নির্দিষ্ট সময়ের পরও বুকের দুধ খাওয়ালে হতে পারে যত বিপদ!

ই-বার্তা ।।  যৌথ পরিবারে বড় হচ্ছে সোনামনি। তিন বছর বয়সী এ শিশু সবার আদরের।একদিন দুপুরে হঠাৎ এ শিশুর যৌনাঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। মা তো কেঁদেকেটে অস্থির। কী হলো সোনামনির।

আতঙ্কিত মা দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান, হরমোনের সমস্যার জন্যই রক্তক্ষরণ হয়েছে।

এতো ছোট্ট মেয়ের হরমোনঘটিত কী সমস্যা? চিকিৎসক জানতে চান, সে কি এখনও বুকের দুধ পান করে? মায়ের হ্যাঁ সূচক জবাব।

ডাক্তার তাকে বুঝান, ঋতুস্রাব অনিয়মিত হওয়ায় মা প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহার করেন। ফলে মায়ের বুকের দুধপান করা সেই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঢুকেছে মেয়ের শরীরেও। তার জেরেই এই বিপত্তি!

আরেক ঘটনা। সাড়ে চার বছর বয়সের ছেলে অনিক। বুকের দুধ না খাওয়ালে তাকে ঘুম পাড়ানো যায় না। প্রতি রাতেই মা তাকে বুকের দুধ খাইয়েই ঘুম পাড়ান। কিন্তু হঠাৎ মায়ের স্তনে ক্ষত দেখা দিয়েছে। চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান, সন্তানের দাঁতের চাপের জেরে ওই ক্ষত!

চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, স্তন্যপানের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মায়েদের বলা হয়। কিন্তু সেটার নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। একটা সময়ের পরে স্তন্যপানেও হতে পারে বিপদ।

স্ত্রী ও শিশুরোগ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গর্ভাবস্থা থেকেই সন্তানের জন্মের পরে প্রথম ছ’মাস স্তন্যপানের গুরুত্ব মায়েদের বোঝানো হয়। কিন্তু শিশুর ঠিক বিকাশ এবং মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য সন্তানের শক্ত খাবারের অভ্যাস তৈরি করা এবং দু’বছর বয়সের পরে স্তন্যপানের পরিবর্তে সাধারণ খাবারে অভ্যস্ত করে তোলাও জরুরি। সেটা কিন্তু অধিকাংশ মা-ই জানেন না।

স্ত্রীরোগ চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, অনেকেই বছর পাঁচেক পর্যন্ত স্তন্যপানে অভ্যস্ত থাকে। সেটা ঠিক নয়। শিশুর জন্মের পরে অনেক সময় মায়েদের হরমোনঘটিত সমস্যা হতে থাকে। আবার অনেকে গর্ভনিরোধক ওষুধও ব্যবহার করেন। যেগুলি তার হরমোনঘটিত পরিবর্তন ঘটায়। সেই ওষুধ ব্যবহারের সময়ে সন্তানকে স্তন্যপান করালে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শিশুর দেহে দেখা দিতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘মা কোনও ধরনের ওষুধ খেলে কিংবা সংক্রমণে আক্রান্ত হলে স্তন্যপানের মাধ্যমে শিশুর দেহে তা যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। তাই দু’বছরের পরে স্তন্যপান করানো ঠিক নয়।’’

মাতৃদুগ্ধ পর্যাপ্ত থাকলেও শিশুদের দু’বছরের পরে স্তন্যপানে বিশেষ পুষ্টি মেলে না। বরং ঋতুস্রাব, স্তনে সংক্রমণ-সহ মায়ের একাধিক সমস্যা দেখা যায়, সন্তানের শারীরিক এবং মানসিক নানা সমস্যাও তৈরি হয়—জানাচ্ছেন স্ত্রীরোগ চিকিৎসক সুমনা ঘোষাল।

বছর দুয়েকের পরেও শিশু ভাত, ডালের মতো শক্ত খাবারের পরিবর্তে স্তন্যদুগ্ধেই অভ্যস্ত হলে রক্তাল্পতার মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে বলেই মনে করছেন শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘শিশুর বিকাশে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মাতৃদুগ্ধের গুরুত্ব রয়েছে। তার পরে বিভিন্ন খাবারের থেকেই পুষ্টি সংগ্রহ করা শিখতে হবে।’’ অনেকেই মনে করেন, মাতৃদুগ্ধ পর্যাপ্ত খেলেই পেট ভরে যাবে। কিন্তু বছর দুয়েক পরে ঠিক মতো সব রকমের খাবার না খেলে নানা শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়। এমনকী দাঁতে সংক্রমণও হয় বলে জানান শিশুরোগ চিকিৎসক খেয়া ঘোষউত্তম।

কত দিন পর্যন্ত স্তন্যপান মা ও শিশুর জন্য উপকারী: মায়েদের কাউন্সেলিং করে বোঝানো দরকার বলেই মনে করেন স্ত্রীরোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, সন্তানের তিন মাস বয়স থেকেই মায়ের কাউন্সেলিং করতে হবে।

ছ’মাসের পরে কী ভাবে স্তন্যপানের পরিমাণ কমাতে হবে এবং শিশুকে শক্ত খাবারে অভ্যস্ত করতে হবে সেটা বুঝাতে হবে। বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়কালীন মায়েরা কী ধরণের ওষুধ ব্যবহার করতে পারবেন না, সে নিয়েও স্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সে নিয়ে মায়েদের ধারণা স্পষ্ট থাকে না। তাই মায়ের দেহের বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সন্তানের শরীরেও পড়ে।

আর সন্তান জন্মদানের বছর দেড়েক পরেও স্তন্যপান করালে মায়ের শরীরে ভিটামিনের অভাব, অস্থি সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ, মায়েরা সন্তান জন্মের ঠিক পরেই যে ধরনের খাবারে অভ্যস্ত হন, সন্তানের বয়স বছর খানেক হলে সেই খাদ্যাভাসে পরিবর্তন দেখা যায়। তাই মায়ের শরীরেও নানা রকম সমস্যা তৈরি হয়।

ই-বার্তা/এস