যানজটের নগরীতে অসহায় রোগীর জীবন


ই-বার্তা প্রকাশিত: ১১ই এপ্রিল ২০১৭, মঙ্গলবার  | বিকাল ০৩:৩৬ বিশেষ প্রতিবেদন

আফিফা মোহসিনা অরণি।। ঢাকা শহরে ভোগান্তির বিরুদ্ধে টিকে থাকাটা বড়ই কষ্টসাধ্য। এই ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। যানজট হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষের ভোগান্তির সবথেকে বড় উদাহরণ। সাধারণ মানুষ তো আছেনই, কিন্তু সব থেকে বেশি কষ্ট যাঁদের করতে হয়, তাঁরা হলেন এ্যাম্বুলেন্সে যাতায়াত করা অসুস্থ ও মুমুর্ষু রোগী। যে এ্যাম্বুলেন্স মানুষের জীবন বাঁচাতে রাস্তায় নামে, সেটিই যদি শিকার হয় এই ভোগান্তির তবে অসুস্থ রোগীটির জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। ঢাকা শহরে দৈনিক অসংখ্য রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার মত অবস্থায় পড়তে হয়। কিন্তু মাঝপথে তাঁদের সম্মুক্ষীণ হতে হয় ট্রাফিক জ্যাম নামের এক কঠিন সমস্যার। শহরের ব্যস্ততম সড়কগুলোতে পিছিয়ে পড়ে থাকে এমনই কিছু যান, যা হয়তো এই কঠিন সমস্যার সম্মুক্ষীণ না হলে একটি হলেও প্রাণ বাঁচাতে পারত।

যানজট, প্রাইভেট কার-এর আধিক্য এবং কিছু আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাফিলতির কারণে ভুগতে হচ্ছে এ্যাম্বুলেন্সের এবং তার যাত্রীদের। ঘন্টার পর ঘন্টা পড়ে থাকতে হচ্ছে এই যানযটে। এছাড়া দেশের এ্যাম্বুলেন্স গুলোতেও চিকিৎসা সেবার তেমন কোন সরঞ্জাম নেই। তাই রোগীদের আরও বেশি ভুগতে হচ্ছে যানজট নামক এই বাঁধায়। দৈনন্দিন জীবনে এমন সমস্যার সম্মুক্ষীণ হওয়া কিছু মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেল তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ ট্রাফিক পুলিশ এবং তাদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিয়ে। কি করে এর থেকে মুক্তি সম্ভব সে সম্পর্কেও বলেছেন তাঁরা।

ফজলুল হক নামের এক এ্যাম্বুলেন্স চালকের সাথে কথা বলে জানা যায় তার ভোগান্তির কিছু কথা, তিনি জানান কিছু কিছু ট্রাফিক পুলিশ অসাধু উপায়ে তাঁদের কাছ থেকে এ্যাম্বুলেন্সের প্রতিটি সিটের জন্য চার্জ করে এবং টাকা আদায় করে। আর যখন রাস্তা দিয়ে ভি আই পি গাড়ী যায় তখন তাদের আটকা পড়ে থাকতে হয় অনেকক্ষণ। এসময় অনুরোধ করেও তাঁদের রোগী নিয়ে যেতে দেয়া হয়না। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, “একদিন আমি এক রোগী নিয়ে কুমিল্লা থেকে আসতেছিলাম তখন পুলিশ আমাকে বললো রোগী মারা গেলে যাক এতে তাদের কিছুই করার নেই।“
ঢাকা মেডিকেল কলেজের এ্যাম্বুলেন্স চালক শফিক কে যানজট নিয়ে কি ধরণের সমস্যায় পড়তে হয় জিগ্যেস করলে তিনি বলেন, “প্রাইভেট গাড়ী গুলো আমাদের মোটেও সাইড দেন না, এমনকি গাড়ীতে মুমুর্ষ রোগী থাকা অবস্থাতে সাইরেন বাজালেও না। মাঝে মাঝে পুলিশ আমাদের গাড়ী থামিয়ে কাগজপত্র দেখেন। আমাদের গাড়ীতে মুলত লাইফ সাপোর্টে থাকা রোগীরাই থাকেন, কিন্তু তার পরেও প্রাইভেট গাড়ীগুলো বা ট্রাফিক পুলিশ আমাদের কোনোই সাহায্য করেন না।“

তবে আরেকজন এ্যাম্বুলেন্স চালক শামীম এর ভাষ্য থেকে জানা যায় ট্রাফিক পুলিশের সাহায্য তিনি পেয়ে থাকেন। “ট্রাফিক পুলিশ আমাদের যানযটে পড়লে সাহায্য করে কিন্তু প্রাইভেট গাড়ীগুলো আমাদের মোটেও গুরুত্ব দেয় না এবং আমাদের যেতেও দেয় না। ভি আই পি গাড়ী যাওয়ার সময় পুলিশ তখনই আমাদের যেতে দেয় যখন আমরা প্রথম সারিতে দাঁড়ায় থাকি।“

একজন ট্রাফিক কর্মকর্তাকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “ যদি আমরা যানযটের ভিতরে কোনো এ্যাম্বুলেন্স দেখি বা সাইরেন শুনতে পাই তবে রাস্তা দিয়ে যতই ভি আই পি গাড়ী যাক না কেন আমরা সেই ভি আই পি গাড়ীর রাস্তা বন্ধ করে দেই। যদি আমরা এ্যাম্বুলেন্সের সামনে কোণ প্রাইভেট গাড়ী দেখি তাহলে প্রাইভেট গাড়ীটি সহ এ্যাম্বুলেন্সটিকে যেতে দেই এবং যদি আমরা দেখি কোনো এ্যাম্বুলেন্স যানযটে পিছনে পড়ে আছে তাহলে আমরা তাদের উল্টো পথ দিয়ে যাওয়ারও সুবিধা করে দেই। এ্যাম্বুলেন্সে যদি কোনো রোগী থাকে তবে আমরা সেই গাড়ী আর থামাই না”।

বেলাল নামের একজন পথচারী বলেন, যখন তার এ্যাম্বুলেন্স সাইরেন দিয়ে আসছিলো তখন প্রাইভেট গাড়িগুলো তাদের পাড় হবার কোনো সু্যোগই দিচ্ছিলো না এবং তাকে ভিন্ন পথ নির্বাচন করতে হয়েছে হাসপাতালে পৌছানোর জন্য। তিনি এইরকম সমস্যার সম্মুক্ষীণ অতীতেও দুবার হয়েছিলেন। “আমি খামারবাড়িতে দুইবার এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আটকে ছিলাম একটি ভি আই পি গাড়ীর জন্য“, বলছিলেন বেলাল।

দৈনন্দিন জীবনে অনেক মানুষকে এই সকল সমস্যার সম্মুক্ষীণ হতে হচ্ছে। তারা এই সমস্যা গুলো ঠেকে উত্তীর্ণ হবার নানান চেষ্টা চালিয়ে গেলেও ব্যর্থ হচ্ছেন। সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার অংশ হয়ে গিয়েছে এই যানযট। দেশের পুলিশ-প্রশাসন এবং সরকারের নিকট সকলেরই চাওয়া যত দ্রুত সম্ভব এই দুরাবস্থা হতে সকলকে মুক্তি দেয়া হোক। আমরা যদি একটু সচেতন হই তবে দৈনিক বেঁচে যেতে পারে অনেক প্রাণ।

[ছবিঃ সংগৃহীত]
[তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছেন, আশফাক আহমেদ শিহাব]

সর্বশেষ সংবাদ

বিশেষ প্রতিবেদন এর আরও সংবাদ