যোধপুর ভ্রমণ সালমান খানের
ই-বার্তা ডেস্ক ।। বলা হয় শখের তোলা আশি টাকা। সত্যিই তাই। শখ পূরণে মানুষ কিনা করে! প্রতিটি মানুষেরই শখ রয়েছে। সেই শখের কারণে অনেক কিছুই করে থাকে মানুষ।
সেটা হোক রাস্তার ভিখিরি কিংবা বড় কোনো সেলিব্রেটি। এই শখের একটা কাজ করেছিলেন বলিউডের ভাইজানখ্যাত অভিনেতা সালমান খান। ছবি আঁকা, সাঁতার কাটা ও নিয়মিত ব্যায়ামাগারে যাওয়ার পাশাপাশি সালমানের রয়েছে শিকারের শখ। আর সেই খেসারতই দিতে হল তাকে।
২০ বছর আগে বিরল প্রজাতির কৃষ্ণসার হরিণ শিকার করে ফেঁসে যান সালমান। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেই মামলায় গত ৫ এপ্রিল আদালত কর্তৃক তার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়। কিন্তু ২০ বছর আগে ঠিক কী করেছিলেন সালমান? যার জন্য এত বছর পরও তাকে মামলা নিয়ে লড়তে হচ্ছে!
সময়টা ১৯৯৮ সাল। পরিচালক সুরাজ ভাটিয়া ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ ছবির শুটিং করতে দলবল নিয়ে হাজির হন যোধপুরে। সেই দলে ছিলেন সালমান, সাইফ আলী খান, টাবু, সোনালী বেন্দ্রে, নিলম ও ছবির কলাকুশলীরা।
শুটিংয়ের এক ফাঁকে যোধপুরের কঙ্কানি গ্রামে শিকারের উদ্দেশ্যে বের হন সালমান, সাইফ, টাবু, সোনালী, নিলমসহ অনেকে। সেখানে কৃষ্ণসার নামে বিরল প্রজাতির হরিণ দেখতে পান তারা।
সে সময় দুশ্মন্ত সিং নামে এক স্থানীয় ব্যক্তির সহায়তায় হরিণের ওপর গুলি চালান সালমান। যোধপুরের বিষ্ণু সম্প্রদায়ের কাছে কৃষ্ণসার হরিণ বেশ শ্রদ্ধাতুল্য। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তারা এই হরিণকে শ্রদ্ধা করেন।
তাই হরিণ শিকারের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তারা। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে মামলা হয় সালমানদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ ওঠে, ১৯৯৮ সালের ১ ও ২ অক্টোবর দুটি কৃষ্ণসার হরিণ শিকার করেন সালমান ও তার সহযোগীরা।
ওই ঘটনা এতটাই তীব্র আকার ধারণ করে যে, বেশ কিছুদিন আগে বিষ্ণু সম্প্রদায়ের লরেন্স নামে এক গ্যাংস্টার সালমানকে হত্যার হুমকিও দেন।
মামলার প্রক্রিয়া
ভারতের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের সেকশন ৯-এর ৫১ ধারায় মামলা করা হয় সালমানের বিরুদ্ধে। আর বাকি তারকাদের বিরুদ্ধে ৫২ ধারায় মামলা হয়। ২০০৬ সালের ১০ এপ্রিল এই মামলায় বিচারাধীন আদালতে সালমানকে তোলা হয়। সেখানে তাকে ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সে সময় এক সপ্তাহ কারাগারে থাকেন সালমান। এরপর রাজস্থানের উচ্চ আদালত সালমানের রায় খারিজ করে দেন। ফলে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। কিন্তু দেশ ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার ক্ষেত্রে তার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এরপর যাবতীয় মামলা থেকে মুক্তি দেয়া হয় সালমানকে।
নভেম্বর ১১, ২০১৬ সাল। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে সালমানকে নোটিশ দেয়া হয়। সালমানকে ছেড়ে দেয়ার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা করে রাজস্থান সরকার। এই মর্মেই সালমানকে নোটিশ দেন সুপ্রিম কোর্ট। ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সাল। সালমানের আইনজীবী জানান তার মক্কেল নির্দোষ। যদিও সেই মর্মে তিনি প্রমাণ পেশ করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি জানান, সব প্রমাণ ইতিমধ্যে আদালতের সামনেই আছে। তখনই পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয় ৫ এপ্রিল।
এরপর ৫ এপ্রিল, ২০১৮-তে এসে সালমানের আইনজীবী উপযুক্ত সাক্ষী প্রমাণ উত্থাপন করতে না পারায়, আদালত সালমানকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন। সঙ্গে ১০ হাজার রুপি জরিমানাও করেন। কৃষ্ণসার হরিণ শিকারের ঘটনায় সালমান ফেঁসে গেলেও বাকি তারকারা অব্যাহতি পান। কিন্তু কেন শুধু সালমানকে শাস্তি দেয়া হল? জানা যায়, আদালত সালমানকে ‘হ্যাবিচুয়াল অফেন্ডার’ বা স্বভাবগত অপরাধী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। আর শুধু সন্দেহের বশে বাকি তারকাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে আদালতে প্রমাণিত হয়। তাই সাইফ আলী খান, সোনালী বেন্দ্রে, টাবু ও নিলামদের বেকসুর খালাস দেন আদালত। এদিকে মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে বলেন, ১৯৯৮ সালে ঘটনার দিন বাকি অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সালমানের সঙ্গী থাকলেও তারা কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা করেননি। করেছেন সালমান। এ সম্পর্কিত বিভিন্ন সাক্ষী প্রমাণও হাজির করেন সালমানের বিপক্ষের আইনজীবীরা।
সবশেষে ভাইজানের জামিন
অবশেষে দু’দিন কারাভোগের পর আদালত থেকে জামিন পেলেন বলিউড সুপারস্টার সালমান খান। সালমান খানের জামিন শুনানিতে বাদী-বিবাদী উভয়পক্ষের বাদানুবাদ শোনেন সেশন জজ রবীন্দ্র কুমার যোশী।
দুপুরের পর রায় প্রদান করেন সেশন জজ। তিনি সালমান খানের জামিন মঞ্জুর করেন। রায়ের সময় আদালতে সালমানের আইনজীবীসহ উপস্থিত ছিলেন তার দুই বোন আলভিরা ও অর্পিতা খান শর্মা।
তাদের আদালতে নিয়ে আসেন সালমানের দেহরক্ষী শেরা। সালমানের আইনজীবী ভারতীয় গণমাধ্যমে বলেন, আমরা বিচারিক আদালত কর্তৃক প্রদত্ত রায়কে চ্যালেঞ্জ করিনি। আমরা শুধু জামিন চেয়েছি।
ই-বার্তা/ডেস্ক