বাংলাদেশের বড় হার, তিন দিনেই টেস্ট শেষ
ই- বার্তা ডেস্ক।। ভারতের বিপক্ষে দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে তিন দিন শেষ হওয়ার আগেই ইনিংস ও ১৩০ রানের বড় ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ভারতের দেওয়া ৩৪৩ রানের লিডে খেলতে নেমে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় ২১৩ রানে। সর্বোচ্চ ৬৪ রান করেন মুশফিক। ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ চার উইকেট নেন মোহাম্মদ শামী।
দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল ভারত। ২২ নভেম্বর কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে শুরু সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। যেখানে গোলাপি বলে দিবা-রাত্রির ম্যাচে লড়বে দুই দল।
শনিবার টেস্টের তৃতীয় দিনে ছিল ইনিংস হার বাঁচানোর লড়াই। একইসঙ্গে প্রথম ইনিংসে দেড়শ রানে অলআউট যে ছিল নিছকই অঘটন সেটা বুঝিয়ে দেওয়ার মঞ্চও। কিন্তু কোথাও মিলল না তার আভাস। লেখা হলো ফের একই গল্প। ভারতীয় পেস তোপে সকালেই এলোমেলো ব্যাটিং লাইন আপ!
অবশ্য শুধুই বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের এক তরফা দোষ দিয়ে লাভ নেই। ভারতীয় পেসাররা আগের মতোই ছিলেন দুর্দান্ত। ইন্দোরের উইকেটে তার সুইং আর বাউন্সারে ফুটে উঠেছে টাইগার ব্যাটসম্যানদের দৈন্যের চিত্র। স্কিলের ঘাটতিও যে চোখে পড়ার মতো!
সকালে শিশির ভেজা উইকেটের কথা মাথায় রেখে আর নামেননি ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠান বিরাট কোহলি। ইন্দোরে ১ম ইনিংস ভারত ঘোষণা করে ৬ উইকেটে ৪৯৩ রানে। ৩৪৩ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে অতিথিরা।
ইন্দোরের হোলকার স্টেডিয়ামের শিশির ভেজা সকালের উইকেটে দারুণ ছন্দে ছিলেন ভারতীয় পেসাররা। সকালের প্রথম এক ঘন্টা না যেতেই বিদায় নেন দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস ও সাদমান ইসলাম।
ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে ভারত পেয়ে যায় তাদের প্রথম উইকেট। উমেশ যাদবের সুইংয়ে কাবু ইমরুল। জায়গায় দাঁড়িয়ে ড্রাইভ করার মাশুল তো গুনতেই হয়। লেগ স্টাম্প উড়ে যায় এই ওপেনারের। প্রথম ইনিংসের মতো এবারও দলে ফেরা এই ব্যাটসম্যান তুললেন মাত্র ৬ রান। খেলেন ১৩ বল।
তারপর আরেক ওপেনার সাদমান ইসলামকে সাজঘরের পথ দেখিয়ে দেন ইশান্ত। তার লেংথ বলে বোকা বনে যান সাদমান। উড়ে যায় তার স্টাম্প। বিদায়ের আগে করেন ২৪ বলে ৬।
প্রথম ইনিংসে কিছুটা সময় লড়েছিলেন তিনি। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে দলকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারলেন না মুমিনুল হক। তার বিপক্ষে রিভিউতে হাসিমুখ ভারতের। মোহাম্মদ শামির অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা বলে শাফল করতে গিয়ে হলো না। বল লাগল প্যাডে। এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে যদিও সাড়া দেননি আম্পায়ার রড টাকার। তারপর রিভিউতে আউট। হোলকার স্টেডিয়ামের গ্যালারি আরও একবার গর্জে উঠে। ৭ রানে আউট মুমিনুল।
মুমিনুলের পর মোহাম্মদ মিঠুনও কিছুই করতে পারলেন না। প্রতিপক্ষের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের জবাব দিতে হলে মাথা ঠাণ্ডা রেখে খেলা চাই। কিন্তু শামির শর্ট বলে মিঠুন পুল করতে চেয়ে ব্যর্থ। ব্যাটের এক পাশে লেগে বল চলে যায় শর্ট মিড উইকেটে ডাবল সেঞ্চুরিয়ান মায়াঙ্ক আগারওয়ালের হাতে। ২৬ বলে ১৮ রান করে আউট মিঠুন।
এমন বিপর্যয়ে হাল ধরেছিলেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মনে হচ্ছিল তাদের ব্যাটে বুঝি অন্তত সম্মান বাঁচবে। এরমধ্যে রোহিত শর্মা স্লিপে ক্যাচ ফেলে দিলে প্রাণে বাঁচেন মুশফিক। তখন তার রান ৪। তবে মাহমুদউল্লাহকে আগের ইনিংসের মতোই নড়বড়ে দেখাল। লাঞ্চের পরই তাকে ফেরান শামি। তার সুইং বলটি ছেড়ে দিলেই পারতেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু ব্যাট পেতে দিলেন তিনি। সঙ্গত কারণেই ব্যাটের কানায় লেগে বল স্লিপে রোহিত শর্মার হাতে। তিনি ফেরেন ৩৫ বলে ১৫ রানে। ৭২ রানেই ৫ উইকেট শেষ বাংলাদেশের।
তারপর অবশ্য কিছুটা সময় লড়লেন লিটন-মুশফিক। এই জুটিতে ভালোই এগিয়ে যাচ্ছিল দল। কিন্তু বড্ড বেশি তাড়াহুড়ো ছিল লিটনের। তিনিও উইকেট দিয়ে আসলেন। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে উড়িয়ে খেলতে গিয়েই ভুল হলো। ফিরতি ক্যাচ নিয়ে লিটনকে দেখালেন সাজঘরের পথ। ৩৯ বলে ৩৫ করে তুলে ফিরেন তিনি। আর ভাঙে মুশফিকের সঙ্গে তার ৬৩ রানের জুটি।
উইকেট পতনের মিছিলে যা একটু লড়লেন মুশফিকুর রহিম। লিটনের পর মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গেও তিনি গড়েন ৫৯ রানের জুটি। এরমধ্যে মিরাজ ফেরেন ৩৮ রান তুলে। আর ১০১ বলে মুশি ছুঁয়ে ফেলেন ফিফটি। ভারতের বিপক্ষে বরাবরই সফল তিনি। সব মিলিয়ে ৫ টেস্টে তৃতীয়বার ফিফটি করলেন। কিন্তু দলকে বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে পারেননি। ১৫০ বলে ৬৪ রান করে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের শিকার মুশি।
এর আগে ভারতকে রান পাহাড়ে নিয়ে যান মায়াঙ্ক আগারওয়াল। তিনি তুলে নেন তার তৃতীয় সেঞ্চুরি। এরমধ্যে তিনটি শতক পেয়েছে তার সবশেষ ৫ ইনিংসে! মেহেদি মিরাজকে ছক্কা হাঁকিয়ে তুলে নেন টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। ৩২ রানে প্রাণ পেয়ে সুযোগটা কাজে লাগালেন তিনি। ফেরেন ২৪৩ রানে। ৩৩০ বলের ইনিংসে ছিল ২৮ চার ও ৮ ছক্কা।
মায়াঙ্কের ডাবল সেঞ্চুরি আর ইশান্ত, যাদব ও শামিমের আগুন ঝরা বোলিংয়েই পুড়ল বাংলাদেশ। শামি ২য় ইনিংসে নিয়েছেন ৪ উইকেট। যাদব ২টি ও অশ্বিন নিয়েছেন ৩ উইকেট।