কলকাতায় বাংলাদেশী শিল্পীদের রাজত্ব!

সময়ের স্রোতে ঢাকাই সিনেমা তার জৌলুস হারিয়েছে। চলছে সোনালি অতীত ফিরিয়ে আনার আপ্রাণ চেষ্টা। এ মন্দা সময়ে ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রভাব ফেলছে কলকাতার সিনেমা। ওই পারের তারকারা ঢাকার বাজারে এসে রাজত্ব করতে চাইছেন।

 

যদিও তাদের সফলতা অধরাই রয়ে গেছে। কিন্তু ওপার বাংলায় শক্তিশালী অবস্থান গড়ে নিয়েছেন বাংলাদেশের নন্দিত অভিনেত্রী জয়া আহসান ও ঢালিউডের কিং খানখ্যাত চিত্রনায়ক শাকিব খান। দুই বাংলার মধ্যে চলচ্চিত্রের শিল্পী ও মেধার এ আদান-প্রদান বহু পুরনো।

কিন্তু হিসাব কষে দেখা গেল, এই দেয়া-নেয়ার খাতায় সাফল্যের পাল্লায় অনেক ভারী বাংলাদেশের নাম। আশির দশকের মাঝামাঝি থেকেই টালিগঞ্জের সিনেমায় রাজত্ব করেছেন ঢাকাই সিনেমার নির্মাতা, শিল্পীরা। এপারের মেধা সমৃদ্ধ করেছে ওপারের সিনেমাকে।

বিস্তারিত লিখেছেন লিমন আহমেদ। দুই বাংলার শিল্পী ও মেধার আদান প্রদানে বরাবরই কলকাতায় সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। আজকের কলকাতায় চলচ্চিত্রশিল্প এখন অনেক আপডেট। তাদের গল্প, নির্মাণশৈলী, টেকনোলজি- সবখানেই এসেছে ডিজিটালের সফল ছোঁয়া।

কিন্তু আশির দশকের মাঝামাঝিতে উত্তম কুমারের মৃত্যুর পর বিরাট একটি শূন্যতার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল টালিগঞ্জের সিনেমা। একের পর এক ছবি মুনাফা হারানোর ফলে কমে এসেছিল প্রযোজক, কমেছিল পরিচালকের সংখ্যাও।

সিনেমা প্রযোজনার অনেক নামি প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যবসা গুটিয়ে অন্য ব্যবসায়ে নাম লিখিয়েছিল। শিল্পীরাও বেকার হয়ে পড়েছিলেন। সেই মন্দা অবস্থা কাটিয়ে ইন্ডাস্ট্রিকে আবারও ঘুরে দাঁড় করিয়েছিলেন কিছু মানুষ। আর তাদের মধ্যে উজ্জ্বল কিছু নাম বাংলাদেশেরও।

অন্যতম একজন হলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা স্বপন সাহা। তিন ক্যাপ্টেনের কাঁধে ভর করে তখন এগিয়েছিল কলকাতার সিনেমার জাহাজ। তারা হলেন স্বপন সাহা, অঞ্জন চৌধুরী ও প্রভাত রায়। এ ত্রয়ীর মধ্যে ব্যতিক্রম নির্মাণ দিয়ে এগিয়ে ছিলেন স্বপন সাহা।

তিনিই গড়ে তুলেছিলেন প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণার জুটি। ‘অবুঝ মন’, ‘ভাই আমার ভাই’, ‘বাবা কেন চাকর’, ‘সুজন সখী’, ‘আদরের বোন’, ‘মায়ের বাঁধন’, ‘নয়নের আলো’, ‘সবুজ সাথী’, ‘ফাটাকেষ্ট’, ‘জোর’ ইত্যাদি সুপারহিট ছবি দিয়ে তিনি কলকাতার সিনেমা শিল্পকে চাঙ্গা করে তুলেছিলেন। আজকের সফল ইন্ডাস্ট্রির ভিত্তি মজবুত করে দিয়েছিলেন। ওপার বাংলার চলচ্চিত্রে ‘লক্ষ্মী নারায়ণ’সম এ নির্মাতা মূলত বাংলাদেশ থেকেই সেখানে পাড়ি জমিয়েছিলেন।

তার হাতেখড়ি হয়েছিল বাংলাদেশি সিনেমাতেই। এখানেও তিনি বেশ কিছু সুপারহিট ছবি নির্মাণ করেছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘অবিশ্বাস’, ‘ভাইভাই’ ইত্যাদি। আশির দশকের মাঝামাঝি সময় তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে সিনেমা নির্মাণে মনোনিবেশ করেন।

আর উপহার দিতে থাকেন একের পর এক হিট ছবি। টানা সিনেমা বানিয়েছেন ২০১৩ সাল পর্যন্ত। স্বপন সাহাকে অনেকে রিমেকের মাস্টারও বলে থাকেন। বাংলাদেশে সুপারহিট হওয়া অনেক ছবি তিনি কলকাতায় রিমেক করেছেন। তার মধ্যে ‘সুজন সখী’, ‘বাবা কেন চাকর’, ‘ভাই আমার ভাই’, অবুঝ মন’, ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’ উল্লেখ্য।

কলকাতায় আজকে তিনটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস, এসকে মুভিজ, টি সরকার প্রোডাকশান’র জয়জয়কার। এ তিনটি প্রতিষ্ঠানই স্বপন সাহাকে দিয়ে ছবি বানিয়ে কোটি কোটি টাকা মুনাফা ঘরে তুলেছে।

আজকে তাদের শক্তিশালী অবস্থানের পেছনেও এ নির্মাতার অবদান অনস্বীকার্য। সেটি তারা নিজেরাও স্বীকার করেন। এক সাক্ষাৎকারে এসকে মুভিজের কর্ণধার অশোক ধনুকা বিনা সংকোচেই বলেছেন, ‘উত্তম কুমার মারা যাওয়ার পর ইন্ডাস্ট্রি ধসে গিয়েছিল।

তখন হাল ধরেছিলেন অঞ্জন চৌধুরী আর স্বপন সাহা। কথিত আছে, সে সময় স্বপন সাহা ৯ দিনে ছবি বানিয়েছেন। ছবির খরচ ৯ লাখ টাকা। কিন্তু ছবি হিট। আজকে বাংলা ছবি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে তার ভিত তৈরি করার ক্ষেত্রে এ মানুষটির অবদান অনস্বীকার্য। বুম্বাদা প্রসেনজিতও বলেছেন, ‘স্বপন সাহা ইন্ডাস্ট্রিকে যা দিয়েছেন তার কোনো তুলনা হবে না। আমি একের পর এক হিট ছবি করেছি তার সঙ্গে।

আজ যে ভেঙ্কটেশকে নিয়ে এত কথা হয়, ওরা স্বপনদার সঙ্গে ‘ভাই আমার ভাই’ বলে একটা ছবি করেছিলেন। সেটা প্রায় ৫০ সপ্তাহ চলেছিল। অনেকেই নাক সিঁটকোন ‘বাবা কেন চাকর’-এর নাম শুনে। কিন্তু আমি বলছি, এ ধরনের ছবি যদি না হতো, তাহলে বাংলা ইন্ডাস্ট্রি আজ এ অবস্থায় পৌঁছত না। আমি তো ইমোশনাল মানুষ। একটা সময় অভিমানে দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছিলাম।

ঠিক করেছিলাম আর ছবি করব না। তখন কিন্তু এ মানুষটিই আবার আমায় টেনে শুটিং ফ্লোরে নিয়ে এসেছেন। তাই আজ যদি স্বপন সাহা আমার কাছে এমন একটি স্ক্রিপ্ট, এমন একটি চরিত্র নিয়ে আসেন, যে চরিত্র আমি করতে পারি, সেখানে আমার না বলার জায়গাই নেই। আমার দায়িত্ব এ মানুষগুলোকে ফিরিয়ে আনা।’ স্বপন সাহাকে নিয়ে এমনই মূল্যায়ন কলকাতার শিল্পের।

কলকাতায় সফল নায়করাজ রাজ্জাক, শাবানা, ববিতা, আলমগীর, চম্পাও। কলকাতায় ‘বাবা কেন চাকর’ ছবি দিয়ে ওপার বাংলার ইন্ডাস্ট্রিতে তুমুল জনপ্রিয়তা পান রাজ্জাক। এরপর তিনি কাজ করেন ‘অন্নদাতা’, ‘জন্মদাতা’ ইত্যাদি ছবিগুলোতে। সেখানেও তিনি দেখিয়েছেন শক্তিমান অভিনেতার প্রতাপ।

ববিতা ছিলেন ঢাকাই সিনেমার প্রথম অভিনেত্রী, যিনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। আর সেই সুযোগ তিনি পেয়েছিলেন ১৯৭৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘অশনি সংকেত’ ছবির মাধ্যমে।

বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একই নামের একটি অসমাপ্ত উপন্যাস অবলম্বনে এ ছবিটি নির্মাণ করেছিলেন প্রখ্যাত নির্মাতা সত্যজিৎ রায়। ছবিটিতে ‘অনঙ্গ বউ’ চরিত্রে অভিনয় করে তিনি কলকাতার দর্শকদের মনে দাগ কেটেছেন।

একই বছরে যৌথ প্রযোজনায় ‘ধীরে বহে মেঘনা’ ছবি দিয়েও সাড়া পান ববিতা। আলমগীর কুমকুম পরিচালিত এ ছবিতে ববিতার সঙ্গে ছিলেন বুলবুল আহমেদসহ আরও অনেকেই। ব্যবসাসফল না হলেও ছবিটি দুই বাংলাতেই প্রশংসিত হয়।

চিত্রনায়ক আলমগীরও বাজিমাত করেছেন কলকাতার ইন্ডাস্ট্রিতে। নব্বই দশকে তিনি কলকাতায় নির্মাণ করেন ‘মায়ের আশীর্বাদ’। এটি বাংলাদেশে মুক্তি পাওয়া ‘মায়ের দোয়া’ সিনেমার রিমেক ছিল। যৌথ প্রযোজনার এ ছবিতে আলমগীরের বিপরীতে ছিলেন কলকাতার দেবশ্রী রায়।

১৯৯৭ সালে শাবানা তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসএস প্রডাকশনের ব্যানারে ভারতের ধানুকা ব্রাদার্সের সঙ্গে যৌথভাবে নির্মাণ করেন ‘স্বামী কেন আসামি’। জসিম-শাবানা, চাঙ্কি পান্ডে ও ঋতুপর্ণা অভিনীত এ সিনেমাটি ব্যবসায়িক সাফল্য পেলে এ দুটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে ‘মেয়েরাও মানুষ’ ও ‘স্বামী ছিনতাই’ নামে দুটি সিনেমা।

কলকাতার ইন্ডাস্ট্রিতে সফল হয়েছেন বাংলাদেশের মহানায়িকা শাবানাও। একই সময় ঢাকাই অভিনেত্রী নূতন ওপার বাংলার প্রসেনজিতের সঙ্গে মিলে নির্মাণ করেন ‘আমি সেই মেয়ে’। এ ছবিটিও দুই বাংলায় তুমুল ব্যবসা করে। রোজিনা কলকাতার দর্শক মাতিয়েছিলেন ‘অবিচার’ ছবি দিয়ে।

সৈয়দ হাসান ইমাম ও শক্তি সামন্ত যৌথভাবে প্রযোজনা করেন মিঠুন-রোজিনা-উৎপলের ‘অবিচার’ ছবিটি। এটি পরিচালনা করেছিলেন শক্তি সামন্ত। ছবিটি দিয়ে কলকাতার দর্শকদের মনে দাগ কেটেছিলেন রোজিনা।

ওই সময় কলকাতায় আলোচিত ছিলেন চম্পা ও রাইসুল ইসলাম আসাদও। তারা জুটি বেঁধে কলকাতায় বাজিমাত করেছিলেন গৌতম ঘোষের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ ছবি দিয়ে। এরপর আসাদকে দেখা গিয়েছিল ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ ছবিতেও।

আর চম্পা অভিনয় করেছিলেন গৌতম ঘোষের ‘আবার অরণ্যে’ এবং ‘মনের মানুষ’ ছবিতে। এ দুটি ছবির মধ্যে ‘আবার অরণ্যে’ ছবিটি চম্পাকে কলকাতার দর্শকদের কাছে আলাদা গ্রহণযোগ্যতা এনে দিয়েছিল।

১৯৭৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ছবি দিয়ে কলকাতায় অভিনয়ের কারিশমা দেখিয়েছিলেন ঢাকাই সিনেমার মিষ্টি মেয়ে কবরী। এটি নির্মাণ করেছিলেন ঋত্বিক ঘটক। এরপর কবরীকে নিয়ে কলকাতার অনেক নির্মাতাই ছবি বানানোর আগ্রহ দেখিয়েছিলেন।

কলকাতার চলচ্চিত্রে সফল বাংলাদেশিদের তালিকায় উজ্জ্বল আরও একটি নাম অঞ্জু ঘোষ। ১৯৯৬ সালের পর থেকেই তিনি কলকাতায় নিয়মিত কাজ করছেন। ঢাকার ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন অঞ্জু।

কলকাতাতেও এ ছবিটি রিমেক করা হয়। সেখানে চিরঞ্জিতের বিপরীতে অভিনয় করেন অঞ্জু ঘোষ। সেখানেও ছবিটি রেকর্ড ব্যবসা করে। এরপর তাকে দেখা গেছে ‘আদরের বোন’সহ কলকাতার প্রায় অর্ধ শতাধিক চলচ্চিত্রে।

তবে কলকাতায় বাংলাদেশি শিল্পী হিসেবে রাজকীয় অভিষেক ঘটেছিল চিত্রনায়ক ফেরদৌসের। বাসু চ্যাটার্জি পরিচালিত ১৯৯৮ সালে মুক্তি পায় ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ ছবিটি। ব্যতিক্রমী এক প্রেমের গল্পে এ ছবি দিয়ে কলকাতার দর্শকের মনে স্থায়ী আসন গড়ে নেন ফেরদৌস। ছবিটিতে তার নায়িকা ছিলেন ভারতের মেয়ে প্রিয়াংকা ত্রিবেদী।

ওই ছবির সাফল্যের পর তাদের নিয়ে নির্মাণ করা হয় ‘চুপি চুপি’। ছবিটি মোটেও ভালো ব্যবসা করেনি। তবে ফেরদৌস টালিগঞ্জে জায়গা করে নিলেন। এরপর তিনি যৌথ প্রযোজনার ‘চুড়িওয়ালা’, ‘শেষ বংশধর’, ‘বর্ষাবাদল’ ছাড়া কলকাতার একক প্রযোজনায় বেশ কিছু সুপারহিট ছবিতে অভিনয় করেন।

কলকাতার সিনেমার বাজারে ভেলকি দেখিয়েছেন চিত্রনায়ক রিয়াজও। যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘মনের মাঝে তুমি’ ছবি দিয়ে তিনি কলকাতায় একটি সুপারহিট ছবি উপহার দেন। তার সঙ্গে ছিলেন এপারের পূর্ণিমা ও কলকাতার যিশু সেনগুপ্ত।

এরপর তাকে নিয়ে দুই বাংলাতে নির্মাণ হয় ‘প্রেম করেছি বেশ করেছি’, ‘নসিমন’ সিনেমাগুলো। প্রথম ছবিটিতে রিয়াজের নায়িকা ছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এবং পরের ছবিটিতে দর্শক মাতিয়েছিলেন রিয়াজ-শাবনূর জুটি।

সর্বশেষ কলকাতার ইন্ডাস্ট্রিতে বাজিমাত করা দুই তারকার নাম শাকিব খান ও জয়া আহসান। ২০১০ সালে ক্যারিয়ারের দারুণ সময়ে কলকাতার ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখেন শাকিব। এ নায়ক অভিনীত এফআই মানিক পরিচালিত ‘সবার উপরে তুমি’ নামে একটি ছবি বাংলাদেশে মুক্তি পায় ১৩ নভেম্বর ২০০৯ সালে। অন্যদিকে এ ছবিটিই ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১০ সালে কলকাতায় মুক্তি পায় ‘আমার ভাই আমার বোন’ নাম নিয়ে।

এটি নির্মিত হয়েছিল যৌথ প্রযোজনায়। বাংলাদেশে তুমুল ব্যবসা করলেও এটি কলকাতায় তেমন সুবিধা করতে পারেনি। কলকাতায় শাকিবের বাজিমাত করা শুরু হয় ২০১৬ সালে ‘শিকারি’ ছবি দিয়ে। এ ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন শ্রাবন্তী।

এরপর গেল বছরের কোরবানি ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘নবাব’ ছবিটিতে শুভশ্রীর বিপরীতে শাকিবকে লুফে নেয় কলকাতার দর্শক। বর্তমানে তিনি সেখানেও সুপারস্টারের খ্যাতি পাচ্ছেন। কলকাতায় তার দর্শকপ্রিয়তার প্রমাণ মেলে, গেল ২০ এপ্রিল সেখানকার ১০২টি সিনেমা হলে তার নতুন ছবি ‘চালবাজ’ মুক্তি পাওয়ায়।

যেখানে ওপার বাংলার জিৎ-সোহম দেব ও অঙ্কুশরা বাণিজ্যিক ছবিগুলো দিয়ে একের পর এক ফ্লপ হচ্ছেন সেখানে এপারের নায়ক শাকিব খান চমক দেখাচ্ছেন ওপারের সিনেমা হলে দর্শক টেনে। শিগগরিই কলকাতায় আরও বেশ কিছু বিগ বাজেটের ছবিতে কাজ করবেন শাকিব। সেসব ছবিতে তার বিপরীতে দেখা যাবে শ্রাবন্তী, শুভশ্রী, নুসরাত জাহান, সায়ন্তিকার মতো হার্টথ্রব নায়িকাদের।

অন্যদিকে জয়া আহসানের গল্প সবটুকুই মুগ্ধতার। কলকাতায় গেল কয়েক বছর ধরেই বাণিজ্যিক ছবির বাজার পড়তি। সেখানে এখন জয়জয়কার চলছে ভিন্ন ধারার সিনেমার। আর সেই সিনেমার বাজারে কলকাতার রানী এখন বাংলাদেশের জয়া আহসান।

একের পর এক হিট এবং আলোচিত সিনেমা উপহার দিয়ে টালিগঞ্জের নির্মাতাদের প্রধান ভরসা হয়ে উঠেছেন তিনি। সেখানকার অভিনেত্রীদের প্রথম এবং শেষ প্রতিদ্বন্দ্বীও তিনি। বিশেষ করে কৌশিক মুখার্জির ‘বিসর্জন’ ছবিটি দিয়ে সমগ্র ভারত মাতিয়েছেন তিনি।

এ ছবিটি জিতে নিয়েছে ভারতের জাতীয় পুরস্কার। বিদেশি শিল্পী হওয়ায় নিজে পুরস্কার না পেলেও পেয়েছেন ভূয়সী প্রশংসা। সেই প্রশংসার তালিকায় আছে রানী মুখার্জি, আনুশকা শর্মা, প্রসেনজিৎ, রঞ্জিত মল্লিক, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়দের মতো মানুষদের নাম।

অরিন্দম শীলের ‘আবর্ত’ দিয়ে ২০১৮ সালে কলকাতা যাত্রা শুরু করেছিলেন জয়া। এরপর ‘একটি বাঙালি ভূতের গপ্পো’, ‘রাজকাহিনি’, ‘ভালোবাসার শহর’, ‘ঈগলের চোখ’, ‘বিসর্জন’ ইত্যাদি ছবির মধ্য দিয়ে টালিগঞ্জেও অবস্থান বেশ পোক্ত করেছেন তিনি।

কলকাতায় পেয়েছেন ‘ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড ইস্ট’ ও ‘সেরা বাঙালি’ পুরস্কার। এখন ঢাকা-কলকাতা করেই দিন কাটছে তার। হাতে আছে ওপারের বেশ কয়টি সিনেমা।