কারাগারে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দি, ‘হিটস্ট্রোকে’ একজনের মৃত্যু
ডেস্ক রিপোর্ট ।। চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে গত আড়াই মাসে জ্যামিতিক হারে দেশের কারাগারগুলোতে বন্দির সংখ্যা বেড়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ সব কারাগারে দুই গুণের বেশি বন্দি রয়েছে। এরপরও বন্দির সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এ অবস্থায় তীব্র তাপদাহ শুরু হওয়ায় কারাগারে বন্দিরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এমনকি হিটস্ট্রোকে এক বন্দির মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেশি বন্দি থাকা কারাগারগুলো থেকে কম বন্দি থাকা কারাগারে বন্দি স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কারাগারে ফ্যানের সংখ্যা বৃদ্ধি ও পানি সরবরাহ ঠিকঠাক রাখার জন্যও বলা হয়েছে অধিদফতর থেকে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি কিছু করার নেই। মাদকের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ চলবে।
দেশের সব কারাগারের ধারণ ক্ষমতা ৩৪ হাজার ৭৯৬ জন। এই মুহূর্তে বন্দি রয়েছে ৮০ হাজার ৮৫ জন। কারা অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, এসব কারাবন্দির ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশই বিভিন্ন মাদক মামলার আসামি ও সাজাপ্রাপ্ত।গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারে অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন ১১ বন্দি। তাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালের নেওয়া হয়।হাসপাতালটির চিকিৎসক ডা. আবুল বাসার জানান, অতিরিক্ত গরমে ১১ জন অসুস্থ বন্দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।১১ বন্দির মধ্যে তাজেমুল নামে একজনের অবস্থা তুলনামূলক খারাপ থাকায় তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বাকিরা সুস্থ হওয়ার পর শুক্রবার (২০ জুলাই) তাদের কারাগারে ফেরত নেওয়া হয়েছে।চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগারের ধারণ ক্ষমতা ২৭৫ জন বন্দির। অথচ সেখানে রয়েছে এক হাজার ২৪৩ জন। অর্থাৎ ধারণ ক্ষমতার ছয় গুণ বেশি বন্দি রয়েছে এই কারাগারে।এ বিষয়ে জানতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগারের জেলারের মুঠোফোনে ফোন দেওয়া হলে একজন কারারক্ষী ধরেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অসুস্থদের কারাগারে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কারাগারে অতিরিক্ত ফ্যান আনা হয়েছে।’দেশের প্রায় প্রতিটি কারাগারের চিত্রই কমবেশি এমন। আগেও ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দেশের কারাগারগুলোতে বন্দি বেশি ছিল। তবে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান শুরু হওয়ার পর এ সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। তাই সংকটও বাড়ছে। দেশের সীমান্তবর্তী জেলা ও বিভাগীয় শহরের কারাগারগুলোতে বন্দির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
কারা অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, সারা দেশের কারাগারগুলোতে শুক্রবার ৮০ হাজারের বেশি বন্দি ছিল, যা ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ।ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারেরও রয়েছে ধারণ ক্ষমতার দেড় গুণ বেশি বন্দি। সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে দুই হাজার ১০০ বন্দি রয়েছে। এই কারাগারে বন্দির ধারণ ক্ষমতা দেড় হাজার।’
কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে বন্দি পাঠানো হচ্ছে ময়মনসিংহ কারাগারে। কিশোরগঞ্জ কারাগারে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ছয় গুণ বন্দি রয়েছে। পুরাতন এই কারাগারে ২৪৫ জন বন্দির ধারণ ক্ষমতা থাকলেও সেখানে আছে এক হাজার ২৫০ জন। বৃহস্পতিবার এই কারগারে একজন বন্দি মারা গেছেন।জেলার বাহারুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওই বন্দি একটি হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। তিনি যক্ষ্ম রোগে ভুগছিলেন। তিনি মারা গেছেন। আমরা তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলাম।’তবে অভিযোগ রয়েছে তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে ওই বন্দির মৃত্যু হয়। এই কারাগার থেকে বন্দিদের ময়মনসিংহ কারাগারে সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার ৮০ জন বন্দিকে ময়মনসিংহ কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শনিবার আরও ১০০ জন বন্ধিকে সেখানে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন জেলার বাহারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কারাগারটি অনেক পুরাতন। ধারণ ক্ষমতা খুবই কম। আমরা ময়মনসিংহে কিছু বন্দি শিফট করছি।’পিরোজপুরেও একই চিত্রের কথা শোনা গেছে। সেখানেও গরমে বন্দিদের হাঁসফাঁস অবস্থা। ওই কারাগারেও দুই শতাধিক বন্দি রাখা যায়। তবে বন্দির সংখ্যা বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ।
কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারেও বন্দিদের সংখ্যা বাড়ছে। ধারণ ক্ষমতা পাঁচ হাজার হলেও শুক্রবার সেখানে বন্দি ছিল ১০ হাজার ২৩১ জন। তবে জেলার মাহবুব রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের এই কারাগারে তেমন সমস্যা হচ্ছে না। বর্তমানে চাপ কিছুটা কমছে। মাদক অভিযানের প্রথমদিকে প্রতিদিন শতাধিক নতুন আসামি আসতো। তবে এখন কমছে।’গত মে থেকে মাদকের বিরুদ্ধে সারা দেশে একযোগে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই মধ্যে দুই শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী র্যা ব ও পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। সারা দেশে প্রতিদিনই গ্রেফতার হচ্ছে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবী। তাদের পাঠানো হচ্ছে কারাগারে। গত আড়াই মাসে ২০ হাজারের বেশি মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবী গ্রেফতার হয়েছে। এতে চাপ পড়ছে দেশের কারাগারগুলোতে।মাদকের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ চলবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। শুক্রবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের একটি মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করতে গিয়ে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণার পর থেকেই এ ফিগারটা (বন্দির সংখ্যা) বাড়ছে। মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীরা আটক হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত সাজা দিচ্ছেন। তাদের কারাগারে রাখতে হচ্ছে।”তিনি বলেন, “মাদক এমনই এক সর্বনাশা নেশা যাতে আমাদের যুবসমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমাদের মেধা শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা দিয়েছেন। তার ঘোষণা ও নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের এই অভিযান চলছে। আমাদের এই অভিযান চলবে।’
ই-বার্তা ।। ডেস্ক