পাসপোর্ট পেতে ঘুষ-দুর্নীতির শিকার ৫৫ শতাংশ মানুষ
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ২১শে আগস্ট ২০১৭, সোমবার
| বিকাল ০৪:৩৬
অপরাধ
ই-বার্তা ।। ৫৫ শতাংশ মানুষই পাসপোর্ট তৈরি করতে গিয়ে দুর্নীতির শিকার হচ্ছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
এর মধ্যে তথ্য যাচাই বা ভেরিফিকেশনের সময় শতকরা ৭৫ দশমিক ৩ জন গ্রাহকের কাছ থেকে এসবি (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) পুলিশ ঘুষ বা নিয়ম-বহির্ভূত অর্থ আদায় করে থাকে।
এক্ষেত্রে,ভেরিফিকেশনের জন্য পাসপোর্ট গ্রাহকরা গড়ে কমপক্ষে ৭৯৭ টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
পাসপোর্ট সেবায় সুশাসন, চ্যালেঞ্জ ও করণীয় শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দুর্নীতি বিরোধী বেসরকারি সংস্থা টিআইবি।
সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে সংস্থাটির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
এ সময় টিআইবি চেয়ারপার্সন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও গবেষণা প্রতিবেদনটির পরিচালক মো. শাহনূর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, টিআইবির প্রোগ্রাম ম্যানেজার রিসার্চ ও পলিসি মো. শাহনূর রহমানের নেতৃত্বে দেশের ২৬টি জেলায় পরিচালিত এক সমীক্ষার ভিত্তিতে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়।
গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে সিলেট অঞ্চলের গ্রাহকরা সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন। অন্যদিকে রাজশাহী অঞ্চলের গ্রাহকরা কম দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন।
সুলতানা কামাল বলেন, ২০১৫ সালে পাসপোর্ট দুর্নীতির বিষয়ে টিআইবি আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করেছিল। ওই প্রতিবেদনের কিছু সুপারিশ পাসপোর্ট অধিদফতর ও সরকার আমলে দুর্নীতি কমেছে।
বর্তমান গবেষণা প্রতিবেদনের বরাতে তিনি জানান, পাসপোর্টে দুর্নীতির ক্ষেত্রে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে।
তবে এখনও পাসপোর্ট করতে গিয়ে বিদেশগামী শ্রমিকরাসহ সাধারণ মানুষ সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়মের শিকার হচ্ছেন।
বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তাদের স্বজনরা সহজে পাসপোর্ট পেলেও সাধারণ মানুষকে পাসপোর্ট পেতে ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হয় বলে জানান টিআইবির এ চেয়ারপার্সন।
এসব ভোগান্তির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, কিছু মানুষ নিয়ম বহির্ভূত সুবিধা পাচ্ছে, এ কারণেই সাধারণ মানুষ সুবিধা পায় না।
পাসপোর্ট অফিসগুলোকে ঘিরে দালালদের উৎপাত ও দুর্নীতি প্রসঙ্গে সুলতানা কামাল বলেন, পাসপোর্ট অফিসের ভেতরে থেকেই কর্মকর্তারা দুর্নীতি প্রশ্রয় দেন, এ কারণেই দালালদের তৎপরতা বন্ধ করা যায় না।
তিনি অভিযোগ করেন, বিভিন্ন কাগজপত্র সত্যায়িত করার জন্য অনিয়ম দুর্নীতির ক্ষেত্রে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাইরের ফটোকপির দোকানের যোগাসাজশ রয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।
এর মধ্যে পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন ও সত্যায়নের নিয়ম পুরোপুরি বাদ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রাহকের তথ্য যাচাইয়ে পুলিশ ভেরিফিকেশনের নিয়ম তুলে দেয়ার পক্ষে পুলিশসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একাংশ সম্মত রয়েছেন। কিন্তু একাংশ এই নিয়ম বহাল রাখতে চান, আর এ কারণে ভেরিফিকেশনের প্রথা তুলে দেয়া যাচ্ছে না।
এছাড়া পাসপোর্ট নবায়ন বা রিনিউ করার মেয়াদ দশ বছর করার সুপারিশ করেছে টিআইবি। সংস্থাটির মতে, বর্তমানে পাঁচ বছর পর পর পাসপোর্ট নবায়ন করতে গিয়ে গ্রাহকদের দুর্নীতির শিকার হতে হয়। যদি এর মেয়াদ দশ বছর করা হয় তাহলে এমনিতেই দুর্নীতি কমে যাবে।