‘ব্রাঞ্জেলিনার মতো পাওয়ার কাপলকেও ছাড়িয়ে যাবে প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেল
ডিসেম্বরের প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে শত শত মানুষ হাজির হয়েছেন ইংল্যান্ডের শহর নটিংহ্যামে। প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কলের বাগদানের পর এটিই তাদের প্রথম কোনো রাজকীয় অনুষ্ঠান। আর এ অনুষ্ঠানটি দেখতে সারা বিশ্বের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
দিনটি ছিল ১ ডিসেম্বর- বিশ্ব এইডস দিবস। তার মায়ের পথ অনুসরণ করে প্রিন্স হ্যারি দীর্ঘদিন ধরে এইচআইভি-এইডস বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। তার জন্য ওই দিনটি একটি সুবর্ণ সুযোগ বয়ে এনেছিল।
ওইদিন যারা প্রিন্স হ্যারি আর মেগান মার্কেলের সঙ্গে প্রথম দেখা করেছিলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন লিজি জর্ডান। তিনি নিজে একজন এইচআইভি পজেটিভ এবং এমন একটি সেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, যেখানে তরুণরা এ বিষয়ে তাদের মতামত রাখতে পারে। তিনি বলছিলেন, তাদের ব্যাপারে মিডিয়ার যে আগ্রহ রয়েছে, এই কাজে সেটিকে কীভাবে ব্যবহার করা যায় তারা এ সম্পর্কেও ভালোভাবেই জানেন।
‘এরা একেবারেই অসাধারণ। এই বিষয়ে তারা অনেক কিছু জানেন,’ তিনি বলছিলেন, ‘এইচআইভি-এইডসকে ঘিরে মানুষের মধ্যে যে বৈষম্য এবং যে সামাজিক অনুশাসন রয়েছে, সে সম্পর্কে মানুষকে তারা আরও সজাগ করতে পারেন।’
তিনি নিজে যা কিছু বিশ্বাস করেন তার প্রচারের জন্য শক্তি এবং সময় ব্যয় করার ব্যাপারটা প্রিন্স হ্যারির জন্য নতুন কিছু নয়। তার বয়স যখন ১৯, তখন লেখাপড়া বন্ধ রেখে তিনি কিছু সময় কাটিয়েছিলেন আফ্রিকার দেশ লেসুটুতে।
সেখানে এইডস মহামারীতে অনাথ হয়ে যাওয়া শিশুদের অবস্থা দেখে তিনি এতটাই বিচলিত হয়ে পড়েন যে এর পর তিনি একটি নতুন সেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এর নাম সেন্টাবেল। এর পর থেকে তিনি বারে বারে লেসুটুতে গেছেন এবং এই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রকল্পে জড়িত হয়েছেন।
সেন্টাবেলের প্রধান নির্বাহী ক্যাথি ফ্যরিয়ার বলছেন, আন্তর্জাতিক ক্যাম্পেইনার হিসেবে প্রিন্স হ্যারি খুবই কার্যকর এক ব্যক্তিত্ব।
‘তার একটি বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে, যার মধ্য দিয়ে তিনি অল্পবয়সীদের সঙ্গে খুব সহজেই মিশতে পারেন। এটা তার ব্যক্তিত্বের অংশ। তাই তিনি যখন কোনো আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে বক্তব্য রাখেন, তখন তিনি যেসব কথাবার্তা বলেন, সেগুলোর প্রায় পুরোটাই আসে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে।’
একজন খ্যতিমান অভিনেতা মেগান মার্কেলও তার ভাবমূর্তিকে ব্যবহার করে নানা বিষয়কে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। ২০১৬ সালে সেবা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ভিশনের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি রুয়ান্ডা সফর করেন। জাতিসংঘের নারীবিষয়ক দূত হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।
গত বছর তিনি মুম্বাই গিয়ে মাইনা মহিলা ফাউন্ডেশনের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। এই রাজকীয় দম্পতি বিয়ের উপহার হিসেবে পাওয়া অর্থ যে সাতটি প্রতিষ্ঠানে দান করবেন বলে ঘোষণা করেছেন, তার মধ্যে মাইনা মাহিলা একটি।
এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সোহানি জালোটা বলছেন, এই ঘোষণায় তারা অবাক হয়ে যান, ‘আমরা অবাক হয়েছি। তবে আমরা খুশি হয়েছি যে কোনোভাবে আমাদের সাহায্য করার জন্য তিনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি তা পালন করেছেন। আমার মনে হয় আমাদের প্রতি সমর্থন জানানোর এটিই হচ্ছে সবচেয়ে ভালো পন্থা।’
বিয়ের পর তার ভাসুর ও তার জা ক্যামব্রিজের ডিউক এবং ডাচেসের পর মেগান মার্কেল হবেন রাজকীয় ফাউন্ডেশনের চতুর্থ পৃষ্ঠপোষক। মানসিক স্বাস্থ্য, সাইবার বুলিং এবং পরিবেশ সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে এ ফাউন্ডেশন ইতিমধ্যে মনোযোগ দিয়েছে। ফাউন্ডেশনের বোর্ডে মেগানের যোগদানের পর নতুন বিষয় যুক্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে বোর্ডের এক সভায় মেগান মার্কেল বলেন, ‘আপনারা প্রায়ই এটি শুনে থাকবেন, তা হল- আমরা নারীদের আওয়াজ প্রকাশে সহায়তা করছি। কিন্তু আমি এর সঙ্গে মোটেই একমত নই। নারীদের আওয়াজ তাদের কণ্ঠেই রয়েছে। আমাদের শুধু তাদের সেই আওয়াজ প্রকাশের শক্তি বাড়াতে সহায়তা করতে হবে। এবং মানুষকে সেই আওয়াজ শুনতে উৎসাহিত করতে হবে।’
ক্যমিলা টমিনি হলেন ব্রিটিশ পত্রিকা দা সানডে এক্সপ্রেসের রাজকীয় খবর বিভাগের সম্পাদক। তিনি মনে করেন, ‘প্রিন্স হ্যারি বরাবরই খুব কার্যকর এক কণ্ঠ। উদাহরণ হিসেবে আমি শুধু ইনভিকটাস গেমসের কথাই তুলে ধরব এবং বলব দেখুন- এ থেকে কতখানি সাফল্য তিনি অর্জন করেছেন। এখন তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন মেগান মার্কেল, যার সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর ক্ষমতা সম্ভবত রাজপরিবারের অন্য সদস্যদের চেয়েও বেশি। এদের যৌথ শক্তি ব্র্যাড ও অ্যাঞ্জেলিনার মতো ‘পাওয়ার কাপলকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আমার বিশ্বাস।’
প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলকে ঘিরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের যে প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়েছে, বিয়ের পর তাতে ভাটা পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
কিন্তু দম্পতি হিসেবে তাদের ভাবমূর্তি এমনই যে আন্তর্জাতিক আন্দোলনের ধারায় তারা তখনও শক্তিশালী কণ্ঠ হিসেবে বিবেচিত হতে থাকবে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা।