হুমায়ূন আহমেদের শুটিংয়ে আয়না থেকে দূরে থাকতেন শিল্পীরা!
বিনোদন ডেস্ক ।। শুটিং সেটে শিল্পী-কুশলীদের দেরিতে আসা কিংবা মেকআপ রুমের আয়নার সামনে শিল্পীদের অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা নিয়ে বেশিরভাগ সময়ই বিপাকে পড়েন পরিচালকরা।
তবে হুমায়ূন আহমেদের সেট ছিল একেবারেই ব্যতিক্রম। যে শিল্পী ঘুম থেকে উঠতেন বেলা ১১টায়, তিনিও নাকি ভোরবেলায় হাজির হতেন এই নন্দিত নির্মাতার সেটে। আবার অনেক শিল্পী সেটে এসে আয়না থেকেও দূরে থাকতেন। এর কারণটা ছিল শ্রদ্ধা। শিল্পীরা চাইতেন, যেন স্যার বিরক্ত না হন। প্রসঙ্গক্রমে একবার বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে এমন কথাটিই বলেছিলেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী ও নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওন।বর্তমানে নিজের পরিচালনার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তার ভাষ্যটা এমন, ‘এখন তো অনেক সমস্যাই আমাকে ফেস করতে হয়। হয়তো আর্টিস্টকে আয়নার সামনে থেকে তুলতেই পারছি না। অথচ হুমায়ূন আহমেদের ক্ষেত্রে একেবারে উল্টোটা দেখেছি। যে শিল্পী বেলা ১১-১২টার আগে ঘুম থেকে উঠতেন না, সেও একেবারে সকালে চলে আসতেন। উনার (হুমায়ূন আহমেদ) শুটিং ইউনিটে শিল্পীরা আয়না থেকে দূরে রাখতেন, দেখতেন না।’শুধু শ্রদ্ধাবোধ থেকেও নয়, হুমায়ূন আহমেদের শুটিং ইউনিট মানে মজার কোনও অভিজ্ঞতা পাওয়ার বড় ক্ষেত্র।১৯৯৭ সালে হুমায়ূন আহমেদ নির্মাণ করেন তার নন্দনকানন নুহাশপল্লী।নিজের অবকাশ কাটানো ছাড়াও শুটিং স্পট হিসেবে এটি তিনি ব্যবহার করতেন।শুরুর সে সময় নাটকের শুটিংয়ের জন্য যত সেট নির্মাণ করা হত সব রাতের বেলায় ভেঙ্গে পড়ত।
ভূত বিলাসহুমায়ূন আহমেদ এর একটি ব্যাখ্যা দাঁড় করান। বলেন, এ স্থানটিতে আসলে ভূতেরা বসবাস করে। আবাস হারানোর কারণে তারা এ কাণ্ড করছে। এরপর ভূতদের জন্য আবাসস্থল গড়ে তোলেন তিনি। নুহাশপল্লীর দীঘি লীলাবতীর দক্ষিণ পাশে কামরাঙ্গা বাগানের সঙ্গে তিনি তেঁতুল গাছ লাগান ভূতের জন্য! শুধু তাই নয়, সেখানে ভূত বিলাস নামের একটি ভবনও তৈরি করেন!এরপর নাকি, সেই তেঁতুল বাগান অনেক শিল্পীরাই ভূতের মুখোমুখি হয়েছেন।অভিনেতা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়সহ হুমায়ূনের কাছের আরও দু’একজন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এগুলো সব ছিল প্রতিভাবান এ লেখকের মজা করার কৌশল।তার একটি ভূত বাহিনী দিয়ে এ কাজগুলো তিনি করতেন। উদ্দেশ্য ছিল, রোমাঞ্চকর অনুভূতি দেওয়া ও মজা করা।তবে শুটিং চলাকালে তিনি অত্যন্ত মনোযোগী থাকতেন। এমন একটি ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায় সাহিত্যিক ও নির্মাতা শাকুর মজিদের এক লেখায়। তিনি হুমায়ূন আহমেদের ‘এইসব দিনরাত্রি’ নাটকের শুটিংয়ের স্মৃতিচারণ করেন।তিনি বলেন, ১৯৮৪-৮৫ সাল থেকে শুরু করে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত একক বা ধারাবাহিক নাটকগুলো সে সময় পরিচালনা করতেন বিটিভির বাঘা বাঘা নাট্য প্রযোজক। নাট্যকার হিসেবে প্রায় প্রতিটি নাটকের শুটিংয়ে হুমায়ূন আহমেদ উপস্থিত থাকতেন। তিনি অনেক সময় সেটে বসে বসেই চোখ মুছতে মুছতে নিজের নাটকের সংলাপগুলো লিখতেন। আর পরিচালকদের কাছে তার অনুরোধ থাকত, নাটকের সংলাপ বদলানো যাবে না, কিন্তু কোন সংলাপ কীভাবে কোন শিল্পী দেবেন, তা আপনারা ঠিক করে নেবেন।
‘এইসব দিনরাত্রি’র কিছু অংশ:
‘এইসব দিনরাত্রি’ ১৯৮৫ সালে বিটিভিতে প্রচারিত হুমায়ূন আহমেদের অত্যন্ত জনপ্রিয় নাটক। এটা সেই সময় এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে, এটি চলাকালীন সময়ে ঢাকার ব্যস্ত রাস্তাগুলোও ফাঁকা থাকত। এমন অনেক জনপ্রিয় নাটকের মাধ্যমে নাট্যজগতে তিনি নতুন মাত্রা দেন। ৩ শ এর অধিক বই লেখা এ সাহিত্যিক এরপর মনোযোগ দেন চলচ্চিত্র নির্মাণে। ১৯৯০ সালে তিনি তৈরি করেন চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমণি’।
ই-বার্তা ।। ডেস্ক