পঁচা মুরগির পাহাড়! মিলল ৫০ রেস্তোরাঁর নাম
ই-বার্তা । । ভাগাড়ের পচা মাংস বিক্রির কারবারের আন্তর্জাতিক যোগসূত্র পাওয়া গেল। নেপাল, বাংলাদেশেও নাকি এই মাংস পাঠানো হত! এ রাজ্যের অনেকেই এই কারবারে যুক্ত। মূলমাথারা রয়েছে ভিন রাজ্যে। বিদেশি কয়েকটি খাবার প্রস্তুতকারক সংস্থাতেও নাকি এই মাংস পাঠানো হত।
ফুড চেন রেস্তোরাঁ যেগুলি রয়েছে, তার কয়েকটিতেও যেত এ ধরনের মাংস। গোটা ঘটনায় উদ্বিগ্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। স্বরাষ্ট্র দপ্তর সমস্ত থানাকে সতর্ক করেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কল্যাণী–গয়েশপুর পুরসভার প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলর মানিক মুখার্জিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ খবর দিয়েছে ভারতীয় একটি গণমাধ্যম।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বজবজে ভাগাড়চক্রের তদন্তে বৃহস্পতিবার থেকে পুলিশের ৪টি দল উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে। কাঁকিনাড়া, সোদপুর, টিটাগড়, জগদ্দল প্রভৃতি জায়গার কিছু লোকজনও এই চক্রান্তে জড়িত। এই ঘটনায় প্রথম ধাপে গ্রেপ্তার হওয়া ৫ অভিযুক্তের বয়ানের ভিত্তিতেই মানিক মুখার্জির নাম উঠে আসে। গোলাম মহম্মদ ওরফে লাম্বা, সানি মালিক, মহম্মদ ফিরোজ, ইয়ং চাই হাসিও, সারাফত হোসেনের কাজকর্ম কী ছিল তা জানতে পেরেছে পুলিশ। সারাফত পশুর মাংস কেটে টুকরো করতে ওস্তাদ। মৃত পশু পড়ার খবর পেলেই সারাফত সেখানে চলে যেত। সানি মালিক দল পরিচালনা করত। ইনফর্মার ছড়িয়ে রাখত এবং বিভিন্ন জায়গায় মাংস পৌঁছে দেওয়ার কাজ করত। এই চক্রে ৫০টি রেস্তোরাঁর নাম পাওয়া গেছে।
বড় চক্রের সন্ধান...
শুক্রবার এয়ারপোর্ট ও নিউ টাউন থানার পুলিশের যৌথ অভিযানে পচা মাংসের কাজ–কারবারের বড় চক্র ধরা হল। ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। এদিন এয়ারপোর্ট আড়াই নম্বর গেটে পুলিন অ্যাভিনিউতে ওয়াইএফসি নামে একটি ফাস্ট ফুডের দোকানে জনৈক মহম্মদ নাসিরুদ্দিন গাজি স্কুটারে এসে পৌঁছয়। দোকানে মুরগির মাংসের নানা পদ তৈরি হয়। সে ৫টি ব্যাগে ২৫ কেজি মাংস নিয়ে এসেছিল। এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা মাংসের পচা গন্ধ পান। এয়ারপোর্ট থানায় খবর দেন। পুলিশ আসে, আসেন দমদম পুরসভার উপপুরপ্রধান বরুণ নট্ট। পুলিশ জানায়, দোকানটি ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই চলছে। পুলিশ দোকানের মালিক জনার্দন সিংকে আটক করে। মাংসের প্যাকেট বাজেয়াপ্ত করে।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পরে মহম্মদ নাসিরুদ্দিন গাজি এবং জনার্দন সিংকে জেরা করে সিটি সেন্টার ২–এর লাগোয়া ঢালি চিকেন সেন্টার নামে একটি দোকানে পুলিশ পৌঁছয়। এখান থেকেই মুরগির মাংস ওয়াইএফসিতে যেত। এঁদো গলির ভেতর টিনের শেড দিয়ে দোকান। দোকানের ভিতরে বেশ জাঁকিয়েই ব্যবসা চলছে। কম্পিউটার বসিয়ে হিসেবপত্র রাখা চলছে। সেখানে গিয়ে পুলিশ ৫টি ফ্রিজার পায়। ফ্রিজারের ভিতরে ৪০০ কেজির মতো কাটা মুরগির মাংস ছিল। এ ছাড়াও প্রায় ৪৫০ কেজি জ্যান্ত মুরগিও ছিল। তদন্তে পুলিশ দেখে, বহুদিনের পুরনো জীর্ণ হয়ে যাওয়া প্লাসটিকে জড়ানো মুরগির মাংস রয়েছে। কিছু কিছু মাংসের গায়ে পোকাও ধরে গেছে!
এই নিয়ে হইচই শুরু হয়। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা আসেন। নমুনা সংগ্রহ করেন। এই খবরে দক্ষিণ দমদম পুরসভার ফুড ইনস্পেক্টরও ঘটনাস্থলে আসেন। তবে তিনি জানান, মাংসগুলি খাবার যোগ্য না বাতিল, তা পরীক্ষা করার পরিকাঠামোই নেই। বিধাননগর পুরনিগমের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপিতা আজিজুল হোসেন মোল্লা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে স্থানীয় মানুষ মাংস নিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছিলেন। সন্দেহ হচ্ছিল। জানা গেছে, বাইপাসের ধারে বেশ কিছু রেস্তোরাঁয় এ ধরনের মাংস যেত। তার তালিকা পেয়েছে পুলিস। এয়ারপোর্ট থানায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৭২/৭৩ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। যে জায়গায় ওই পোলট্রি ফার্মের ব্যবসা চলছিল, তা হিডকোর জমি। বেআইনিভাবে ওই জমিতে ব্যবসা চলছিল।
বিধাননগর কমিশনারেটের উপনগরপাল (সদর) অমিত জাভালগি জানান, আমরা কয়েকটি বিষয় দেখছি। মাংস মরা মুরগির কি না, কোনও রাসায়নিক মিশিয়ে রাখা হয়েছিল কি না। তদন্তে দেখা হবে মুরগি ছাড়া অন্য কোনও পশুপাখির মাংস মিশিয়ে বিক্রি করা হচ্ছিল কি না।
প্রাক্তন কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
পচা মাংস তদন্তে পুলিশ প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলর মানিক মুখার্জিকে কল্যাণী এ ব্লকে ১১ নম্বরে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। ২০০০–’০৫ সালে গয়েশপুর পুরসভার কাউন্সিলর ছিলেন। কাজ করতেন কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন খাদি দপ্তরে। অবসর নিয়েছেন। রাজনীতির সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই। মানিক মুখার্জি গ্রেপ্তার হয়েছেন খবরে হইচই শুরু হয়ে যায়। তাঁর বাড়ির দরজা বন্ধ ছিল। মানিকবাবুর অফিসে গেলে অফিসের দায়িত্বে থাকা স্বপ্না দাস নন্দী এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি।