বিচারের মুখোমুখি হওয়া থেকে রেহাই পাচ্ছেন ট্রাম্প

ই-বার্তা ডেস্ক  ।।  ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে নেওয়া কিছু পদক্ষেপের জন্য বিচারের মুখোমুখি হওয়া থেকে রেহাই পাচ্ছেন ।  আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম সাবেক কোনো প্রেসিডেন্টকে অপরাধের অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দেওয়ার প্রশ্নে সিদ্ধান্ত দিলেন মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট। 

গত সোমবার মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। । সুপ্রিম কোর্টের ৯ সদস্যের বেঞ্চের ৬ জনই ট্রাম্পের দায়মুক্তির পক্ষে ছিলেন; বিপক্ষে ছিলেন তিনজন। পরে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। সেই অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে সংবিধানের অধীন ট্রাম্প যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, সেগুলোয় দায়মুক্তি পাবেন। তবে ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের জন্য দায়মুক্তি পাবেন না তিনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে তাঁকে হারিয়ে জয় পান জো বাইডেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে করা একটি মামলায় সরকারি কৌঁসুলিরা অভিযোগ এনেছেন, ওই নির্বাচনের ফল বদলাতে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছিলেন ট্রাম্প। পরে ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটলে হামলার পেছনেও উসকানি দিয়েছিলেন তিনি।

সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২০ সালের নির্বাচনে কারচুপির ঘটনা খতিয়ে দেখতে বিচার বিভাগকে যে নির্দেশ ট্রাম্প দিয়েছিলেন, তা প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর দাপ্তরিক কাজের মধ্যে পড়ে। এ ছাড়া জো বাইডেনের জয়কে স্বীকৃতি না দিতে তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা–ও তাঁর সাংবিধানিক ক্ষমতার আওতায় ছিল। ক্যাপিটলের দিকে যাত্রা করতে ৬ জানুয়ারি সমর্থকদের প্রতি দেওয়া ট্রাম্পের নির্দেশও ছিল তাঁর এখতিয়ারের মধ্যে।

এর আগে ৬ জানুয়ারির ঘটনা থেকে সুরক্ষা পেতে নিম্ন আদালতে আবেদন করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর ওই আবেদন খারিজ হয়। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে নিম্ন আদালতের সেই আদেশ বাতিল হয়ে গেল। একই সঙ্গে মামলাটি আরও পর্যালোচনার জন্য নিম্ন আদালতে পাঠানো হবে বলে সিদ্ধান্তে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস।

আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবারও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ট্রাম্প। সর্বোচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্তের ফলে এটা স্পষ্ট যে নভেম্বরের আগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ ও ক্যাপিটলে হামলাসংক্রান্ত মামলার তেমন অগ্রগতি হবে না। আর তিনি যদি আবার ক্ষমতায় আসেন, তাহলে এ মামলায় বিচার বন্ধের চেষ্টা করতে পারেন, এমনকি নিজেকে ক্ষমা করেও দিতে পারেন।

সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আমাদের গণতন্ত্র ও সংবিধানের জন্য এটা একটা বড় জয়। একজন আমেরিকান হিসেবে আমি গর্বিত।’ অন্যদিকে আদালতের সিদ্ধান্তে মোটেও সন্তুষ্ট নয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ডেমোক্রেটিক পার্টি। বাইডেনের প্রচারশিবিরের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, আদালতের এই সিদ্ধান্তের ফলে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যা ঘটেছিল, তা বদলে যাবে না।

আদালতের এই সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনাকারী বিশেষ কৌঁসুলি জ্যাক স্মিথের জন্য সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি নিয়ে এসেছে বলে মনে করছেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবিধানিক আইনবিশেষজ্ঞ আজিজ হক। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এই মামলায় ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে স্মিথের পথ আরও কঠিন হলো।

সুত্রঃ বিবিসি

ফাইল ছবি: এএফপি

মোঃ জাহিন হাসান/আন্তর্জাতিক ডেস্ক/ ই-বার্তা২৪৭.কম