নতুন সংকটে বন্যা কবলিত মানুষ
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ৯ই সেপ্টেম্বর ২০১৭, শনিবার
| বিকাল ০৪:৫৩
বিশেষ প্রতিবেদন
ই-বার্তা।। আকরাম হোসেন।। চলতি বছর চরমভাবে বন্যায় আক্রান্ত হয় বাংলাদেশ। উজানের পানি, ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সারাদেশে প্রায় ৩২ টির মত জেলাতে বন্যা হয়। অনেক স্থানে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পানিবন্দি হয়ে পড়ে লাখো মানুষ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী আগষ্ট মাসে, বন্যায় ৭৯ লাক্ষ ৫৮ হাজার আটশত ৩৩ জন আংশিক এবং ২ লক্ষ ৫৮ হাজার পাঁচ শত ৯৯ জন মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মোট ৬ লাক্ষ ৫ হাজার ৯ শত ৫৫ হেক্টর ফসলী জমি নষ্ট ও ১৪৫ জনের মৃত্যু হয়। এখন বন্যার পানি অনেকাংশেই নেই। কিন্তু বন্যার পরবর্তী সময়ে নতুন নতুন সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে বন্যা কবলিত মানুষ।
বন্যার সময় যে সব মানুষ আশ্রয়কেদ্রে, আত্নিয় স্বজনরে বাড়ি, উঁচু স্থান, রেল লাইল, রাস্তার পাশে, বেড়িবাঁধসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছিল, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে তারা নিজ বাড়িতে ফিরেছে। নিজ বাড়িতে ফিরলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছে না। অন্যদিকে বন্যার সময় যারা নিজ বাড়িতে ছিলেন সেই সব মানুষও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছে না। বিশেষ করে অর্থনৈতিক দিক থেকে চরমভাবে পিছিয়ে পরেছে।
বন্যার ফলে কাচাঁ ঘরবাড়ির যেমন ক্ষতি হয়েছে, তেমন কোথাও কোথাও পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে, কোথাও নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। জমির ফশল নষ্ট হয়েছে, নষ্ট হয়েছে জমাকৃত খাদ্য দ্রব্য, গবাদি পশু মারা গেছে অথবা অনেক কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। অর্থনীতি দিকটা পুরোপুরি
ধ্বংশ হয়েছে। পাশাপাশি নতুন নতুন রোগের আর্বিভাব হচ্ছে।
বন্যার পরবর্তী সমস্যার ব্যাপারে কথা হয় কৃষ্ণ কুমার সরকারের সাথে। স্থানীয় এই ব্যক্তি অন্যদের সঙ্গে নিয়ে নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন সময়ে গাইবান্ধার বন্যা কবলিত মানুষদের সহযোগীতা করেছেন তিনি। তিনি জানান, বন্যা থেকে বন্যার পরবর্তী সময়ের সংকট আরো তীব্র। বন্যার সময় সরকারি ভাবে ১ হাজার টাকা ও ১০ কেজি চাল পেয়েছিল গাইবান্ধার মানুষ, পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন বা ব্যক্তিগত উদ্যোগেও কিছু ত্রাণ পেয়েছে। কিন্তু বন্যার পরে আর কোন ত্রাণ বা সাহায্য পাচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, এক বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ বেশি দিন থাকে না। যার ফলে বন্যার্র পরবর্তী সময়েও অনেকেরই দিন কাটছে অনাহারে। তাদের হাতে কোন মূলধন নেই যার কারণে নতুন করে শুরু করতে পারছে না কৃষিকাজ। পারছে না বাড়ি-ঘর ঠিক করতে। নদী ভাঙ্গনে যে সমস্ত মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে তাদের অববস্থা আরো শোচনীয়, কেউ কেই রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে রয়েছে। এদের পুনর্বাসন দরকার। পাশাপাশ নদী ভাঙ্গন রোধে সরকারে পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন সাথে সাথে প্রকৃতিক দুর্যোগের সম্ভবনাও বাড়ছে। সময়ে সাথে তাল মিলিয়ে যদি বন্যা মোকাবেলা ও নদী ভাঙ্গন রোধে দীর্ঘ মেয়াদি কোন পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে প্রতি বছরই বন্যা, নদী ভাঙ্গনের মত প্রকৃতিক দুর্যোগের আশংকা বাড়তে থাকবে। হাজার হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হবে। সরকারের উচিৎ এই সব ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।