লাঞ্ছনার শিকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, প্রতিবাদী হয়ে উঠলেন নিজেই
ই-বার্তা।। গত শনিবার রাত আনুমানিক ৯ টা ২০ মিনিট, টিউশনি করিয়ে বাসায় ফিরছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে বাড্ডা বাস কাউন্টার এর সামনে আসতেই হটাত পিছন থেকে একজন বয়স্ক লোক তাকে আজেবাজে নামে সম্বোধন করতে থাকে।
তিনি বলেন, আমি প্রথমে এতো ভালোভাবে খেয়াল করিনি। আমার গন্তব্যের টিকেট টা কিনে যখন ঘুরলাম দেখলাম হঠাৎ করে ওই লোকটা আমার সামনে এসে দাঁড়ায় এবং আমাকে বলে “এই মাগি তোকে যে ডাকতেসি কানে শুনোস না? নাকি আমেরিকা থেকে আশসোস যে বাংলা বুঝোস না? আমি এতো ভয় পাইসিলাম, কিন্তু সাহস করে বললাম যে, দুঃখিত কিন্তু কে আপনি? আর আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন কেনো?
এইসময় আমার আশেপাশে অনেকে থাকলেও কেউ সাহায্য হাত বাড়িয়ে দেয়নি। এরপর পাশে থাকা একজন পুলিশ সদস্যকে সম্পূর্ণ ঘটনা জানাই । কিন্তু তিনি ও আমাকে সাহায্য করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদস্য বলেন,” আপনি বাড্ডা মোড়ে যান, ঐখানে পুলিশ আছে, তারপর আমি বললাম যে, আচ্ছা আপনি ওই লোককে আটকান, আমি যাচ্ছি।”পরক্ষণেই তিনি দ্রুত বনশ্রী পুলিশ বিল্ডিং এর সামনে যান এবং পুলিশ কে সব ঘটনা বলেন, এরপরে পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছালে তিনি দেখতে পান ওই পুলিশ আর উত্তক্ত্য লোকটা কেউ নেই। এসময় উপস্থিত একজন সাক্ষী হিসেবে সব কিছু বলেন।
এরপর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া সেই সার্জেন্ট অনাগ্রহ প্রকাশ করে বলেন , এটা বাড্ডা থানার অধীনে, আপনাকে বাড্ডা থানায় যেতে হবে। তারপর আমি উপস্থিত সেই ব্যাক্তিকে সাক্ষী হিসেবে নিয়ে বাড্ডা থানায় যাই। এরপর বাড্ডা থেকেও আমাকে বললো যে আপনাকে হাতিরঝিল থানায় যেতে হবে।
লাঞ্চনার স্বীকার সেই শিক্ষার্থী বলেন, আমি একা একটা মেয়ে রাত ৯ টা ৩০ মিনিট থেকে ১২ টা পর্যন্ত শুধু এক থানা থেকে অন্য থানায় ঘুরতেসি। কোনো পুলিশ আমাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে না। তিনি বলেন, তারপর আমি হাতিরঝিল থানায় গেলাম এবং সেখানকার তেজগাঁও বিভাগের এডিসি পুলিশ – “হাফিজ আল ফারুক” এবং হাতিরঝিল থানার ওসি ” আব্দুর রশীদ আমার ঘটনা শুনলো এবং ৫ মিনিট এর মধ্যে ৫ জনের একটা দল গঠন করে পাঠালো ওই লোকটা কে ধরে আনার জন্য।
এ এস আই তৌফিক, আতিক, আতাউল, ফারুক এবং উজ্জল এই ৫ জন আমার সাক্ষী কে নিয়ে যায় এবং ১৫ মিনিটের মধ্যে উত্যক্তকারীকে সেই লোকটা কে থানায় হাজির করে।এরপর ওসি আমাকে আর লোকটা কে তার রুমে ডেকে নিলো। আমি পরিচয় দিয়ে বললাম যে হ্যাঁ এই লোকটা আমাকে উত্যক্ত করেছিলো। তারপর রাগ ধরে রাখতে না পেরে আমি ওই লোকটা কে জুতা খুলে ইচ্ছা মতো মারি এবং মামলা করি।
আমি জানি না ঠিক এই মুহুর্তে আমি নিজেকে বাহবা দিবো না কি করবো, কিন্তু আমি প্রমাণ করে দিয়েছি, যে আমরা মেয়েরা চাইলে অনেক কিছু করতে পারি। আমরা মেয়েরা খেলার পুতুল না। আমাদের ও একটা জীবন আছে আমাদেরও স্বাধীনতা আছে।আমি ধন্যবাদ দিবো হাতিরঝিল থানার সব পুলিশ ভাইয়াদের কে, যারা আমাকে আমার এই বিপদের সময় সাহায্য করেছে শেষ পর্যন্ত। ঘটনার পর রাত ৩ টার দিকে আমাকে হাতিরঝিল থানার গাড়িতে করে আমার বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসে।
এই ঘটনার পর আমি এখন নিজেকে চিনতে শিখে গেছি, আমি আশেপাশের মানুষ কেও চিনলাম যে কারা আমার বিপদের সময় আমার পাশে থাকবে আর কারা থাকবে না।
আমি জানি না যে সামনে কি হবে না হবে। শুধু এইটুকু বলতে চাই যে-“আমি পেরেছি, আমি একজন নারী হিসেবে নারীদের সম্মান রাখতে পেরেছি, আমাদের মতো নারীরা যারা প্রতিনিয়ত এরকম পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্য করে একটা কথা ই বলবো- ” আপনারা অন্যায় দেখলে সোচ্চার হবেন, প্রতিবাদ করবেন, আর পারলে মানবিকতার খাতিরে হলেও অন্যের বিপদে এগিয়ে যাবেন।
ফেসবুক স্ট্যাটাস অবলম্বনে…