নজরুলের গজল নিয়ে আব্বাস উদ্দিনের স্মৃতিচারণ
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ২৫শে মে ২০১৭, বৃহঃস্পতিবার
| দুপুর ১২:৩২
গদ্য
আফিফা মোহসিনা অরণি।। কবি কাজী নজরুল ইসলামের আজ ১১৮তম জন্মদিন। মাত্র ২৩ বছর লেখনী জীবনের মধ্য দিয়ে বাঙালী হৃদয়ে শক্তপোক্ত জায়গা করে নিয়েছেন এই বিদ্রোহী কবি। কাজী নজরুল গান খুব ভালোবাসতেন। তিনি নিজেও প্রচুর গান গাইতেন। হয়তো কেউ কোনো বিশেষ ধাঁচের গান নজরুলকে লিখতে বললেন, তাঁরও পছন্দ হলো, অমনি কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনি গান লিখে হাজির হয়ে গেলেন- এমনি ছিল তাঁর গান রচনার প্রতিভা।
আজ এরকমি দুইটি ঘটনা উল্লেখ করব যা দিয়ে নজরুলের প্রতিভার কিছুটা নমুনা পাঠক পাবেন।
ঘটনা ১। গজল লেখার ইতিহাস-
গ্রামোফোন কোম্পানীতে নজরুল তখন খুব ব্যস্ত সময় কাটাতেন। চারিদিকে শিল্পীদের ভীড়। তিনি লিখে চলেছেন অবিরাম, সুর করে শিল্পীদের শিখিয়েও দিচ্ছেন লাগাতার। একদিন সেই কোম্পানীতে শিল্পী আব্বাস উদ্দীন এসে কবিকে বললেন, “পাশের রুমে পিয়ারু কাওয়াল উর্দু কাওয়ালী গানের রিহার্সাল দিচ্ছে। বাজারে সেসব গান খুব চলছে। আপনি বাংলায় এমন ধাঁচের কিছু গান লিখুন”। কোম্পানীর বাঙালী সাহেবের আপত্তি থাকায় নজরুলের সেই ধরণের গান লেখা হলোনা। প্রায় এক বছর পর একদিন বাঙালী সাহেব রাজি হলেন। আব্বাস উদ্দীন ছুটে গিয়ে নজরুলকে সেই খবর দিতেই নজরুল এক ঠোঙা পান নিয়ে একটি আলাদা ঘরে গিয়ে ঢুকলেন। মাত্র পনেরো থেকে বিশ মিনিট পর নজরুল আব্বাস উদ্দিনের হাতে ধরিয়ে দিলেন বিখ্যাত গজল, “ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ”। শুধু তাই নয়, সাথে সাথেই আব্বাস উদ্দিনকে গানের সুরও ধরিয়ে দিলেন। ঠিক তার পরদিন নজরুল লিখলেন, “ইসলামের ঐ সওদা লয়ে এলো নবীন সওদাগর”। চারদিন পর গজল দুটো রেকর্ড হল এবং বাজার মাত হয়ে গেল। এভাবে শুরু হল নজরুলের গজল লেখা। এই গজলগুলো আজো কোটি বাঙালী হৃদয়ে দাগ কাটে। যতদিন বাংলায় সাহিত্য-সংষ্কৃতি বেঁচে থাকবে, নজরুলের গানও ততদিন বেঁচে থাকবে।
ঘটনা ২।
নজরুল তখন ইসলামি হামদ, নাত, গজল রচনা শুরু করেছেন। শিল্পী আব্বাস উদ্দিন অনেক খোঁজাখুঁজি করে নজরুলকে না পেয়ে একদিন সকালে তাঁর বাসায় গিয়ে হাজির হলেন। গিয়ে দেখলেন নজরুল গভীর মনোযোগ দিয়ে কি যেন লিখছেন। ইশারায় আব্বাসউদ্দিনকে বসতে বললেন নজরুল। অনেকক্ষন বসে থাকার পর জোহরের নামাজের সময় হলে আব্বাস উদ্দিন ছটফট করতে লাগলেন ।
নজরুল বুঝতে পেরে তাঁর অস্থিরতার কারন জানতে চাইলেন। আব্বাস উদ্দিন বললেন “আমার জোহরের নামাজ পড়তে হবে। আর এসেছি একটা ইসলামি গজল নেবার জন্য। গজল না নিয়ে আজ যাচ্ছি না”। নজরুল তাড়াতাড়ি একটি পরিস্কার চাদর বের করে বিছিয়ে দিলেন আব্বাস উদ্দিনের সামনে। নামাজ শেষ করার সাথে সাথে নজরুল আব্বাস উদ্দিনের হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে দিলেন যেখানে ছিল নজরুলের সেই বিখ্যাত গজল, “হে নামাজী আমার ঘরে নামাজ পড় আজ, দিলাম তোমার চরণ তলে হৃদয় জায়নামাজ”।
মাত্র কয়েক মিনিটে জন্ম নেওয়া এসব গান ও গজল এর মহিমা ডিঙাতে পারেনি আজও কোন কবি কিংবা শিল্পীর গান।
পরবর্তী খবর হাস্যরসে উজ্জ্বল নজরুল