পর্দার অন্তরালে সেই ভয়ঙ্কর রমণীরা!
ই-বার্তা ।। পর্দার আড়ালে লুকিয়েছেন সিলেটের আলোচিত সুন্দরীরা। মনোরঞ্জন, ইয়াবা ব্যবসা কমিয়ে দিয়েছেন তারা। সিন্ডিকেট সদস্যরাও চলে গেছে আড়ালে। পুলিশি অভিযানের মুখে এখন নিজেরা নিজেদের গা বাঁচাতে এমন পথ ধরেছেন তারা। তবে পুলিশের জালে আটকা পড়েছেন কেউ কেউ। সিলেটের তানিয়া ওরফে তান্নির সন্ধানে তাদের চোখে চোখে রাখা হচ্ছে।
থানায় এসে হাজিরা দিতে হচ্ছে তাদের। সিলেটের মিরাবাজারে রোকেয়া বেগম ও তার ছেলে রূপম খুনের ঘটনার পর পুলিশ তান্নির খুঁজে হন্যে হয়ে ফিরছে। ইতিমধ্যে পুলিশ অন্তত ১৫টি স্থানে অভিযান চালিয়েছে। তবে পুলিশের ধারণা-তান্নি সিলেটেই রয়েছে।
রোকেয়া বেগম ও তার পুত্রের লাশের সন্ধানের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তান্নি সরব ছিল। একই সঙ্গে সরব ছিল রিমান্ডে থাকা নাজমুল। লাশ উদ্ধারের খবর রটার পরপরই তান্নি ও নাজমুল গা ঢাকা দেয়। পুলিশ নাজমুলকে গ্রেপ্তার করতে পারলেও তান্নির খোঁজ পায়নি।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে- তান্নির খোঁজে গতকাল পর্যন্ত তারা বেশ কয়েকজন আলোচিত নারীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে নগরীর নয়াসড়ক এলাকার দিলারা বেগম, সিলেটি নাটকপাড়ার পরিচিত মুখ সাম্মি ওরফে সাম্মা, মদিনা মার্কেট এলাকার শিপা বেগম ও টিলাগড় এলাকার তানিয়া নামের এক রমণী। এরা নিজেদের বাসাকে তৈরি করেছেন নিরাপদ সেক্স কোয়ার্টার হিসেবে। পাশাপাশি তারা ইয়াবা নেটওয়ার্কের চালানের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে।
নয়াসড়ক এলাকা দিলারা বেগমের সঙ্গে এক সময় ভালো সম্পর্ক ছিল তান্নির। দিলারার আস্তানায় অসামাজিক কার্যকলাপ ছাড়াও ইয়াবার চালান আসে। একটি তিনতলা বাসার পুরোটাই দিলারা ভাড়া নিয়ে সামাজিক কর্মকাণ্ডের আড়ালে এসব কাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছিলেন। তান্নি যখন দিলারার সঙ্গ ছেড়ে রোকেয়ার সঙ্গ ধরে তখন দিলারা তান্নির উপর ক্ষুব্ধ হলেও সেটি প্রকাশ করেননি।
পুলিশের কাছে তান্নির সঙ্গে পরিচয় থাকার কথা দিলারা স্বীকার করলেও বর্তমানে কোথায় সেটি জানা যায়নি। তবে- তান্নির শেল্টারদাতা রাজনৈতিক কর্মী নামধারী মিনারা বেগম পুলিশের ডাকে গতকাল পর্যন্ত সাড়া দেয়নি। পুলিশ মিনারার কাছে তান্নি সম্পর্কে তথ্য জানতে চাইলে ইসলামপুর এলাকায় বসবাসকারী মিনারা নিজেই গা ঢাকা দিয়েছে। এখন মিনারাও চলে গেছে অন্তরালে। মিনারাকে কেন্দ্র করে নগরীতে একটি ইয়াবা সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। ওই সিন্ডিকেটে আরো কয়েকজন তরুণী ও মহিলা রয়েছে। তারা আড়াল দিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সূত্র।
সিলেটের খুনি তানিয়া ওরফে তান্নির খোঁজে পুলিশ ঘটনার পরপরই নগরীর টিলাগড় এলাকার শাপলাবাগ থেকে আরেক তানিয়াকে আটক করেছিল। ওই তানিয়ার শেল্টারদাতা হলেন নার্গিস নামের এক মহিলা। পুলিশ তানিয়াকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তার কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পরে ওই তানিয়া ইয়াবা নেটওয়ার্ক ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছে বলে পুলিশ সূত্র দাবি করেছে। এই তানিয়াকে বিভিন্ন সময় রাজনীতির মাঠে মহিলা সংগঠনের ব্যানারে মিছিলেও দেখা যায়। শিপা নামের আরেক তরুণীকে আটক করেছিল পুলিশ। নাজমুল আটকের দিন শিপা কোতোয়ালি থানাতেই ছিল। পুলিশ তান্নির খোঁজে শিপাকেও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ চালায়। কিন্তু শিপার কাছ থেকে পুলিশ তান্নি সম্পর্কে তেমন তথ্য মিলেনি।
তবে পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় সময় তান্নি ও শিপা সড়ক পথে পরিচিত পুরুষদের নিয়ে ভারত ভ্রমণ করেছে বলে তাদের কাছে তথ্য এসেছে। কয়েক মাস আগেও তান্নি ভারত ভ্রমণ করে এসেছে। একই সময় শিপা ভারতে গিয়েছি কী না- সে সম্পর্কে পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি। শিপাও তান্নির মতো বেশ মর্ডান স্টাইলে চলাফেরা করে। সাম্মি ওরফে সাম্মা নামের এক তরুণীকেও পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ খ ছিল। বেপরোয়া স্বভাবের সাম্মার সঙ্গে খুনের ঘটনায় সম্পৃক্ত তান্নির যোগাযোগ ছিল বলে জানায় পুলিশ। এ কারণে সাম্মাকে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরবর্তীতে তাকে ছেড়ে দেয়া হলেও এখন নজরদারিতে রয়েছে।
সাম্মা নগরীর জিন্দাবাজার এলাকার ছাত্রদলের এক গ্রুপের কয়েক যুবকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। এক সময় তাকে জিন্দাবাজার দেখা গেলেও বর্তমানে সাম্মা নগরীর শিবগঞ্জ এলাকায় বসবাস করে। ইয়াবা নেটওয়ার্কে সম্পৃক্ত সাম্মা ওই এলাকার একটি ফ্ল্যাটে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। বেশ কয়েকজন পুরুষের সঙ্গে গেল কয়েক বছরে তার হাতবদল হয়েছে। কারও কারও সঙ্গে বিয়ে হয়েছে বলে শোনা গেলে এর সত্যতা মিলেনি।
তান্নির রহস্যময় চলাফেরা: সিলেটে মা ও ছেলে খুনের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত তান্নির চলাফেরা ছিল রহস্যময়। তান্নি কখনো কাউকে সঙ্গে নিয়ে চলতো না। একা একা পথচলা সে পছন্দ করতো। নিহত রোকেয়ার বাসায় তান্নি একা যেতো। আর বের হতোও একা। তবে বোরকা দিয়ে তার মুখ থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে রাখতো। এ কারণে স্থানীয় এলাকাবাসী কিংবা দোকানি কখনোই তান্নির মুখ দেখেননি। তান্নির মুখ কেবল দেখেছেন কাঞ্চা সুমন ও তার সহযোগীরা।
যখন তান্নি তার অপরাধ নেটওয়ার্কের পার্টনার রোকেয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন তখন সে নিজ থেকে ঢেকে আনেন সুমনসহ কয়েকজন যুবককে। তারাও নিয়মিত যাতায়াত করতেন। তান্নি নির্ধারিত সিএনজি অটোরিকশা কিংবা কার মাইক্রোবাস নিয়ে চলাফেরা করতো। এয়ারপোর্ট এলাকায় তার এক পরিচিত সিএনজি চালক রয়েছে। তাকে নিয়ে সব সময় ঘোরাফেরা করতো তান্নি। ওই সিএনজি চালকের সন্ধানও ইতিমধ্যে পেয়েছে পুলিশ।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল ওয়াহাব জানিয়েছেন- মিরাবাজারের ও মেয়ে খুনের ঘটনায় পুলিশি রিমান্ডে থাকা নাজমুলকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। তার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এর বাইরে পুলিশ তানিয়া ওরফে তান্নিকেও খুঁজছে বলে জানান তিনি। সূত্র: মানবজমিন