রোহিঙ্গা গ্রাম গুঁড়িয়ে দিয়ে সরকারি স্থাপনা বানাচ্ছে মিয়ানমার
ই- বার্তা ডেস্ক।। রাখাইনে রোহিঙ্গা গ্রামগুলো গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে সরকারি স্থাপনা গড়ে তুলেছে মিয়ানমার সরকার।
পুলিশ ব্যারাকসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনার মাধ্যমে এসব এলাকাকে পুরোপুরি সরকারি অবকাঠামোতে রূপান্তর করা হয়েছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
কয়েক দিন আগে বিদেশি সাংবাদিকদের একটি দলকে মিয়ানমার সরকারের ব্যবস্থাপনায় উত্তর রাখাইনের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখানো হয়। তাদের মধ্যে বিবিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেদক জোনাথন হেডও ছিলেন। স্যাটেলাইট চিত্র থেকে পাওয়া ছবিতে তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের অন্তত চারটি গ্রামে নতুন নিরাপত্তা স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে, যেসব জায়গায় এক সময় রোহিঙ্গাদের গ্রাম থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।
রাখাইনে বহিরাগত কাউকে ঢুকার অনুমতি দেয়া হয় না। সাংবাদিকদের ওই দলটিকে ব্যাপক সামরিক প্রহরার মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে। পুলিশের অনুমতি ছাড়া কারো সাক্ষাৎকার বা কোনো ভিডিও করার সুযোগ ছিল না বলে জানান জোনাথন হেড।
বিবিসির ওই প্রতিবেদনে জোনাথন হেড বলেন, রাখাইনের হ্লা পো কং ট্রানজিট ক্যাম্পে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তদের নিয়ে গিয়েছিল । মিয়ানমার সরকারের ভাষ্যমতে সেখানে ২৫ হাজার রোহিঙ্গার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০১৭ সালে সহিংসতার পর দুইটি গুঁড়িয়ে দেওয়া রোহিঙ্গা গ্রাম হও রি তু লার এবং থার জেই কোনে’র পাশে ওই ক্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে কেউ ফিরলে এই ক্যাম্পে তাদের দুই মাস রেখে পরে স্থায়ী আবাসনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা সরকারিভাবে বলা হচ্ছে। প্রায় দুই বছর আগে শেষ হওয়া এই ক্যাম্পের এখন জঘন্য অবস্থা। গণশৌচাগারগুলো ভেঙে পড়েছে।
জোনাথন হেড ওই ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সো সোয়ে অংয়ের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, গ্রাম দুটো কেন তাদের নিশ্চিহ্ন করতে হল। উত্তরে সো সোয়ে অং বলেন, কোনো গ্রাম ধ্বংস করা হয়নি। কিন্তু জনাথন হেড স্যাটেলাইট ইমেজের কথা তুললে মিয়ানমারের ওই কর্মকর্তা বলেন, তিনি মাত্র কিছুদিন হল এই দায়িত্বে এসেছেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না।
অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট নামের একটি প্রতিষ্ঠান রোহিঙ্গা গ্রামের স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করেছে। তারা ধারণা করছে, ২০১৭ সালে ক্ষতিগ্রস্ত কমপক্ষে ৪০ ভাগ রোহিঙ্গা গ্রাম সম্পূর্ণরুপে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘ এটাকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে আখ্যা দিলেও সেনাবাহিনীর ওই বড় আকারের হত্যাকে অস্বীকার করেছে মিয়ানমার।
গত কয়েকদিন আগে ফর্টিফাই রাইটস নামে আন্তর্জাতিক একটি মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছিল, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী অস্ত্রের মুখে রোহিঙ্গাদের ‘বিদেশি’ পরিচয়পত্র নিতে বাধ্য করছে । এর মাধ্যমে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের সে দেশের নাগরিক হওয়ার সুযোগ কেড়ে নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে সংস্থাটি।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু মুসলিমরা দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। তাই বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রায় তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গা আগে থেকেই বাংলাদেশে ছিলেন।