রোহিঙ্গা গণহত্যা, দ্য হেগের আদালত বাংলাদেশে স্থানান্তরের অনুরোধ
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগের শুনানি নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের পরিবর্তে অন্য কোনো দেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশে আদালত বসিয়ে করার একটি আবেদন পেশ করা হয়েছে।
বিবিসি বাংলা জানায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সব কার্যক্রম সাধারণত চলে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে।
কিন্তু এই প্রথম এ রকম কোনো উদ্যোগ নেয়া হলো, যেখানে ভিকটিম বা নির্যাতিতদের শুনানির জন্য আদালতকেই অন্য কোনো দেশে বসানোর আবেদন জানানো হয়েছে।
এমন সময়ে আইসিসিতে এ রকম একটি আবেদনের কথা জানা গেল, যখন মিয়ানমারের দুজন সৈন্য রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হত্যা এবং ধর্ষণের ঘটনায় সরাসরি অংশ নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন এবং তারা দ্য হেগে গিয়ে পৌঁছেছেন বলে খবর বেরিয়েছে।
মিয়ানমারকে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য যে তদন্ত প্রক্রিয়াধীন, সেখানে এই দুটি ঘটনাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবীরা।
রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের হত্যা-নিপীড়নের অভিযোগের শুনানির জন্য দ্য হেগের বদলে অন্য কোনো দেশে আদালত বসানোর জন্য একটি আবেদন পেশ করা হয় গত মাসে।
আবেদনটি করেন রোহিঙ্গাদের পক্ষে কাজ করছে এমন তিনটি ‘ভিকটিম সাপোর্ট গ্রুপে’র আইনজীবীরা। তারা এমন একটি দেশে এই শুনানির অনুরোধ জানিয়েছেন, যেটি নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের কাছাকাছি কোনো দেশে হবে।
আবেদনে দেশের কথা উল্লেখ না থাকলেও, আইসিসি এই আবেদনের অগ্রগতির যে বিবরণী প্রকাশ করেছে, তাতে এই দেশটি ‘সম্ভবত বাংলাদেশ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আইসিসির তিন নম্বর ‘প্রি ট্রায়াল চেম্বার’ আদালতের রেজিস্ট্রি বিভাগকে আদেশ দিয়েছে, দ্য হেগ থেকে অন্য কোনো দেশ, যেমন বাংলাদেশে আদালতের কার্যক্রম সরিয়ে নেয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে। আগামী ২১ সেপ্টেম্বরের আগেই এই সম্ভাব্যতা যাচাই করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী আহমেদ জিয়াউদ্দীন বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘অন্য দেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের শুনানির জন্য আদালত বসানোর উদ্যোগ খুবই বিরল এক ঘটনা। যেহেতু নির্যাতনের শিকার হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশেই আছেন, তাই এটি বাংলাদেশে হলে শুনানিতে তাদের সাক্ষ্য-প্রমাণ দেয়া সহজ হবে।’
আবেদনকারী আইনজীবীরাও এ রকম যুক্তিই দিয়েছেন। শ্যানন রাজ সিং নামে একজন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী এ নিয়ে একটি ব্লগে লিখেছেন, ‘পাখির মতো উড়ে গেলে দ্য হেগ থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব আনুমানিক ৮ হাজার কি.মি.। সেখানকার শরণার্থী শিবিরে নির্যাতনের শিকার যে রোহিঙ্গারা থাকেন, তাদের জন্য এই দূরত্ব একেবারেই অনতিক্রম্য।’
এই ব্লগে তিনি আরও বলেন, ‘আইসিসির রুল অনুযায়ী, স্বাগতিক দেশের (নেদারল্যান্ডস) বাইরে অন্য কোনো দেশেও এই আদালতের কার্যক্রম চালানোর সুযোগ আছে।’
রোম স্ট্যাটিউটের একটি ধারা উল্লেখ করে তিনি জানান, আন্তর্জাতিক আদালত প্রয়োজন অনুযায়ী কোনো মামলার পুরো বা আংশিক শুনানির জন্য অন্য কোনো স্থানেও বসতে পারে।