জনবলের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা
ই-বার্তা।। জনবলের অভাবে যশোরের শার্শা উপজেলার নাভারন বুরুজবাগান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে।। হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার, এনেসথিয়া, গাইনি, সার্জারি, চক্ষু ও শিশুসহ কোন কনসালটেনন্ট নাই।
৩২ জন চিকিৎসের মধ্যে রয়েছেন ৪ জন। এর মধ্যে ১ জন মাতৃত্বকালিন ছুটিতে আছেন। বিভিন্ন শ্রেণির ১১৯ জন কর্মচারীর মধ্যে রয়েছে ৫৪ জন। স্বল্প জনবল দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষের এই জনপদে একমাত্র চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র ৫০ শয্যার নাভারন বুরুজবাগান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে প্রতি ৬০ হাজার মানুষের জন্য একজন মাত্র ডাক্তার। বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ স্থল বন্দর বেনাপোলে কয়েক হাজার শ্রমিক আমদানিকৃত পন্য নামানো উঠানোর কাজ করে এই বন্দরে। এসময় প্রায়শই শ্রমিকরা আহত হয়। ডাক্তারের অভাবে মূমুর্ষ রোগী নিয়ে যেতে হয় বেনাপোল থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দুরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে। যেতে যেতে পথে রোগী মারা গেছে এমন অভিযোগও রয়েছে।
২০১৮ সালে এ হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে উন্নিত হয়ে ৫০ শয্যায় রুপান্তরিত করা হলেও এখনও পর্যন্ত কোন ডাক্তার বা জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে ৪শ’ রোগী হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। বহির্বিভাগে প্রত্যেক রোগীর কাছ থেকে টিকিটের জন্য ৫ টাকা করে আদায় করা হলেও রোগীরা কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না।
সরোজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সাড়ে ১০টার আগে কোন চিকিৎসককে হাসপাতালে দেখা যায়না না। আবার বেলা ১টার পরেও কোন ডাক্তারকে হাসপাতালে খুজে পাওয়া যায় না।সাথে আছে ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ানদের চরম র্দুব্যবহার।
গত দুই দিনে সিজার করা রোগীর ডেসিং হয়নি এমন রোগীও হাসপাতালের বেডে শুয়ে যন্ত্রনায় ছটফট করতে দেখা গেছে। দুর-দুরন্ত থেকে রোগীরা চিকিৎসা নিতে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে ডাক্তার না পেয়ে চলে যাচ্ছে।দীর্ঘদিন ধরে বিকল রয়েছে এক্স-রে ও ইসিজি ম্যাশিন। প্যাথলজি বিভাগে চলছে অনিয়ম-দুনীতি। রোগীদেরকে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। ভর্তি রোগীদের দেয়া হচ্ছে নিন্ম মানের খাবার।
উপজেলার আমতলা-গাতিপাড়া গ্রামের বৃদ্ধা রওশনারা (৬০) ও তাহেরা বেগম (৫৫) জানালেন, সকাল ৮টায় টিকিট কেটে ডাক্তারের অপেক্ষায় বসে আছি ১০টা বাজতে চললো এখনও কোন ডাক্তার হাসপাতালে আসেনি। তিনি বলেন,হাসপাতালে রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা সত্বেও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অশোক কুমার সাহা নিজেই বাইরের পছন্দের বেসরকারী ক্লিনিকে রোগী পাঠানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।আবার কখনো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক এালোপ্যাথিক চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মচারী জানালেন, প্যাথোলজি বিভাগের টেকনিশিয়ান কবির পরীক্ষা নিরীক্ষা নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে থাকেন। হাসপাতালের নিজস্ব প্যাথোলজিক্যাল বিভাগে যে সব রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায় তার ৮০ভাগ রোগী কমিশন বানিজ্যের জন্য চিকিৎসকরা বাইরের পছন্দের বেসরকারী ক্লিনিকে পাঠাচ্ছে।
এদিকে, হাসপাতালে সার্জিক্যাল বিভাগ, মেডিসিন বিভাগ, গাইনি বিভাগ ও এ্যানেস্থেসিয়া বিভাগে কনসালটেন্ট পদে ডাক্তার নিয়োগ বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।
হাসপাতালের বিপর্যস্থ চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অশোক কুমার সাহা আনিত অভিযোগ স্বীকার করে বলেন,হাসপাতালে ৩২টি ডাক্তারের পদ থাকলেও এখানে মাত্র ৪ জন ডাক্তার কর্মরত আছে। এক্স-রে ম্যাশিনের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। অচিরেই মেরামত হবে। হাসপাতালে যাতে সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ মানুষ সর্বোচ্চ সেবা পায় সে ব্যবস্থা করা হবে। সরকারীভাবে নতুন করে নিয়োগ দিলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে ।
মোঃ জসিম উদ্দীন, বেনাপোল প্রতিনিধি।