রিজভী বলেছেন, জনজীবনকে দুর্বিষহ করতেই সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করছে
ই-বার্তা ডেস্ক ।। জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতেই সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
রিজভী বলেন, আগামী মার্চে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম আবারও বৃদ্ধি করবে সরকার। গণবিরোধী সরকার জবাবদিহিতার ধার-ধারে না। এই অবৈধ সরকারের পক্ষে কোনো গণরায় নেই। গত ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচন জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় জনগণের ওপর প্রতিশোধ নিতেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানো হচ্ছে। দখলদার সরকারের ঐতিহ্যগতভাবেই নিপীড়ক হয়। জনগণকে শত্রুপক্ষভাবে। তাই ক্ষমতা দখলে রেখে একের পর এক জনগণের ওপর অত্যূগ্র মাত্রায় জুলুমের খড়্গ নামিয়ে আনে। জনগণের প্রতি এ ঔদাসীন্য ও তাচ্ছিল্যভাব অক্ষমনীয়।
তিনি বলেন, জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করছে সরকার। এ সিদ্ধান্ত হবে অতীব নিষ্ঠুর। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি হলে এর চেইন রিঅ্যাকশনে জনসাধারণের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। কৃষি শিল্প, কলকারখানা গভীর সংকটে পড়বে। এমনিতেই বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। মানুষ তার প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। এর ওপর এ দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের ওপর চরম আঘাত আনবে। দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিতে বিএনপির কর্মসূচির প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই আসবে। যদি এ রকম সিদ্ধান্তে তারা (সরকার) যায় তা হলে আমরা অবশ্যই কর্মসূচি দেব।
ছাত্রদল ও যুবদলের কমিটি ভেঙে দেওয়ার প্রসঙ্গে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, আমাদের কোনো মন্তব্য প্রকাশ করার করলে আমাদের জিজ্ঞাসা করে করবেন। ছাত্রদল ও যুবদলের কমিটি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে, কোথা থেকে এই অদ্ভুত (নিউজ) করা হলো, সেটা আমরা জানি না। সেখানে আমার নাম (বক্তব্যে) দেওয়া হয়েছে। অথচ আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়নি।
মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বর্তমান দখলদার শাসকগোষ্ঠী বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য অন্তঃপ্রাণ দেখালেও বাস্তবে দেশকে পরিণত করা হচ্ছে ভিনদেশি ভাষা ও সংস্কৃতির পরিচর্যাকেন্দ্র হিসেবে। আত্মনির্ভরশীলতার স্থলে পরনির্ভরশীলতাকে করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় নীতি। এখন ভারত থেকে কচুরমুখীও আমদানি করতে হয়। প্রকাশনা শিল্পকে ধ্বংস করে বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তক পর্যন্ত এখন ছেপে আসে ভারত থেকে। পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত অনেক প্রবন্ধ কবিতায় বানান ভুলে ভর্তি। বাংলাদেশের স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বাংলাভাষার চর্চাকে ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য নানা কায়দায় পার্শ্ববর্তী দেশের রাষ্ট্রভাষার চর্চাকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে নিরন্তরভাবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, নিজেস্ব ভাষা সংস্কৃতির বদলে ব্যাপকভাবে ভিনদেশি ভাষা ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটাতে তাদের গল্প, কবিতা ও কার্টুনের বইয়ের পাশাপাশি সিনেমা ও নাটকের ব্যাপক আমদানি করা হচ্ছে। এ সরকার বাংলাদেশের বাংলাভাষা, সাহিত্য ও শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ অগ্রাহ্য করে পাঠ্যপুস্তকে ভিনদেশি চেতনা ঢোকানো হয়েছে। কোমলমতি শিশুদের মনে জাতীয় ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিকদের দেশাত্মকবোধমূলক যেসব গল্প, কবিতা এবং বরেণ্য জাতীয় নেতৃবৃন্দের জীবনী পাঠ্যপুস্তক থেকে ক্রমান্বয়ে বাদ দেওয়া হয়েছে, দলীয় ও ভিনদেশি সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের প্রভাবে। ইংরেজি ও হিন্দির মিশ্রণে বিকৃত বাংলা ভাষার চর্চায় এবং প্রযুক্তির বিকৃত ব্যবহার ও চর্চার ফলে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মৌলিক ভাষা ও সাংস্কৃতিক চেতনা।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, শিক্ষানীতির কোনো মৌলিক কাঠামো গড়ে তোলা হয়নি। পাশের হার বাড়িয়ে দেওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। শিক্ষার্থী উত্তরপত্রে কিছু লিখুক আর না লিখুক তাকে পাশ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে শিক্ষকদের। বলা হয়েছে ফেল করানো যাবে না। অথচ পড়াশোনা করেই পাশ করতে হয়। শিশুশ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। একেকবার একেক শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করে গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে হ-য-ব-র-ল করা হয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থাকে স্কুলমুখী না করে কোচিং সেন্টার ও গাইড বইমুখী করা হয়েছে। সুতরাং শিক্ষাব্যবস্থায় এহেন অরাজকতায় কখনই বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধি ঘটবে না। একটি মেধাহীন জাতি তৈরি করার জন্য সরকারি ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হচ্ছে।