পুতিনের সঙ্গে বৈঠক সফল বললেন কিম
ই-বার্তা।। দুই মাস আগেই হ্যানয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক ভেস্তে যায় মাঝপথেই। তবে এবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে বলে দাবি করেছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন।
বৃহস্পতিবার রাশিয়ার একেবারে পূর্ব প্রান্তের বন্দর শহর ভ্লাদিভস্তকে পৌঁছেন কিম। সেখানে রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বেশ খানিক ক্ষণ আলোচনা করে কিম বলেন, ‘বৈঠক সফল’।
পুরনো বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে পুতিনও বৈঠক শেষে জানান, উত্তর কোরিয়া যদি সম্পূর্ণভাবে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের রাস্তায় হাঁটে তা হলে আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশকেও উত্তর কোরিয়ার পাশে দাঁড়াতে হবে। উত্তর কোরিয়ার উপর থেকে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা তোলার জন্য প্রচ্ছনভাবে আমেরিকাকে বার্তা দেন পুতিন।
উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার সুসম্পর্ক আজকের নয়। বেজিংয়ের মতোই মস্কোও পিয়ংইয়্যাংয়ের দীর্ঘদিনের বন্ধু। কিন্তু মাঝের বেশ কয়েকটা বছর আমেরিকার সঙ্গে প্রবল দ্বন্দ্ব চলাকালীন চীনের উপরে একটু বেশিই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল উত্তর কোরিয়া। মস্কোর সঙ্গে বৈঠক অনেক দিন ধরেই ঝুলে ছিল। গত বছর থেকে কিম এবং ট্রাম্পের মধ্যে সম্পর্ক একটু শোধরানোয় আমেরিকার সঙ্গেই দু’দফা আলোচনা করেন কিম। আমেরিকার একের পর এক নিষেধাজ্ঞার ফলে এমনিতেই উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি ধুঁকছে। হ্যানয়ের বৈঠক ভেস্তে যাওয়ায় ফের রাশিয়ার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছিল পিয়ংইয়্যাং। চীন ছাড়া রাশিয়ার মতো শক্তিশালী দেশও যে তাদের পাশে রয়েছে তা প্রমাণ করতে এখন কার্যত মরিয়া কিম।
অন্যদিকে, পুতিনও কোরীয় উপদ্বীপ নিয়ে কিমের সঙ্গে আলোচনার জন্য ব্যগ্র হয়ে উঠেছিলেন বলে দাবি করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম। কারণ বিশ্বের অন্য শক্তিধর দেশগুলোর মতো ওই উপদ্বীপে নজর রয়েছে রুশ প্রেসিডেন্টেরও। তার দেশও যে ওই এলাকায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, সেটা পুতিনও গোটা বিশ্ব, বিশেষত আমেরিকাকে দেখাতে চান বলে দাবি করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম। একই সঙ্গে আমেরিকা ও চীনের মতো উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি নিয়েও চিন্তিত মস্কো। সব মিলিয়ে এই বৈঠক দু’দেশের কাছেই খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে মনে করছেন অনেকে।
ভ্লাদিভস্তক পৌঁছনোর পরপরই কিমকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। পরে নিরাপত্তায় মোড়া এক গাড়িতে করে তাকে হোটেলে পাঠানো হয়। আজ শুক্রবার সকালে দু’দেশের প্রধান মুখোমুখি বসেন। পুতিন জানান- তিনিও কোরীয় উপদ্বীপে সম্পূর্ণ পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চান। তবে তার বক্তব্য, আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান করেই এ পথে এগোনো উচিত।
রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ আজ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের স্পষ্টই বলেছেন, ‘‘ছয় দেশের স্থগিত আলোচনা ফের শুরু হওয়া দরকার।’
২০০৩ সালে দুই কোরিয়া, চীন, জাপান, রাশিয়া আর আমেরিকার মধ্যে কোরীয় উপদ্বীপ আর দুই কোরিয়ার শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা পর্ব শুরু হয়েছিল বটে। কিন্তু সেটাও মাঝপথে থমকে রয়েছে বহু বছর। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী এখন সেই আলোচনাই নতুন করে শুরু করতে চাইছে। কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি ফেরাতে এই ছয়টি দেশের একসঙ্গে কথা বলা একান্ত জরুরি বলে মনে করছে মস্কো।
সুত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা