তেহরানে হানিয়া হত্যাকাণ্ড, ইসরায়েলে ভয়-আতঙ্ক

ই-বার্তা ডেস্ক  ।।  তেহরানে হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া ও লেবাননে হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ফাউদ সুকের হত্যার জেরে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে পৌঁছেছে। এরই মধ্যে পাল্টা হামলার হুমকি দিয়েছে ইরান ও লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ।  ছবিঃ সংগৃহীত।

এতে ইসরায়েলে ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে। তেল আবিবে বহু ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন দেশ থেকে ইসরায়েলের বাসিন্দারা তেল আবিবে ফিরতে পারছেন না। পাশাপাশি বহু পর্যটক ইসরায়েল ছাড়তেও পারছেন না।

হানিয়া গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনার অন্যতম মধ্যস্থতাকারী ছিলেন। তাঁর হত্যাকাণ্ড গাজা যুদ্ধের রাজনৈতিক সমাধানকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। আলজাজিরা জানায়, তেহরানে হানিয়া নিহত হওয়ার জেরে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইসরায়েলকে ‘কঠোর শাস্তি’ দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। হানিয়ার মৃত্যুতে শোক জানাতে রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার মানুষ। ইরান যে ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক হামলা চালাবে, সে বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছে দেশটির গণমাধ্যমগুলোও। পাশাপাশি হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা হাসান নাসারুল্লাহ ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘হামলা আসন্ন।’

ইসরায়েলের গণমাধ্যম জানায়, সম্ভাব্য হামলার জেরে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা ‘সর্বোচ্চ সতর্কতা’ অবলম্বন করছে। হামলা ঠেকাতে ইসরায়েল একটি আন্তর্জাতিক জোট গঠনেরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগে গত এপ্রিলে সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে হামলার জেরে ইসরায়েলে বিরল সরাসরি হামলা চালায় ইরান। তখন ইরানের ছোড়া কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সহযোগিতায় ঠেকিয়েছিল ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

তেল আবিবের সড়কগুলোর একটি ভিডিও ফুটেজ মিডল ইস্ট আইয়ে প্রকাশিত হয়েছে। এতে পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষ দ্বৈত মত প্রকাশ করছেন। এক নারী বলেছেন, গত বুধবার হানিয়া হত্যার পর তিনি ‘অনিরাপদ’ বোধ করছেন। আরেক নারী বলেন, হত্যার ঘটনায় লোকজন আনন্দে আছেন। তবে তারা বৃহত্তর যুদ্ধ সম্পর্কেও সচেতন। তেল আবিবভিত্তিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ওরি গোল্ডবার্গ বলেন, ‘নিশ্চিতভাবে লোকজন উদ্বিগ্ন। রাস্তাঘাটে লোকজন একেবারেই কম। সবার মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। তবে এটা গত অক্টোবরের মতো নয়। তখন লোকজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চল দখল করে নিচ্ছে।’

টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, হামলা হতে পারে– এমন শঙ্কার মধ্যে গ্রিস, পোল্যান্ড, ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও হাঙ্গেরির বিমান সংস্থাগুলো তাদের সব ক’টি ফ্লাইট বাতিল করেছে। এর আগে ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ তাদের ফ্লাইট বাতিল করে। চেক রিপাবলিকের প্রাগ বিমানবন্দরে শুক্রবার তৃতীয় দিনের মতো ঘোরাঘুরি করে পার করেছেন ইসরায়েলগামী অন্তত ৪০০ যাত্রী। সব মিলিয়ে অন্তত ১৫টি বিমান সংস্থা ফ্লাইট বাতিল করেছে; এতে আনুমানিক ২০ হাজার ইসরায়েলের বাসিন্দা গন্তব্যে যেতে পারছেন না।

সিবিসি নিউজ জানায়, জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী মিশন সতর্ক করে বলেছে, হিজবুল্লাহর অন্যতম শীর্ষ নেতা ফাউদ সুকের হত্যার জেরে সংগঠনটির জবাব হবে কঠোর। তারা সীমান্ত এলাকা ছাড়াও ইসরায়েলের অনেক ভেতরে সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে।

শনিবার ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড জানিয়েছে, তেহরানে হানিয়াকে ভবনের বাইরে থেকে স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে হত্যা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধী সরকারের সহায়তায় জায়নবাদী শাসকরা এ হামলায় চালিয়েছে। এর জবাবে ইরানের হামলা হবে কঠোর।

পেন্টাগন সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, চলমান উত্তেজনার মধ্যে ইসরায়েলকে সহায়তা করতে মধ্যপ্রাচ্যে আরও রণতরী ও যুদ্ধবিমান মোতায়েন করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এক বিবৃতিতে পেন্টাগন বলেছে, ইসরায়েলের প্রতি তাদের অঙ্গীকার লৌহকঠিন। নতুন রণতরী ও যুদ্ধবিমান মোতায়েনের মাধ্যমে ইসরায়েলের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে এবং অন্য দেশের সম্ভাব্য হামলা ঠেকানো সম্ভব হবে।

নেয়ামত উল্ল্যা/আন্তর্জাতিক ডেস্ক/ ই-বার্তা২৪৭.কম