‘২০২৪ সালের মধ্যে অনুপ্রবেশকারীদের তাড়িয়ে দেয়া হবে’
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকা (এনআরসি) বাস্তবায়ন করে সব অনুপ্রবেশকারীকে ভারত থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মঙ্গলবার ঝাড়খণ্ডে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।
প্রথমবারের মতো অনুপ্রবেশকারীদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়ার সময়সীমা উল্লেখ করে অমিত শাহ বলেন, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেই সারা দেশে জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকা (এনআরসি) তৈরি করে প্রত্যেক অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্নিত করা হবে।
তিনি বলেন, ভোটের আগেই সব অনুপ্রবেশকারী বিদেশিকে তাড়ানো হবে দেশ থেকে। বিদেশি তকমা দিয়ে বিতাড়নের এই উদ্যোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করায় সাবেক কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন অমিত শাহ। রাহুলকে প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারীরা কি আপনার খুড়তুতো ভাই?’
বিদেশি আখ্যা দিয়ে ভারত থেকে মানুষকে তাড়ানোর প্রশ্নে কিছু মানবিক প্রশ্ন তুলেছেন রাহুল। এ জন্য তাকে বিদ্রুপ করে চক্রধরপুর ও বহরাগোড়ার সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রাহুল বাবা বলেন, তাদের তাড়াবেন না। তারা কোথায় যাবে? কী খাবে? কেন তাড়াব না? তারা কি আপনার খুড়তুতো ভাই?’ একই সঙ্গে অমিতের হুঙ্কার, ‘আপনারা নিশ্চিত থাকুন ২০২৪ সালের ভোটের আগে সব অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্নিত করে তাড়িয়ে দেয়া হবে।’
সারা দেশে এনআরসির ভাবনা নিয়ে গোড়া থেকেই তীব্র বিরোধিতা করছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি মমতার আপত্তি খারিজ করে তার উপস্থাপিত যুক্তি কার্যত উপেক্ষা করে চলার বার্তা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মমতার প্রশ্ন, স্বাধীনতার পর থেকে দেশে এতদিন যারা ভোট দিলেন, সরকার গড়লেন, তাদের কেন নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে?
মমতার এমন প্রশ্নের জবাবে অমিত শাহ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বা তৃণমূল নেত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কোনও অবস্থান নিতে পারেন, তাতে সারা দেশে এনআরসি তৈরির কাজ আটকে থাকবে না। এটা হবেই।
পশ্চিমবঙ্গের শাসন ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে আসামে এনআরসির কাজ চলার সময় থেকেই বিজেপি বলতে শুরু করেছিল, এবার পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হবে। দলের নেতারাই এখন মানছেন, এ জন্যই ধাক্কা খেতে হয়েছে রাজ্যের তিন বিধানসভার আসনের উপনির্বাচনে। দলের রাজ্য সভাপতির ছেড়ে যাওয়া আসনও ধরে রাখতে পারেনি বিজেপি।
দলের নেতারা বলছেন, এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক দূর করতে পারেনি বিজেপি। সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শেষ হতে সপ্তাহ দুই বাকি। এর মধ্যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করিয়ে বিদেশ থেকে আসা অ-মুসলিমদের নাগরিকত্ব নিয়ে আশঙ্কা দূর করতে চায় নরেন্দ্র মোদি সরকার। পাশাপাশি অন্য (মুসলিম) অনুপ্রবেশকারীদের সম্পর্কে সরকারের কড়া অবস্থানের কথাও বারবার বলছে বিজেপি।
বিরোধীদের ধারণা, বিদেশি ও অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে প্রবল জনমত গড়ে তুলে তাকে আগামী ভোটের প্রধান বিষয় করতে চাইছে বিজেপি। যে কারণে রাজনাথ সিংহও জনসভায় জানতে চাইছেন, ‘আপনার পাশের লোকটি বিদেশি কিনা, আপনারা কি তা জানতে চান না?’
অমিত-রাজনাথদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘এসব তাদের রাজনৈতিক স্লোগান। আমাদের রাজ্যে কী হবে বা হবে না, সেটা মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।’
মঙ্গলবার নির্বাচনী প্রচারে রাহুলও ঝাড়খণ্ডে ছিলেন। রাজ্যের সিমডেগায় এক জনসভায় তিনি বলেন, ‘ছত্তীসগড়ে ক্ষমতায় এসে সেখানকার চিত্র পাল্টে দিয়েছে কংগ্রেস। ঝাড়খণ্ডে ক্ষমতায় ফিরলে কৃষিঋণ মওকুফ করে দেয়া হবে।’
জনজাতি অধ্যুষিত এই রাজ্যের বাসন্দিাদের উদ্দেশে রাহুল বলেন, ‘আপনাদের জমি আছে, জঙ্গল আছে, জল আছে। আমরা তা সুরক্ষিত রাখব।’ কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও একই আশ্বাস দিয়েছেন।
সুত্রঃ আনন্দবাজার।