পপগুরুর ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী


ই-বার্তা প্রকাশিত: ৫ই জুন ২০১৭, সোমবার  | রাত ০৯:৩৪ সংগীত

বিনোদন ডেস্ক ।। সাধারণ জীবনযাপন করা অসাধারণ কণ্ঠের এক সংগীত জাদুকর।যার গানের জাদুতে, গায়কির নৈপুণ্যে মুগ্ধ সংগীতপ্রেমী কোটি বাঙালি।ব্যতিক্রমী গানের ধারা, কন্ঠ আর গায়কি দিয়ে যে মানুষটি আমাদের দেশীয় সংগীতে যোগ করেছিলেন ভিন্ন এক মাত্রা তিনি হলেন পপগুরু আজম খান।

এমনকি ভিন্ন ভাষাভাষী অগণিত মানুষের কাছেও দারুণ সমাদৃত একজন সংগীতশিল্পী তিনি।আজ এ কিংবদন্তির ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী।দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১১ সালের এই দিনে পৃথিবী ছেড়ে তিনি চিরতরে চলে যান। বাংলা পপসংগীতের অবিসংবাদিত সম্রাট আজম খান।

যাকে বলা হয়ে থাকে পপগুরু। তার কণ্ঠে উন্মোচিত হয়েছিল বাংলা গানের এক অন্যধারা। দেশীয় পপগানের আকাশে তিনি ঘটিয়েছিলেন নতুন সূর্যোদয়। যে কারণে বাংলাদেশের পপসংগীতাঙ্গনের সব তারকা বিনা দ্বিধায় ভালবাসা আর অসীম শ্রদ্ধায় তাকে বসিয়েছেন পপগুরুর আসনে।অপরাজেয় এই যোদ্ধা অস্ত্র হাতে লড়াই করেছিলেন দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য।জীবন বাজি রেখে ছিনিয়ে এনেছিলেন বিজয়।

আজম খানের জন্ম ১৯৫০ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার আজিমপুর কলোনির ১০নং সরকারি কোয়ার্টারে। তার পুরো নাম মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান। বাবা আফতাবউদ্দিন আহমেদ ও মা জোবেদা খাতুন।১৯৫৫ সালে প্রথমে আজিমপুরের ঢাকেশ্বরী স্কুলে বেবিতে ভর্তি হন। এরপর ১৯৫৬ সালে কমলাপুরের প্রভেনশিয়াল স্কুলে প্রাইমারিতে ভর্তি হন।

তারপর ১৯৬৫ সালে সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুলে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন তিনি। এই স্কুল থেকে ১৯৬৮ সালে মেট্রিক পাস করেন। ১৯৭০ সালে টিএন্ডটি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন। মুক্তিযুদ্ধের পর পড়ালেখায় আর অগ্রসর হতে পারেননি। ১৯৫৬ সালে তার বাবা কমলাপুরের জসিমউদ্দিন রোডে বাড়ি বানান। এরপর থেকে সেখানে বসতি তাদের।

১৯৮১ সালে ১৪ই জানুয়ারি সাহেদা বেগমের সঙ্গে বিয়ে হয় আজম খানের। তখন তার বয়স ছিল ৩১ বছর। সহধর্মিণী মারা যাওয়ার পর থেকে একাকী জীবন কাটান তিনি। আজম খান দুই মেয়ে এবং এক ছেলের জনক। বড় মেয়ে ইমা খান, মেজো ছেলে হৃদয় খান ও ছোট মেয়ে অরণী খান।

এ ছাড়া আছেন চার ভাই, এক বোন।পপসম্রাট আজম খান ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তখন তিনি ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে গণসংগীত প্রচার করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন সক্রিয়ভাবে।

মাত্র ২১ বছর বয়সে যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। সে সময় তার গান সহযোদ্ধাদের প্রেরণা জুগিয়েছিল। কুমিল্লার সালদায় প্রথম সরাসরি যুদ্ধ করেন। আজম খান ছিলেন দুই নম্বর সেক্টরের একটি সেকশনের ইনচার্জ। আর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল খালেদ মোশাররফ। তিনি সেকশন কমান্ডার হিসেবে ঢাকা ও এর আশপাশে বেশ কয়েকটি গেরিলা আক্রমণে অংশ নেন।

এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল তার নেতৃত্বে সংঘটিত অপারেশন তিতাস। মুক্তিযুদ্ধে সর্বশেষ মাদারটেকের কাছে ত্রিমোহনীতে সংঘটিত যুদ্ধে পাক সেনাদের পরাজিত করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তার ব্যান্ড উচ্চারণ এবং আখান্দ ভ্রাতৃদ্বয় (লাকী আখান্দ ও হ্যাপি আখান্দ) দেশব্যাপী সংগীত জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে।

১৯৭২ সালে বন্ধু নিলু আর মনসুরকে গিটারে, সাদেককে ড্রামে আর নিজেকে প্রধান ভোকাল করে অনুষ্ঠান শুরু করেন। ওই বছরই তার গাওয়া এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে আর চার কালেমা সাক্ষী দেবে গান দুটি সরাসরি প্রচার করা হয় বিটিভিতে।ব্যাপক প্রশংসা আর তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দেয় এ দুটি গান।দেশজুড়ে পরিচিতি পেয়ে যায় তাদের ব্যান্ড।

আজম খান ১৯৭৪-১৯৭৫ সালের দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে রেললাইনের ওই বস্তিতে শিরোনামে গান গেয়ে হইচই ফেলে দেন।

শুধু সংগীতেই নয়, মিডিয়ার অন্যান্য ক্ষেত্রেও তার বিচরণ ছিল সাবলীল। ১৯৮৬ সালে কালা বাউল নামে হিরামনের একটি নাটকে কালা বাউলের চরিত্রে এবং ২০০৩ সালে শাহীন-সুমন পরিচালিত গডফাদার চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। ২০০৩ সালে ক্রাউন এনার্জি ড্রিংকসের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রথম মডেল হন।

এরপর ২০০৫ ও ২০০৮ সালে বাংলালিংক এবং ২০১০ সালে কোবরা ড্রিংকসের বিজ্ঞাপন করেন।আরেকটি পরিচয়ে তার বেশ সুনাম ছিল। ক্রিকেটার আজম খান। গোপীবাগ ফ্রেন্ডস ক্লাবের হয়ে ১৯৯১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি প্রথম বিভাগে ক্রিকেট খেলেছেন। আজম খান নেই। কিন্তু তার কালজয়ী সব গান সংগীতপ্রেমীদের হৃদয়ে দোলা দিয়ে যাবে অনন্তকাল।


ই-বার্তা/ এমএফএইচ

সর্বশেষ সংবাদ

সংগীত এর আরও সংবাদ