দলে শুদ্ধি অভিযান চলছেঃ কাদের
ই- বার্তা ডেস্ক।। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলে শুদ্ধি অভিযান চলছে জানিয়ে বলেছেন, ‘মানসিকতায় দুর্নীতিপ্রবণ নেতাকর্মীদের দলের ভেতরে না থাকাই মনে করি যথার্থ।’
আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে সমসাময়িক ইস্যুতে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
কাদের বলেন, ‘আমাদের মতো দেশে ক্ষমতাসীন দলে সবসময় একটা সমস্যা থেকে যায়। কিছু আগাছা-পরগাছা, এসব সুবিধাবাদী স্রোতের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলে অনুপ্রবেশ করে। এরাই বেশিরভাগ সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কাজেই দলের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ থাকার জন্য ক্লিনজিংয়ের প্রয়োজনটা দেখা দেয়।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্রলীগে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। যুবলীগও বলেছে, তারা ট্রাইব্যুনাল গঠন করছে, তাদের নিজেদের যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তাদের শুনানি দেয়ার জন্য। এখানে পরিষ্কার বিষয় হচ্ছে এটি যে, সরকার এবং দলের ইমেজটা ক্লিন হওয়া দরকার। প্রধানমন্ত্রী ক্লিন ইমেজের সারাবিশ্বে প্রশংসিত ও সমাদৃত। কিছু কিছু বিষয় এসে যায় যেগুলো জনগণের কাছে দলের-সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করে।’
‘আমাদের নেত্রীর নির্দেশনা অনুসরণ করে সব পর্যায়ে দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য, সরকারের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ করার জন্য যারা অনিয়ম ও অপকর্ম করে, যারা মানসিকতায় দুর্নীতিপ্রবণ, এই ধরনের নেতাকর্মীদের দলের ভেতরে না থাকাই আমরা মনে করি যথার্থ। দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো- এটাই আসলে আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি।’
কেউ কেউ অপকর্ম করে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে ম্লান করে দিচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘দশটা ভালো কাজ একটা খারাপ আচরণ ম্লান করে দিতে পারে। সেজন্য কিছু কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কিছু অভিযোগ এসেছে। অভিযোগের কারণে কিছু কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যেই অপকর্ম করুক কেউ ছাড় পাবে না। শাস্তি পেতে হবে। সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনিক ব্যবস্থাও নেয়া হবে যেখানে প্রয়োজন।’
‘গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও বলা হয়েছে রিপোর্ট নেয়ার জন্য, কোথাও অপকর্ম হলে যথাযথ ইনফরমেশন দেয়ার জন্য এবং সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে। কাউকে যেন ছাড় না দেয়া হয়, তিনি দলের যেই হোন। যত শক্তিশালীই হোন। ভালো কাজের পুরস্কার থাকবে, খারাপ কাজের তিরস্কার। এটাই খুব স্বাভাবিক, এই নীতিতেই আমরা চলব। সেটাই আমাদের নেত্রীর নির্দেশনা।’
সাংগঠনিক ব্যবস্থা হিসেবে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সরিয়ে দেয়া হলো। তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না- জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘ক্রিমিন্যাল অফেন্স যদি এখানে কিছু থেকে থাকে তাহলে সেটার জন্য…এই পর্যন্ত আমাদের দলের কিংবা সরকারের কাউকে কিন্তু ছাড় দেয়া হয়নি। দুর্নীতি দমন কমিশনে আমাদের অনেক এমপি ও মন্ত্রীও হাজিরা দিচ্ছেন। কারো কারো চার্জশিট হয়ে গেছে, অনেকে জেলে রয়েছে। কারো কারো কনভিকশনও হয়ে গেছে।’
যুবলীগের চাঁদাবাজির বিষয়টি অনেক আগেই পত্র-পত্রিকায় এসেছে। আগে কেন এ বিষয়ে উদ্যোগে নেয়া হয়নি। সবকিছুতে কেন প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তারা হয়তো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তাও তো হতে পারে। রোলিং পার্টিতে নানা রকমের লেম্যান থাকে। প্রধানমন্ত্রী একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করে পদ দেখিয়ে দিয়েছেন। এখানে প্রত্যেকে আপন ঘরে শুদ্ধি অভিযান চালাতে পারে, সেটা তো খুবই ভালো।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রতিদিন ‘দুর্নীতি’, ‘দুর্নীতি’ বলে তারস্বরে চিৎকার করছেন। আমি শুধু একটুকু বলতে চাই, এই সরকারের আমলে হাওয়া ভবনের যে লুটপাট দুর্নীতি সেটা হয়নি। দুর্নীতিতে পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন একটা দল। আজকে তাদের নেতারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে যখন কথা বলে বিষয়টি হাস্যকর। হাসব কী কাঁদব, ভেবে পাই না। বিএনপি কী তাদের নিকট অতীতের দুর্নীতি-লুটপাটের ইতিহাস ভুলে গেছে?
তিনি বলেন, আয়নায় নিজের চেহারাটা ভালো করে দেখে অন্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনুন। আপনি আচরি ধর্ম, পরকে শেখাও- আমি তার (বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) প্রতি এই অনুরোধই করব।