৩০ এর অভিশাপ, বেকারের হাহাকার

ই-বার্তা ।।  চাকরির আবেদনের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ করার যুক্তিক দাবি “বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ” অনেকদিন ধরেই করে আসছে তবে সব থেকে দুঃখজনক বিষয় হলো বিভিন্ন সময়ে পুলিশ তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে বাঁধা প্রদান,শারিরীক হেনস্থাসহ গ্রেপ্তার করেছে।যা শুধু অযোক্তিক না বরং মানবাধিকার লঙ্গন এবং স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য কলঙ্কজনক অধ্যায় বটে।

 

চলুন দেখি তাদের দাবিকে আমরা যোক্তিক বলে কেন সমর্থন করছি…

আমাদের দেশের মানুষের গড় আয়ু যখন ৪৫ বছর ছিল তখন চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ছিল ২৭ বছর।গড় আয়ু ৫০ ছাড়ালো তখন চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা করা হলো ৩০ বছর।বর্তমানে গড় আয়ু ৭২ বছর কিন্তু চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা একই রয়ে গেছে।

 

গড় আয়ু বৃদ্ধির কারনে অবসরের সময় ৫৭ থেকে করা হলো ৫৯ বছর,আলোচনা চলছে অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধির।অবসরের বয়সসীমা বাড়ালে সংগত কারনে ওই দুই বছর চাকরিতে নতুনদের প্রবেশের সুযোগ কমে আসে।কারন উপরের পদ খালি হলেই কেবল নিচের পদে জনবল নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হবে।এই বিবেচনায় অবশ্যই চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো উচিত।

 

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আগে স্নাতক ছিল দুই বছরের এখন তিন বছরের,আগে স্নাতক (সম্মান) ছিল তিন বছরের এখন চার বছর করা হয়েছে।স্কুলিং এক বছর বাড়ালেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা একেই রয়ে গেছে।এখন প্রশ্ন হচ্ছে আদৌ কি কোন ছাত্র স্নাতক (সম্মান) চার বছরে শেষ করতে পারে?

বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সহ স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুটা সেশনজট মুক্ত হলেও চার বছরে স্নাতক শেষ করাটা এখনো অলিক স্বপ্ন।বর্তমানে বিশাল বেকার জনগোষ্ঠীর স্নাতক/স্নাতকোত্তর শেষ করতে ২৭-২৮ বছর হয়ে গেছে,সেখানে চাকরির প্রস্তুতি নিতে নিতে ৩০ এর কাছাকাছি চলে আসে।তবে কি স্নাতক শেষ করাটা তারুণ্যের জন্য অভিশাপ?

 

রাষ্ট্র কি দেখতে পায়না ৩০ বছরের বয়সসীমার মধ্যে বাংলাদেশের লক্ষকোটি শিক্ষার্থী অবরুদ্ধ????

নাকি রাষ্ট্র মনে করে ৩০ এর পর চাকরিতে আবেদনের জন্য ব্যক্তি অযোগ্য????

 

সরকারের অনেক মন্ত্রী বয়সের বাড়ার সাথে সাথে তাদের যোগ্যতারও প্রমাণ দিচ্ছে যার কারনে আমরা আজ মধ্যম আয়ের দেশে উত্তীর্ণ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছি তবে আমরা কেন পারবনা ৩৫ এ নিজের মেধা আর যোগ্যতা দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে??

 

আজ যদি শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকের চাকরি নিশ্চিত করার জন্য আন্দোলন করত তাহলেও তা যুক্তিক বলে মানতে হত,কেননা শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার দায়িত্ব অবশ্যই রাষ্ট্রের উপর বর্তায়।তবে কেন মেধাবীদের এই নূন্যতম সুযোগ চাওয়াটা যুক্তিক হবেনা?

 

আন্দোলনকারীরা কি এমন কিছু চাচ্ছে যা বহিঃবিশ্বে স্বীকৃত নই??চলুন দেখি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা-

ভারত(পশ্চিমবঙ্গ) ৪০ বছর,
কাতার ৩৫ বছর,
শ্রীলংকা ৪৫ বছর,
ইন্দোনেশিয়া ৪৫ বছর,
সৌদি আরব ৫৫ বছর,
মালশিয়া ৫৫ বছর ও
সিঙ্গাপুরে ৫৫ বছর।

 

উন্নত দেশগুলো এ ব্যাপারে আরো উদার,যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় যে কোন বয়সেই চাইলেই সরকারি চাকরিতে ঢোকা যায়।অবাক করা তথ্য হল বিশ্বে ১৬২ টি দেশে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫+।তবে আমার বাংলাদেশে নয় কেন?

 

যদি কেউ ৩৫ কছর বয়সে সব ধরনের পরীক্ষা উতরে সরকারি চাকরিতে আসতে পারেন এবং তার সকল যোগ্যতা থাকে তাহলে রাষ্ট্র কেন অন্যায়ভাবে তার অধিকার হরন করবে?

 

আজ যখন দেখলাম কাফনের কাপড় পড়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে তখন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না,হুম অঝোরে কেঁদেছি স্বপ্নবাজ তরুনদের স্বপ্ন ভাঙ্গার আশঙ্কায়।আমি কাফনের কাপড় পড়া তারুণ্যর মিছিল দেখিনি,আমি দেখিছি কাফনে মোড়ানো আমার বাংলাদেশকে।

 

তবে আমি বিস্মিত হয়েছি একটা বিষয় ভেবে,এত প্রতিকী প্রতিবাদ ও আন্দোলনের পরেও সরকার এদের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কিছু বিবৃতি দেয়নি।তবে কি রোহিঙ্গারা আজ বাংলাদেশি আর আমাদের বর্তমান প্রজন্ম রাষ্ট্র আর সরকারের চোখে রোহিঙ্গা তথা শরনার্থী?

 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,আপনি কি জানেন মানুষ কতটুকু অসহায় হলে কাফনের কাপড় পড়ে আন্দোলনে নামে??আপনি কি বুঝেন,স্বপ্ন পুড়ার বেদনা কতটুকু কষ্ঠের?আপনি কি উপলব্ধি করেন বেকারত্বের অভিশাপ থেকে রাষ্ট্র মুক্তি দিতে পারছেনা সেখানে বয়সের এমন অযোক্তিক সীমাবদ্ধতা তরুনদের জন্য কতটুকু হতাশার?

 

জৈনিক আন্দোলনকারী হতাশার অনলে জীবন আর মৃত্যুর ব্যবধান ভুলে লিখেছেন:

“আজ মরণে নাহি ভয়
কাফন পরেছি গায়ে
দাবী আদায়ে অনড় মোরা
কে শিকল পরাবে পায়ে?”

 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,আপনি মাদার অফ হিউমিনিটি সুতরাং তরুন প্রজন্ম আপনার দিকে তাকিয়ে,যেন আপনার হাত ধরেই প্রজন্মের ন্যায্য দাবি পূরণ হয়।আমাদের স্বপ্ন নই,আমাদের বিশ্বাস আপনি তাদের নৈরাশ করবেন না।আপনি বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসুরী সুতরাং আপনার হাত ধরেই সকল ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা আর বৈষ্যমের অবসান হোক।

 

পরিশেষে আমাদের সকলের স্লোগান হোক…

“৩০ কে মোরা পরিয়েছি কাফন
মৃত্যুকে করুক আলিঙ্গন।
৩০ এর দাফন করিতে চাই,
৩৫শের হোক পুনরুজ্জীবন”

 

লেখক ঃ ইলিয়াস এ দোলন