সারাদেশে দিনভর সংঘর্ষে নিহত ৯৫

ই-বার্তা ডেস্ক  ।।  সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রোববার শুরু হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন। অসহযোগের প্রথম দিনে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে সারাদেশে অন্তত ৯৫ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে নরসিংদীতে ৬, ফেনীতে ৮, লক্ষ্মীপুরে ৮, সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ মোট ২২, কিশোরগঞ্জে ৫, রাজধানী ঢাকায় ৯, বগুড়ায় ৫, মুন্সিগঞ্জে ৩, মাগুরায় ৪, ভোলায় ৩, রংপুরে ৪, পাবনায় ৩, সিলেটে ৫, কুমিল্লায় পুলিশ সদস্যসহ ৩, শেরপুরে ২, জয়পুরহাটে ১, হবিগঞ্জে ১, ঢাকার কেরাণীগঞ্জে ১, সাভারে ১ ও বরিশালে ১ জন নিহত হয়েছেন।

লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সংঘর্ষে ৮ নিহত এবং শতাধিক গুলিবিদ্ধসহ দুইশতাধিক আহত হয়েছেন। রোববার লক্ষ্মীপুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় পৌরসভার তমিজ মার্কেটের পাশে সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহউদ্দিন টিপুর এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এমপি নুরুদ্দিন চৌধুরী নয়নের বাসা হামলা ও আগুন দেওয়া হয়। নিহতরা হলেন- মো. কাউসার, আফরান, সাব্বির ও মিজান হোসেন। এছাড়া যুবগীলগের নিহতরা হলেন, হারুন মেম্বার, মো. সুমন, রিয়াজ পাটওয়ারী ও অজ্ঞাত একজন। এই তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. অরূপ পাল।

নরসিংদীর মাধবদীতে আন্দোলনকারীদের দিকে গুলি ছোড়ার পর ধাওয়া দিয়ে আওয়ামী লীগের ছয় নেতাকর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় চারজন আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত হন আরও অনেকে। রোববার দুপুর একটার দিকে মাধবদী বাজার মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন- মাধবদী মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি ও নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই মো. দেলোয়ার হোসেন (৪০), মাধবদী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চরদিগলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন (৩৮), নরসিংদী জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শ্রমিক লীগ নেতা মনিরুজ্জামান ভূইয়া ওরফে নাতি মনির (৪২), মহিষাশুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল জলিল (৪০), কামাল হোসেন (৩৫), মো. সোহেল মিয়া (৩৮)। ছয়জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান।  ছবিঃ সংগৃহীত ।

সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা করে ১৩ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আন্দোলনকারী, বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা থানা ঘেরাও করে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে। রোববার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ সদর দপ্তর এবং রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইডি বিজয় বসাক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হন।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রোববার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা এবং দুইজন শিক্ষার্থী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহত আওয়ামী লীগ নেতার নাম আনোয়ারুল ইসলাম। ষাটোর্ধ্ব এই প্রকৌশলী ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন।

এদিকে দুপুরে রাজধানীর জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁ=র নাম আবদুল্লাহ সিদ্দিকী (২৩)। তিনি রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী। বিকেল পৌনে চারটার দিকে আবদুল্লাহকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।

কারওয়ানবাজার এলাকায় সংঘর্ষে রমিজ উদ্দিন রূপ (২৪) নামের বেসরকারি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। সন্ধ্যা ৬টা ১০মিনিটের দিকে শফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রমিজের বাড়ি রংপুরে। তার বাবার নাম মো. রাহেল। এদিকে সন্ধ্যায় আনুমানিক ২৫ বছরের এক যুবকের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন কয়েকজন। নিহত ওই ব্যক্তির নাম–পরিচয় জানা যায়নি। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

রাত ৮টার দিকে যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকা থেকে জুয়েল (২৮) নামে এক যুবকের মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসেন কয়েকজন পথচারী। তাঁর বুকের বাঁ পাশে গুলির চিহ্ন রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে। চিকিৎসকেরা তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করার পর মরদেহ নিয়ে যান ওই যুবকেরা। এছাড়া রাজধানীর জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া এক কিশোরের লাশ রাতে ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়। চিকিৎসকেরা মৃত্যু নিশ্চিত করার পর তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। ওই কিশোরের পরিচয় জানা যায়নি।

এদিকে মিরপুর ১০ নম্বরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন কমপক্ষে তিন শতাধিক। রোববার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম মো. মিরাজ হোসেন। তার বয়স ২২ থেকে ২৩ বছর হবে বলে জানান তার বোনের স্বামী মো. ফেরদৌস আলম। তিনি বলেন, মিরাজ আলিফ পরিবহনের একটি বাস চালাতো। সে আন্দোলন দেখতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। সে মিরপুর ৬ নম্বরে থাকতো।

ড. আজমল হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ড. ঐন্দ্রিলা বলেন, ‘দুপুর আড়াইটা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত আমাদের এখানে ৩৫-৪০ জন আহত রোগী এসেছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই রাবার বুলেট ও ছররা গুলিতে আহত হয়েছেন। আর কয়েকজন সরাসরি গুলিতে আহত হন। এছাড়াও ইটের আঘাতে আহত হয়ে এসেছেন কেউ কেউ। তিনি বলেন, আমাদের এখানে একজন নিহত হয়েছেন। ফুসফুসে গুলি লেগে নিহত হয়েছেন তিনি। এছাড়া একজনের অবস্থা গুরুতর। আমরা তাকে সরকারি হাসপাতালে রেফার করছি।

মুন্সীগঞ্জ শহরের থানারপুল চত্বরে আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের মধ্যে রোববার সকাল ১০টার দিকে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- রিয়াজুল ইসলাম (৩৫), মেহেদি হাসান (৩২), মো. সজল (২২)। এ সময় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কমপক্ষে পাঁচটি মোটরসাইকেল।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে রংপুরের রাজপথে মানুষের ঢল নামে। সর্বাত্মক অসহযোগের প্রথম দিনে সিটি বাজারে সামনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুইজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে সকাল থেকেই উত্তপ্ত মাগুরা। রোববার সকাল ১০টার পর থেকে দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মেহেদী হাসান রাব্বী নামে একজনসহ ৪ জন মারা গেছেন। রাব্বী জেলা ছাত্রদলের যুগ্ন সম্পাদক। অপর তিনজন শিক্ষার্থী হলেন ফরহাদ হোসেন ও সুমন শেখ, আহাদ মোল্লা। গুরুতর আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।

ছাত্রদল নেতা রাব্বীর বাড়ি শহরের বৈরনাতুল গ্রামে। শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেনের বাড়ী শ্রীপুরের রায়নগরে। সে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও সুমন শেখের বাড়ি মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়ন এবং আহাদ মোল্লার বাড়ি একই উপজেলায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে দেবিদ্বারে একজন নিহত হয়েছেন। আজ রোববার দুপুর দেড়টার দিকে দেবিদ্বার পৌর এলাকার বানিয়াপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ওই ব্যক্তির নাম আবদুল্লা রুবেল (৩৩)। তিনি পেশায় গাড়িচালক। তিনি বারেরা এলাকার ইউনুছ মিয়ার ছেলে। এছাড়াও দুই পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছে।

পাবনায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের বিচার ও সরকারের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রোববার বেলা ১টার দিকে পাবনা শহরের ট্রাফিক মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালে সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম রিমন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন- পাবনা সদরের চর বলরামপুরের জাহিদুল ইসলাম (১৮) ও পাবনা শহরের আরিফপুর হাজীরহাট এলাকার মাহিবুল হোসন (১৬)।

সিলেটের গোলাপগঞ্জে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর গুলিতে চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক লোক। রোববার দপুর আড়াইটার দিকে গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকার ধারাবহরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে গুলিতে তারা নিহত হন। নিহতরা হলেন-ধারাবহর গ্রামের মো. মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন (৪৩) ও শিলঘাটের বাসিন্দা সানি আহমদ (১৮)। বাকিদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

ফেনীতে সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে আটজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত অর্ধশতাধিক। রোববার দুপুরে শহরের মহীপালে দফায় দফায় সংঘর্ষে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। ফেনী হাসপাতালের আরএমও আসিফ ইকবাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেনে। নিহতরা হলেন, ফেনীর ফাজিলপুর উপজেলার সাইদুল ইসলাম (২৫), সদর উপজেলার শিহাব উদ্দিন (২২), দুই রিকশাচালকসহ আরও চারজন। তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার এ ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে দুটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮০ জন। তিনজনের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছেন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ। এছাড়া আরও একজন দুপচাঁচিয়ায় মারা যান। নিশ্চিত করেছেন বীরকেদার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। নিহতের মধ্যে দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। দুপচাঁচিয়ায় ঘটনাস্থলেই মারা যান মনিরুল ইসলাম (২২)। তিনি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা সদরের বদলগাছীর বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রি কলেজের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তাঁর বাড়ি কাহালু উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়নের বীরকেদার দক্ষিণপাড়া গ্রামে। অন্যজনের নাম জিল্লুর রহমান (৪৫)। তাঁর বাড়ি গাবতলী উপজেলায়। অন্য দুজনের বয়স আনুমানিক ৬০ ও ৩৫ বছর।

কিশোরগঞ্জে বিক্ষোভকারী, পুলিশ ও ছাত্রলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই গুলিবিদ্ধ। এদিকে বিক্ষোভ চলাকালে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলামের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের পরিচয় জানা গেছে। তাদের একজন হলেন সদর উপজেলার কর্শাকড়িয়াল এলাকার দিলু মিয়ার ছেলে মো. মবিন মিয়া (৩২)। তিনি যুবলীগের কর্মী বলে জানা গেছে। বাকি দুজন হলেন সদরের যশোদল বীরদাম পাড়া এলাকার অঞ্জনা বেগম (৩৫) ও জেলা শহরের নিউ টাউন এলাকার জুয়েল মিয়া (৩০)। আনুমানিক ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি।

ভোলায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে রোববার তিনজন নিহত হয়েছেন। সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সংঘর্ষে পুলিশসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। বিএনপির দাবি, তাদের দুই কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দাবি, তাদের এক যুবলীগ কর্মীকে বিক্ষোভকারীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে। নিহদের পরিচয় জানা যায়নি।

শেরপুর জেলা শহরে আজ একাধিক স্থানে আন্দোলনকারী, আওয়ামী লীগ এবং পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ২ জন। আহত হয়েছেন অন্তত পক্ষে ৩০ জন। এদিকে শহরের তিনআনী বাজার মোড়ে আন্দোলনকারীদের ওপর প্রশাসনের টহল গাড়ি উঠিয়ে দিলে বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের শেরপুর জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। শেরপুর সদর হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডা. মো. সেলিম মিঞা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন- আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষের ছাত্র ও জেলা শহরের বাগরাকশা মহল্লার বাসিন্দা তুষার (২৪), আইটি উদ্যোক্তা ও স্বেচ্ছাসেবক জেলা সদরের পাকুড়িয়া চৈতনখিলার মাহবুব (২২)। অন্য একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। রোববার এসব ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও ছররা গুলি ছোড়ে। এ সময় গুলিতে মেহেদী হাসান বিশাল (১৮) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। হামলা ও সংঘর্ষে স্থানীয় সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদুসহ শতাধিক আহত হয়েছেন। জয়পুরহাট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এসএম গালিব আনোয়ার বলেন, দুপুর ১২টার পর থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ৬৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন গুলিবিদ্ধ। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদু, অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতা ও বিক্ষোভকারীরা রয়েছেন।

হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে রোববার রিপন শীল (২৭) নামের এক তরুণ নিহত হয়েছেন। তার চোখের ওপর গুলির চিহ্ন দেখা গেছে। তিনি শহরের ইনাতাবাদ এলাকার বাসিন্দা। ঢাকার কেরানীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিকে ঘিরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে রোববার দুপুরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের প্রধান ফটকে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় অফিসের ভেতর আটকা পড়ে আওয়ামী লীগ কর্মী মো. ইফতি (৩২) নামের একজন নিহত ও প্রায় ১৫ জন আহত হন।

বরিশালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে টুটুল চৌধুরী (৬২) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হয়েছেন। রোববার দুপুরের দিকে নগরীর সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের পাশে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারান তিনি। নিহত টুটুল চৌধুরী বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।