নতুন ‘স্বর্ণমানব’ এর সন্ধান
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ১০ই অক্টোবর ২০১৭, মঙ্গলবার
| বিকাল ০৩:২৭
অপরাধ
ই-বার্তা ।। এবার বেনাপোলে ‘স্বর্ণমানব’ এর উপাধি পেলেন কুমিল্লার মাইন উদ্দিন ! শাহজালাল ও শাহ আমানত বিমানবন্দরের পরে এবার দেশের প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোলে স্বর্ণমানবের সন্ধান পাওয়া গেছে!
শুল্ক গোয়েন্দার দল আজ ৯-১০-১৭ তারিখ সকাল থেকে দীর্ঘ নাটকীয়তার পর দুপুরে এই স্বর্ণমানবের কাছ থেকে ১০ টি স্বর্ণ বার উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
আটক স্বর্ণমানবের নাম মাইন উদ্দিন, বয়স: ২৬ বছর, পিতা: মৃত মকবুল হোসেন, বাড়ি: মুরাদনগর, কুমিল্লা। পাসপোর্ট নম্বর: BL 0501595
তিনি ভারতে যাবার উদ্দেশ্যে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে আসেন।
শুল্ক গোয়েন্দা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উক্ত যাত্রীকে নজরদারিতে রাখে।
কাস্টমস এবং ইমিগ্রেশন আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে সীমান্ত পেরিয়ে চলে যাওয়ার সময় ট্রাভেল ট্যাক্স চেকিং পয়েন্টে তাকে চ্যালেঞ্জ করে শুল্ক গোয়েন্দা।
জিজ্ঞাসাবাদকালে তার হাটাচলায় অস্বাভাবিকতা লক্ষ করলে শুল্ক গোয়েন্দার সন্দেহ আরো ঘণীভূত হয়। তবে স্বর্ণমানব কোনোভাবেই তার পেটে স্বর্ণ থাকার কথা স্বীকার করছিলেন না।
পরে তাকে বেনাপোল চেকপোস্টে শুল্ক গোয়েন্দার অফিসকক্ষে নিয়ে আসা হয় বিশদ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।
কিন্তু তিনি বারংবার তার কাছে স্বর্ণ থাকার কথা অস্বীকার করতে থাকেন।
এক পর্যায়ে তিনি তার আত্মীয় বড় কর্মকর্তা এই বলে হুমকিও দিতে থাকেন। ছাড়া পেয়ে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দেখে নেবেন বলেও সতর্ক করেন।
কিন্তু ব্যক্তির শরীরে স্বর্ণ থাকার ব্যাপারে শুল্ক গোয়েন্দার কাছে নিশ্চিত তথ্য থাকায়, কর্মকর্তারা অনমনীয় থাকেন।
নিজে থেকে বের না করে দিলে যাত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে অপারেশন করে তলপেট কেটে স্বর্ণ বের করা হবে বলার পরে তিনি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
তার কপালে দেখা যায়, বিন্দু বিন্দু ঘাম। কিছুক্ষণ চিন্তার পরে তিনি পূর্বের তুলনায় নমনীয় কণ্ঠস্বরে তার শরীরে স্বর্ণ থাকার কথা স্বীকার করেন এবং অপারেশন ছাড়াই স্বর্ণ বের করে দিবেন বলে ওয়াদা করেন।
এরপর চলে শরীর থেকে স্বর্ণ বের করার পালা।
যাত্রীকে বেনাপোলে শুল্ক গোয়েন্দা অফিসে নিয়ে এসে কলা ও প্যাকেট জুস খেতে দেয়া হয়। আরও দেয়া হয় লুঙ্গি। লুঙ্গি পরে শুল্ক গোয়েন্দাদের
উপস্থিতিতে টয়লেটের অভ্যন্তরে বিশেষ কায়দায় পায়ুপথ দিয়ে একে একে ৫টি ছোট প্যাকেট বের করে আনেন ২৬ বছরের যুবক মাইন উদ্দিন।
বের করা ৫টি প্যাকেটের ভিতর থেকে ২টি করে মোট ১০টি স্বর্ণবার পাওয়া যায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, যাত্রী দুটি করে গোল্ডবার স্কচ টেপ দিয়ে পেঁচিয়ে একটি প্যাকেট বানিয়ে রেক্টামে প্রবেশ করান। এ রকম ৫টি প্যাকেট প্রবেশ করান যাত্রী।
বেনাপোলে এসে বাস থামার পর বাথরুমে গিয়ে যাত্রী প্যাকেটগুলো পায়ুপথে পুশ করেন। এজন্য ঢাকার উত্তরায় বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন তিনি।
শুল্ক গোয়েন্দাদের নজরদারির হাত থেকে বাঁচার জন্য এই অভিনব পদ্ধতি গ্রহণ করেন বলে তিনি জানান।
কারণ হিসেবে মাইন উদ্দিন জানান যে সম্প্রতি এই বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশের প্রাক্বালে বেশ কয়েকজন স্বর্ণ চোরাকারবারিকে বেনাপোল শুল্ক গোয়েন্দার দল আটক করেছে। তাই জীবনের ঝুঁকি থাকলেও অতিরিক্ত মুনাফার লোভে তিনি এই পন্থা অবলম্বন করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানান তিনি একজন খুচরা কসমেটিক্স ব্যবসায়ী। ভারত থেকে কসমেটিক্স এনে তিনি তার এলাকায় বিক্রয় করেন।
পাসপোর্ট পরীক্ষায় দেখা যায়, এই ২০১৭ সালে তিনি ৭ বার ভারত ভ্রমণ করেছেন।
১০টি স্বর্ণবারের প্রতিটির ওজন ১০০ গ্রাম, মোট ওজন ১ কেজি। আটক স্বর্ণের মুল্য প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা।
আটক স্বর্ণমানব মাইন উদ্দিনকে চোরাচালানের দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
আটককৃত স্বর্ণ বেনাপোল কাস্টমস গুদামে জমা করা হবে।
এর আগেও শুল্ক গোয়েন্দা ঢাকার শাহজালাল ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে অনেক স্বর্ণমানবের সন্ধান পেয়েছে।
তবে ভারতে পাচারের সময় সীমান্তে স্বর্ণমানব আটকের ঘটনা এবারই প্রথম।
বিষয়টি সীমান্তের স্থানীয় জনগণের মধ্যে বেশ কৌতুহল ছড়িয়েছে। অনেকের ভাষ্যমতে এ ধরণের ঘটনা তাঁদের কাছে একেবারেই অস্বাভাবিক।
স্বর্ণ প্রসবের এই ঘটনায় কেউ কেউ আবার এই যুবককে স্বর্ণমানব হিসেবে আখ্যায়িত করলেন।
আগের খবর তিন শিশুসহ খাদিজার আত্মসমর্পণ