জরুরি সেবা ৯৯৯ প্রথমদিনে দুই হাজার ৭৮৬টি মিসড কল
ই-বার্তা ।। ৯৯৯: প্রথম দিন সেবা নিলেন ৩৩ জন, কল সাড়ে ২২ হাজার!!! মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টা ৩৯ মিনিট। পুলিশের কল সেন্টারের ইমার্জেন্সি নম্বর ৯৯৯-এ গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে এক নারী ফোন করেন। তিনি জানান, তার প্রতিবন্ধী বোনকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। কল সেন্টার থেকে দ্রুত জয়দেবপুর থানায় বিষয়টি জানানো হয়। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে এই ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করে জয়দেবপুর থানা পুলিশ। এ বিষয়ে থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
পুলিশের জাতীয় জরুরি সেবা সার্ভিস নম্বর ‘৯৯৯’ চালু হওয়ার পর প্রথম দিনের সেবা গ্রহণের চিত্র এটি। এরপর প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ওই নম্বরে ২২ হাজার ৫০২টি কল আসে। তবে সেবা নিয়েছেন মাত্র ৩৩ জন।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় রাজধানীর আব্দুল গণি রোডে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ‘৯৯৯’ এর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি পুলিশি সেবা দিতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কল সেন্টারের কর্মকর্তারা জানান, মঙ্গলবার থেকে বুধবার দুপুর ২টা ৪২ মিনিট পর্যন্ত ৩৫ হাজার ৬০৪টি কল পেয়েছেন তারা। এর মধ্যে প্রথম দিন (১২ ডিসেম্বর) আসে ২২ হাজার ৫০২টি কল। দ্বিতীয় দিন বুধবার দুপুর ২টা ৪২ মিনিট পর্যন্ত ১৩ হাজার ১০২টি। প্রথম দিন সেবা নিয়েছেন ৩৩ জন। দ্বিতীয় দিন বেলা পৌনে তিনটা পর্যন্ত সেবা নিয়েছেন ২৩ জন।
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, কর্মীরা (কল টেকার) ব্যস্ত সময় পার করছেন। একের পর এক কল আসছে, তা রিসিভ করে কথা বলছেন তারা। বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলছেন মানুষজন। তাদের পরামর্শ দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা।
কল সেন্টারে কর্তব্যরত পুলিশ সুপার (এসপি) তবারক উল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা গত ২৬ অক্টোবর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে কাজ শুরু করেছি। মঙ্গলবার এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর হাজার হাজার নাগরিক ফোন দিচ্ছেন। তবে বর্তমানে উৎসুক মানুষ ফোন দিয়ে এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করছেন। অনেকেই ৯৯৯ এ কল দিয়ে ইনকামিং পরীক্ষা করেন। আবার কেটে দেন। তবে অসংখ্য মানুষ সেবাও নিচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘গত ১২ ডিসেম্বর উদ্বোধনের পর ২৪ ঘণ্টায় ২২ হাজার ৫০২টি কল এসেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির কল রয়েছে। সেবা নিয়েছেন ৩৩ জন। বাকিরা বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলেছেন।’
কল সেন্টারে কলগুলোকে ৯টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো ব্ল্যাংক কল, চাইল্ড কল, ক্র্যাংক কল, ডিপার্টমেন্টাল কল, ইনকোয়ারি কল, মিসড কল, আদার কল, উইমেন কল ও সিএফএস কল। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, যারা ফোন দিয়ে কোনও কথা বলে না, তাদের ব্ল্যাংক কলের তালিকায় রাখা হয়। প্রথমদিনে ১২ হাজার ৫০৫টি ব্ল্যাংক কল ছিল।
কল সেন্টারে শিশুদের কল
প্রথমদিন ৭৭টি শিশুর কল ছিলো। তবে তাদের কেউই কোনও সেবার কথা বলেনি। কেউ কেউ কল দিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল–আপনারা কী সেবা দেন? সেবার বিষয় জেনে একজন বলেছিল, অ্যাম্বুলেন্স পাঠান, আমি খেলবো।
ক্র্যাংক কল বা বিরক্তিকর কল
কল সেন্টারে অনেকেই ফোন দিয়ে অযাচিত কথাবার্তা বলেন। ব্যক্তিগত আলাপচারিতাও করতে চায় কেউ কেউ। তবে তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে বুঝিয়ে বলা হয়, এখানে কেবল তিনটি বিষয়ে জরুরি সেবা দেওয়া হয়। তারপরও অনেকেই অহেতুক কল দিয়ে বিরক্ত করে। প্রথমদিন দুই হাজার ৯০৬টি ‘বিরক্তিকর কল’ রিসিভ করেছেন কল সেন্টারের কর্মীরা।
এসপি তবারক উল্লাহ বলেন, ‘যারা বিরক্তিকর কল দেন, তাদের সবার তথ্যই সংরক্ষিত থাকে। আমরা প্রথমে তাদের বুঝিয়ে বলি। এরপরও না শুনলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের নম্বর ব্লক করে দেওয়া হয়, যাতে এখানে ফোন দিতে না পারে।’ কল সেন্টারে কর্মরত একজন কল টেকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিরক্তিকর কলই বেশি। অনেকেই ফোন করে আলাপ জুড়ে দেন। আমরা তাদের স্যার সম্বোধন করে বুঝিয়ে বলি, যাতে তারা শুধু জরুরি তিনটি সেবা পেতে ফোন করেন।’
পুলিশ সদস্যরাও সেবা চান ৯৯৯ নম্বরে
পুলিশ বিভাগের সদস্যরাও ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে সেবা চেয়ে থাকেন। এই কলকে ডিপার্টমেন্টাল কল বলা হয়। তারা সাধারণত ডিপার্টমেন্টের তথ্যই জানতে চান। কল সেন্টারের কর্মীরা জানান, মঙ্গলবার ২০টি ডিপার্টমেন্টাল কল এসেছিল।
ইনকোয়ারি কল
বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চেয়ে আসা কলগুলোকে বলা হয় ইনকোয়ারি কল। প্রথমদিনের মোট কলের মধ্যে এই কলের সংখ্যা ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। মঙ্গলবার তিন হাজার ৭৪৬টি ইনকোয়ারি কল আসে।
৯৯৯-এ মিসড কল!
মোবাইল ফোনে টাকা না থাকলে ৯৯৯-এ জরুরি সেবা পেতে ফোন করা যাবে। টাকা থাক বা না থাক, ডায়াল করলেই কল যাবে ৯৯৯-এ। তারপরও এক শ্রেণির মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী ৯৯৯-এ মিসড কল দিচ্ছেন। মঙ্গলবার দুই হাজার ৭৮৬টি মিসড কল আসে।
সেবা চেয়ে নারীদের কল
নারীরা কোনও সেবার জন্য বা নারীদের কোনও সমস্যায় যে কেউ ফোন করলে তা উইমেন ক্যাটাগরিতে হিসাব করা হয়। প্রথমদিন ৫৭টি এমন কল ছিল, যারা এই কল সেন্টার থেকে নারীদের বিভিন্ন সমস্যায় সেবা চেয়েছেন।
অন্যান্য কল
এছাড়াও বিভিন্ন তথ্য জানতে চেয়ে, কোনও থানার ওসির নম্বর জানতে চেয়ে যারা কল সেন্টারে ফোন দেন তাদের সংখ্যাও কম নয়। মঙ্গলবার ৩৭২ জন এমন সব তথ্য চেয়ে ৯৯৯-এ ফোন দিয়েছেন।
সিএফএস কল
জরুরি সেবা চাওয়ার পর, প্রথম দিন যাদের সেবা দেওয়া হয়েছে তাদের সংখ্যা ছিল ৩৩টি। এরমধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ড ও ধর্ষণের ঘটনা রয়েছে। তাদের সবাইকে সেবা দেওয়া হয়েছে। এসবি তবারক উল্লাহ বলেন, ‘আমরা একজন বিপদগ্রস্ত মানুষকে পুলিশি, অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের সেবা দিয়ে থাকি। দেশের যেকোনও প্রান্ত থেকে ফোন করে এই সেবা পাবেন। আমরা কেবল একজন ভুক্তোভোগীর কাছে পুলিশ পৌঁছে দেবো। কারণ, ঘটনার সময় তিনি হয়তো নাও বুঝতে পারেন কোথায় যোগাযোগ করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘গাজীপুরের ওই ধর্ষণের ঘটনাটি আমরা জয়দেবপুর থানায় ফোন দেওয়ার পর তারা ব্যবস্থা নিয়েছে। একটি প্রতিবন্ধী মেয়ের বোন ফোন দিয়েছেন গভীর রাতে। তাৎক্ষণিক আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’
এ বিষয়ে জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবন্ধী মেয়েটির বিষয়ে খবর পেয়ে আমরা রাতেই ব্যবস্থা নিয়েছি। মেয়েটির মামাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধেই ধর্ষণের অভিযোগ। একাধিকবার ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। আমরা তাকে গ্রেফতার করেছি। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
রাত-বিরাতে মিথ্যা তথ্য দিয়েও ফোন
মিথ্যা তথ্য দিয়ে ফোন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। মঙ্গলবার দুটি এ ধরনের ফোন ছিল। ঘটনাস্থলে গিয়ে যার কোনও সত্যতা পাওয়া যায়নি। কল সেন্টারের সদস্যরা জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ৩৯ মিনিটে দিনাপজপুরের বিরামপুর থেকে একটি ফোন আসে। কলার জানান, বিরামপুরে তাদের এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এরপর কল সেন্টার থেকে দিনাজপুরের ফায়ার সার্ভিসে যোগাযোগ করে বিরামপুরে অগ্নিনির্বাপণ কর্মীদের গাড়ি নিয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু সেই ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায়, কোনও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। এ ধরনের কল না দিতে নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ।
উদ্বোধনের পর প্রথম কল ছিল অগ্নিকাণ্ডের
কল সেন্টারটি উদ্বোধনের পর প্রথম কল ছিল গাজীপুরের শিবগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। মঙ্গলবার বেলা ১১টা ২ মিনিটে প্রথম কলটি আসে। তখন কল সেন্টারের কল টেকার উপালি রানী ফোনটি রিসিভ করেন। কল সেন্টারে থাকা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীর সঙ্গে কলটি কনফারেন্স করে দেন তিনি। এরপর ১০ মিনিটের মাথায় ঘটনাস্থলে যায় ফায়ার সার্ভিস। ১৭ মিনিটের মাথায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কল সেন্টারে বর্তমানে প্রতি শিফটে ৩৩ জন কর্মী কাজ করেন। এরমধ্যে কল টেকার ২৬ জন। এই সংখ্যা ১০০ জনে উন্নীত করা হবে।