‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে’:ওবায়দুল কাদের
বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারতের প্রভাব নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা কথা আছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও বহু মানুষের মধ্যে এই ধারণা প্রকট যে, প্রতিবেশী বৃহৎ এই দেশটির সুনজর রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর সে কারণেই আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে রবিবার (২২ এপ্রিল) আওয়ামী লীগের ১৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল তিন দিনের ভারত সফর করেছে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন রয়েছে।
ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আমন্ত্রণে আওয়ামী লীগের এ প্রতিনিধি দলটি সফর শেষে মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) বিকালে দেশে ফিরেছেন। তবে সফর বিষয়ে তখন সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলেননি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আজ বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভা শেষে বের হওয়ার সময় ভারত সফর নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
এসময় মন্ত্রী জানান, ‘ভারত সফরকালে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলকে দেশটির সরকার গুরুত্ব দিয়েছে। তবে একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। কিন্তু ডিনার পার্টিতে ভারতের অনেকেই বলেছেন, আওয়ামী লীগ আগামীতেও ক্ষমতায় আসবে। তবে একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মোদি কোনও কথাই বলেননি।’
আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচন হবে, অনেক দলই নির্বাচনে অংশ নেবে। ভারত কি আমাদের ক্ষমতায় বসাবে? তারা কি কখনও ক্ষমতায় বসিয়েছে? ২০০১ সালে আমরা হেরে গেছি। ভারত কি আমাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে? ভারত এটা করে না। আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে দেশের জনগণ। কোনও বিদেশি শক্তি নয়।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা ভারত সফরে গেছি। ভারত সরকার আমাদের অনেক গুরুত্ব দিয়েছে। নরেন্দ্র মোদি আমাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। প্রায় বত্রিশ মিনিট তার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি কথা বলেছেন, আমাদের কথা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনেছেন। আমরা দেশের জন্য জনগণের স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই সফরে শিক্ষা থেকে শুরু রোহিঙ্গা ইস্যু, কোনও কিছুই বাদ পড়েনি। দেশের জনগণের স্বার্থ তুলে ধরেছি। আমরা জানিয়েছি, তিস্তাচুক্তি হলে জনগণের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে।’
তারেক রহমানের পাসপোর্ট সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির একেক নেতা একেক কথা বলছেন। খাদের কিনারে এসে লাফালাফি করছেন। এখন বলছেন, তারেক রহমান রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন। এতদিন স্বীকার করেননি। ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে’। বিএনপিকে আগে বলেছি ‘প্যাথোলজিক্যাল লায়ার’, এখন বলছি ‘পূর্ণ মিথ্যাবাদী’।’
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এক মন্তব্যের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘ফখরুল কি চিকিৎসক? চিকিৎসকরা বলুক। কিভাবে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনিত হয়েছে? কদিন আগে আমরা তাকে স্বাভাবিক দেখেছি। দৃশ্যত কোনও অবনতি দেখিনি। ভেতরে যদি কোনও সমস্যা হয়ে থাকে, তবে মেডিকেল বোর্ড দেখে বলুক। সরকার অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।’
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রচারণায় অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যে এলাকার নির্বাচন, সে এলাকার যারা ঢাকায় রয়েছেন, কেবল তারাই নির্বাচনী এলাকায় যাবেন। অযথা ভিড় বাড়িয়ে লাভ নেই। সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে বিরক্ত করবেন না।’
ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, আবদুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।