ফেলনা পোস্টার দিয়ে সুবিধাবঞ্চিতদের খাতা, ঠোঙা
মাত্রই শেষ হওয়া ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পোস্টারগুলো এখনও শহরের অলিগলিতে রয়ে গেছে। ভোটের পর এসব পোস্টার জঞ্জাল হিসেবেই দেখা হয়। কেউ দায়িত্ব নিয়ে সরাতে চায় না।
এবার ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটির ফেলনা পোস্টারগুলো দিয়ে একটি মহান কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছেন একদল স্বেচ্ছাসেবী।
তারা নির্বাচনের পোস্টারগুলো এক এক করে সংগ্রহ করছেন। এতে তৈরি হবে এতিম শিশুদের লেখার খাতা। পোস্টারে ব্যবহৃত প্লাস্টিক কাজে লাগানো হবে শীতের কাপড় ও প্যাকেট তৈরির কাজে। আর দড়ি ব্যবহার হবে চাল-ডাল প্যাকেজিংয়ের কাজে।
এই মানবিক উদ্যোগটি নিয়েছে অলাভজনক সংস্থা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। সংস্থাটির কর্মীরা গত রোববার সকাল থেকেই পোস্টার সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে।
নগরীর অলিগলিতে সড়কে দাঁড়িয়ে থেকে পোস্টারগুলো সংগ্রহ করছে পরম মমতা নিয়ে।
তারা জানান, যেসব পোস্টারের শুধু একপাশে লেখা, অন্য পাশ সাদা, সেগুলো দিয়ে বানানো হবে এতিম ও অসচ্ছল শিশুদের জন্য লেখার খাতা। দড়ি দিয়ে চাল ডালের বস্তা প্যাকেজিং করা হবে।
এবার স্বেচ্ছাসেবকদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা। ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, কাউন্সিলররা নিজেরাই তাদের কাছে পোস্টার তুলে দিচ্ছেন।
আগারগাঁও, মিরপুর, শ্যামলীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রার্থীরা নিজ থেকে যোগাযোগ করছেন। তারা পোস্টারগুলো নিয়ে আসতে স্বেচ্ছাসেবকদের অনুরোধ করছেন। নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী বা যে প্রার্থীরা নির্বাচনের আগে সেভাবে পোস্টারগুলো ব্যবহার করতে পারেননি, তারাও ফোন দিচ্ছেন। বলছেন, বাসায় জমে থাকা পোস্টারগুলো নিয়ে যেতে।
স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, কোটি কোটি টাকার নির্বাচনী পোস্টার নির্বাচন শেষে মূল্যহীন উপাদান। কবে সরানো হবে এসব পোস্টার, তার অপেক্ষায় না থেকে এগুলো কাজে লাগাচ্ছেন তারা। তাই তারা পোস্টারগুলো সংগ্রহ করছেন। বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করার কাজে লেগে পড়েছেন।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের একজন স্বেচ্ছাসেবক জানান, যেসব পোস্টার লেমিনেটিং করা ছিল, সেগুলোও তারা সংগ্রহ করছেন। লেমিনেটিংয়ের প্লাস্টিক খুলে তা বিভিন্ন অঞ্চলে শীতের কাপড় প্যাকেট করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। পোস্টারের সঙ্গে লাগানো দড়ি ব্যবহার হবে চাল-ডাল প্যাকেট করতে।
জানা গেছে, এ পর্যন্ত দুই লাখ নির্বাচনী পোস্টার সংগ্রহ করেছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। এগুলো দিয়ে শিশুদের জন্য খাতা বানানো হচ্ছে।
সুলতানা জান্নাত নামে এক স্বেচ্ছাসেবক জানান, দুই সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ এসব পোস্টার সংগ্রহ করে আবর্জনা হিসেবে হয়ত পুড়িয়ে ফেলত। ফাউন্ডেশন সেসব পোস্টার না পুড়িয়ে ফাউন্ডেশনকে দিয়ে দিতে অনুরোধ জানিয়েছে। এখন তারা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন।