ইরানে ইসরাইলের হামলায় প্রতিক্রিয়া জানালো রাশিয়

 ই-বার্তা ডেস্ক ।। ইরানে ইসরাইলের বিমান হামলা নিয়ে বিশ্বের বহু দেশ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিক্রিয়া জানাল রাশিয়া। এতে সব পক্ষকে সংযমের চর্চা, সহিংসতা থামানো ও বিপর্যয়কর পরিস্থিতি এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।

শনিবার (২৬ অক্টোবর) রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সংযম প্রদর্শন, সহিংসতার অবসান ও ঘটনার বিপর্যয়কর পরিস্থিতি এড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিতে ইরানকে উসকানি দেয়া বন্ধ করা এবং উত্তেজনার অনিয়ন্ত্রিত সম্প্রসারণ থামানো প্রয়োজন।’

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ও লেবাননে সামরিক আগ্রাসন এবং হামাস ও হিজবুল্লাহর একাধিক নেতা ও কমান্ডার হত্যার জবাবে গত ১ অক্টোবর ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। তাদের একাধিক সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ১৮১টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি)।
 
তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় পর ওই হামলার জবাবে শনিবার (২৬ অক্টোবর) ভোরে ইরানের রাজধানী তেহরান ও আরও কয়েকটি প্রদেশে একযোগে বিমান হামলা চালায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)। হামলায় দুই ইরানি সেনা নিহত হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির খবর এখনও সামনে আসেনি।
 
হামলার পর তেল আবিব তেহরানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ইরান যদি প্রতিশোধমূলক হামলা চালায়, তাহলে সেজন্য তাদের চড়া মাশুল দিতে হবে। ইসরিইলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যও সংঘাতের বিস্তার না ঘটাতে ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তবে এই হামলার জবাব দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে ইরান। 
 
ইরানের ইসরাইলি হামলার পর সৌদি আরব, ওমান, পাকিস্তান, তুরস্কসহ বহু দেশ এর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। শনিবার (২৬ অক্টোবর) ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরাইলি বিমান হামলা এমন ‘একটি উসকানি যা সহিংসতার আগুনে ইন্ধন দিচ্ছে এবং সেই সঙ্গে উত্তেজনা হ্রাস ও শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে দুর্বল করছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আবারও (ইসরাইলি) আগ্রাসন বন্ধ এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
 
ইরানের ওপর ইসরাইলের হামলাকে দেশের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়মের লঙ্ঘন উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই অঞ্চলে ক্রমাগত উত্তেজনা এবং জনগণের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ এমন সংঘাতের বিস্তার প্রত্যাখ্যান করে দৃঢ় অবস্থান নিশ্চিত করছে সৌদি আরব।
 
সেইসঙ্গে এই অঞ্চলে অব্যাহত সামরিক সংঘাতের প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করে ‘সর্বোচ্চ সংযম অনুশীলন এবং উত্তেজনা হ্রাস করার’ জন্য সব পক্ষকে আহ্বান জানায় রিয়াদ।
 
ইরানে ইসরাইলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতও। সেই ‘অব্যাহত সংঘাত এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে দেশটি।
 
আমিরাত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ইসরাইলের নাম উচ্চারণ না করেই বলেছে, আমরা ইরানে হামলার নিন্দা জানাই। আমরা উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শন এবং উত্তেজনা প্রশমনে বিচক্ষণতার পরিচয় দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
 
মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ কাতার বলেছে, ‘ইরানে হামলার তীব্র নিন্দা জানাই আমরা’। দেশটি জানিয়েছে ইরানে ইসরাইলের হামলা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কাতারও সবাইকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে।
মিশরও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। দেশটি বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় তারা উদ্বিগ্ন এবং এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বিনষ্টে যা কিছু জড়িত তার সবকিছুর নিন্দা জানায় তারা।
 
তুরস্ক ইরানে ইসরাইলের হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, গাজায় গণহত্যা, পশ্চিমতীরকে অধিগ্রহণ করার প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত করার সময় দখলদার ইসরায়েল ইরানে হামলা চালিয়ে মধ্যপ্রাচ্যকে এখন বিস্তৃত যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
 
মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ ইরাক দখলদার ইসরাইলের হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ইরানসহ বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালিয়ে দখলদার ইহুদিবাদীরা এই অঞ্চলে যুদ্ধ বিস্সৃত করছে। এছাড়া জর্ডান, কুয়েত, মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানও ইরানে ইসরাইলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে।