দল মত নির্বিশেষে ত্রাণ দেওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
ই-বার্তা ডেস্ক ।। দলীয় কর্মী বা ভোটার বিবেচনা না করে ত্রাণ পাওয়ার যোগ্য সব সাধারণ মানুষের নামের তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘কে দলের আর কে নয়, কে ভোট দিলো আর কে দিলো না, সেটা দেখে নয়, ত্রাণ বিতরণে প্রকৃত সাধারণ মানুষের নামের তালিকা তৈরি করতে হবে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বলবো তালিকা তৈরিতে প্রশাসনকে সহায়তা করুন। কোনও দুস্থ ও সাধারণ মানুষ যেন বাদ না পড়ে। সরকারি ত্রাণ সহায়তা যেন সঠিক লোকদের হাতে যায় সেটা দেখতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় নেতাদের এই নির্দেশনা দেন। তিনি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় স্বাস্থ্য অধিদফতরও ভিডিও কনফারেন্সের সঙ্গে যুক্ত ছিল।
ত্রাণ বিতরণে আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের যারা আছেন তাদের বলবো একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত কমিটি করে দিতে হবে। আমার ভোটার আমাকে ভোট দেয়, তার নাম যাবে−সেটা নয়, সাধারণ জনগণ, দুস্থ মানুষ যারা এখন অসুবিধায় আছে, তাদের নামের তালিকা করতে হবে। এ বিষয়টি আমি সুনির্দিষ্টভাবে বলতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কাজ করে জনগণের জন্য। কে কোন দল করে, কে আমার পক্ষে আর কে নয়, কে আমার ভোটার আর কে ভোটার না, এটা দেখার দরকার নেই। যার অবস্থা খারাপ, যে দুস্থ, ঘরে খাবার নাই, তাকে খাবার পৌঁছে দিতে হবে। আমি চাই আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটা নেতাকর্মী সেই মানসিকতা নিয়ে কাজ করবে। সেইভাবে তালিকা করবে। আজকের এই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সবাইকে এই মেসেজটা পৌঁছাতে চাই। এলাকায় কমিটি করার জন্য ইতোমধ্যে আমাদের নির্দেশনা চলে গেছে। এই কমিটি হবে প্রশাসনকে সহায়তার জন্য। যাতে করে সঠিক নামটা আসে। না হলে অনেক সময় দেখা যায় নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাদের কয়েকজন বাছাই করা লোকদের বা তাদের ভোটারদের নাম দেয়। বাকিরা বাদ পড়ে। এইবার যেন না পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এটার ব্যাপারে নজর রাখবেন। আমরা চাই একটি মানুষও যেন না খেয়ে কষ্ট না পায়। আল্লাহর রহমতে আমাদের প্রচুর খাবার আছে। আবার ধান কাটার সময় হয়ে গেছে। আলু উঠছে। ওষুধ-পত্র কোনও কিছুর অভাব নেই। অভাব থাকবে না। আমরা সেই ব্যবস্থা করবো।’
কেন্দ্রীয় অফিস থেকে নির্দেশনা পাঠানোর বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নির্দেশনা ইতোমধ্যে চলে গেছে। ওয়ার্ড পর্যায়ে পর্যন্ত আমাদের আওয়ামী লীগের কমিটি রয়েছে। ত্রাণ বিতরণের জন্য আমাদের এই ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত আলাদা আলাদা কমিটি করতে হবে। প্রশাসন পুলিশ তালিকা করবে, এই তালিকাতে আপনাদের সহযোগিতা করতে হবে। যাতে করে কেউ বাদ না যায়।’
তিনি বলেন, ‘দল-মত নির্বিশেষে মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখে তালিকা তৈরি করতে হবে। প্রকৃত দুস্থদের কেউ যেন বাদ না যায়, তা দেখতে হবে। কেউ বাদ পড়লে প্রশাসনের পক্ষে যে কমিটি করা আছে, তাদের নিশ্চিত করে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। দল থেকে আমরা সহযোগিতা করার চেষ্টা তো করছি। সরকারিভাবে যে সহায়তা করা হচ্ছে, তা যেন সঠিক লোকদের হাতে যায়।’
তিনি বলেন, ‘যারা হাত পেতে খেতে পারে না, তাদের জন্য আমরা ১০ টাকা চালের রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করবো। সেখানেও যাতে সঠিক নামের তালিকাটা যায়, তা দেখতে হবে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যারা আছে তাদের বলবো কে ভোট দিলো কে দিলো না সেটা নয়, জনগণ হিসেবে দেখে নামের তালিকা করবেন। আজ আমার সঙ্গে যে সব জেলা সম্পৃক্ত আছেন সবাই এটি শুনবেন, ধারণ করবেন এবং সেইভাবে কাজ করবেন। এটা আমার পার্টির প্রত্যেকটি নেতাকর্মীর প্রতি আমার নির্দেশ। প্রশাসনকে বলবো, আপনারা সম্পৃক্ত করে নেবেন যাতে সঠিক লোকদের চিনতে পারেন। কারণ সবাইকে আপনাদের পক্ষে চেনা সম্ভব নয়। স্থানীয়রা চেনেন ও জানেন।’