মোটা চাল চিকন করে রমরমা বাণিজ্য
ই-বার্তা ডেস্ক ।। চালকল মালিকরা প্রকাশ্যেই মোটা চাল মেশিনে দিয়ে চারপাশ থেকে ছেঁটে ফেলে চিকন করে মিনিকেট, কাজল লতা ও ব্রি-২৮ নামে বিক্রি করছেন।
কমদামের মোটা চাল চিকন করে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা করে বাড়তি দাম পাচ্ছেন মিল মালিকরা। আর চালের ছেঁটে ফেলা অংশ চালের গুঁড়ি হিসেবে বিক্রি করে পাচ্ছেন বাড়তি মুনাফা। চালকল মালিকদের এই রমরমা বাণিজ্যের উল্টো দিকে ঠকছেন ক্রেতারা। মোটা চালের ভেতরের অংশ বেশি দামে কেনা ছাড়াও চালের উপরিভাগে যে পুষ্টি থাকে, তা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন নকল চিকন চাল খাওয়া ক্রেতারা।
মোটা চাল চিকন করে মিনিকেট, কাজল, ব্রি-২৮ নামে বাজারজাত করা হয়। ধান ও কৃষির সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাও এ তথ্য স্বীকার করেছে। এর আগে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনেও বলা হয়, দেশে মিনিকেট নামে আদতে কোনো ধান নেই। মোটা চাল মেশিনে চিকন করে মিনিকেট নামে বিক্রি করছে মিল মালিকরা। ধান গবেষণা, বিএডিসি ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, দেশে উৎপাদিত চালের ৮৫ শতাংশই সেকারণে সরকারিভাবে চালের মূল্য নির্ধারণেও মোটা চালকে ধরে কেজিপ্রতি ৩১ টাকা থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কুষ্টিয়া আঞ্চলিক শাখার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাজেদুর রহমান বলেন, মোট উৎপাদিত চালের ১৫ ভাগ চিকন।
দেশের সবচেয়ে বড় চাল ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশের চিকন, মাঝারি চিকন ও লম্বা চাল মেশিনে দিয়ে আরও সরু করে মিনিকেট নামে বাজারে ছাড়ছে চালকলগুলো। এই চালের মান যাচাইয়ের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বিভিন্ন চালকল মালিক বিভিন্ন ব্র্যান্ড ব্যবহার করে মিনিকেট বাজারে ছাড়ছেন। অন্য মিলগুলোর মিনিকেটে বিভিন্ন জাতের চালের মিশ্রণ থাকার কথা জানালেও নিজের চালের ক্ষেত্রে এ অভিযোগ স্বীকার করেননি রশিদ।
কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভূতি ভূষণ সরকার বলেন, মোটা ও মাঝারি মোটা চাল চিকন করে বাজারে মিনিকেট নামে বিক্রি হচ্ছে। কুষ্টিয়া বড় বাজারে চালের আড়ত মালিক রাজু আহমেদ বলেন, ক্রেতাদের সবাই চিকন চাল চান। সারা দিনে যত চাল বিক্রি হচ্ছে, তার বেশির ভাগই চিকন চাল। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লাইড নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড টেকনোলজি বিভাগের প্রধান ড. মো. আবুল কাশেম তালুকদার বাজার থেকে জনপ্রিয় আটটি ব্র্যান্ডের মিনিকেট নামের চালের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেন। তাতে দেখা গেছে, সব ব্র্যান্ডের চালই মোটা চাল কেটে-ছেঁটে পলিশ করে চিকন করা হয়েছে। স্বাভাবিক চাল থেকে যে ফ্যাট ও ভিটামিন বি-২সহ যেসব খাদ্য ক্যালরি পাওয়ার কথা, বাজারে বিক্রি হওয়া মিনিকেটে তার কিছুই নেই। মোটা চাল চিকন করে ক্রেতাদের ঠকানোর বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া খাদ্য নিয়ন্ত্রক (কারিগরি) শাহনেওয়াজ বলেন, গুণগত মান বা দাম দেখার দায়িত্ব সরকারের বাজার মনিটরিং কমিটির। এ ক্ষেত্রে খাদ্য বিভাগের কিছু করার নেই। কুষ্টিয়া বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, কোথা থেকে বা কীভাবে মোটা চাল চিকন করে বাজারে দেওয়া হচ্ছে, তা উদঘাটনের চেষ্টা করছি। প্রমাণ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং গুণগত মান নিশ্চিত করা জাতিসংঘ-ঘোষিত এসডিজির অন্যতম লক্ষ্য। যে কোনো মূল্যেই হোক উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যায়ে মানসম্পন্ন খাবার পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমেই এ লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ই-বার্তা / তামান্না আলী প্রিয়া