে আলগেম এলাকায় শাক-সবজি বাগান করে সফলতার মুখ দেখেছেন তিনি। মরুর বুকে সবজি বাগান গড়ে তোলা এবং সাফল্য ছুঁতে পারাটা এত সহ ছিলো না তার জন্য।
প্রায় ২০ বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমান শাহ আলম। পড়াশোনা করেছেন দাখিল (মাদ্রাসা) পর্যন্ত। এসেই মক্কা নগরের কাকিয়া এলাকায় সবজি বিক্রির দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিন্তু অন্যের অধীনে কাজ করা ভালো লাগছিল না টগবগে যুবক শাহ আলম রানার। অল্প বেতনে তিন বছর ওই দোকানে কাজ করার পর আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে কাকিয়া এলাকায় নিজেই একটি সবজির দোকান দিয়ে বসেন। শুরু হয় শাহ আলমের নতুন যুদ্ধ।
কয়েক বছর যাওয়ার পর তায়েফ নগরে একটি সবজি বাগান গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন তিনি। এক মালিকের কাছ থেকে আলগেম এলাকায় ভাড়া নেন ৫০ বিঘা জমি। শুরু করেন লাউ, শসা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, মুলা, বেগুন, পটল, শসা ও ধনেপাতার চাষ। প্রথম চাষেই সফলতার মুখ দেখেন। প্রতিদিন সকাল বেলা মক্কা থেকে তায়েফ যান। সন্ধ্যায় ফিরে আবার দোকানে বসেন। এভাবেই চলতে থাকে বছরের পর বছর।
স্থানীয়রা জানান, তায়েফ শহরের আশেপাশে অন্তত একশ’ ছোট-বড় শাক-সবজির বাগান রয়েছে। এসব বাগানে সারাবছরই শাক-সবজির চাষাবাদ হয়। সেখানে ২০-২৫টি কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশের তরুণরা। বাকিগুলো স্থানীয়দের। কিছু সবজি বাগান করেছেন ভারত ও পাকিস্তানের লোকজন। তবে সব খামারেই দু’একজন বাংলাদেশি কাজ করছেন।
শাহ আলম জানান, জীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে হলে ঝুঁকি নিতে হবে এবং ঘাম ঝরাতে হবে। শুধু ঘাম ঝরালেই হবে না; তা হতে হবে সঠিক পথে। তবেই সফলতা অনিবার্য।
ই-বার্তা / তামান্না আলী প্রিয়া