পলক- একজন মহামানবী
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ১৪ই অক্টোবর ২০১৭, শনিবার
| দুপুর ০১:২৭
সংগীত
ই-বার্তা।। পলক মুচ্ছল। একটি নাম। বয়স মাত্র ২৪। কিন্তু হাজার বছর বেঁচেছেন এই ২৪ বছর বয়সেই। অন্যভাবে বলা যায়, হাজারবার জন্ম নিয়েছেন তিনি। এই অল্প বয়সেই হাজার খানিক জীবন বাঁচিয়েন মানুষটি শুধু গান গেয়ে।
২০১৬ পর্যন্ত গান গেয়ে অর্থ সংগ্রহ করে বাঁচিয়েছেন ১৩৩৩ জন শিশুকে। যাদের সকলেই হার্ট এর অসুখে ভুগছিল। এদের সবাইকে অপারেশন এর মাধ্যমে সুস্থ্ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভারতের প্রায় সকল শহরসহ পৃথিবীর অনেকগুলো দেশে মঞ্চে গান পরিবেশন করে অর্থ সংগ্রহ করেছেন তিনি। সেই অর্থ দিয়ে বাঁচিয়েছেন হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের এবং এখনো বাঁচাচ্ছেন। এই বিশেষ অবদানের জন্য ইতোমধ্যেই গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস এবং লিমকা বিশ্ব রেকর্ড এ নাম উঠেছে এই অনবদ্য এবং অনন্য পলকের। এছাড়াও ভারতীয় নানা পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
আরো অবাক করার মত ঘটনা হোলো, মাত্র ১১ বছর বয়সে পলক ১০০ এর বেশি হৃদরোগে আক্রান্ত বাচ্চাকে অপারেশনের মাধ্যমে সুস্থ্য করে তুলেছেন। শুধু তাই নয়, অপারেশন এর সময় সে অপারেশন থিয়েটারের রোগীর পাশে দাঁড়িয়ে থেকে প্রার্থনা করতন। ডাক্তাররা তাঁকে অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করার অনুমতি দিয়েছিলেন। ছোট্ট অ্যাপ্রোন পড়ে ছোট্ট একটি মেয়ে অপারেশন থিয়েটারে প্রার্থনা করছে, এর থেকে সুন্দর দৃশ্য আর কি হতে পারে?
এই কাজের বিনিময়ে পলক কখনোই সুস্থ হওয়া শিশুর পরিবারের কাছ থেকে কিছুই নিতন না একটি পুতুল ছাড়া। সৃষ্টিকর্তা তাকে পাঠিয়েছেন বুঝি এই কাজের জন্যই। তাইতো সংগীত এর ছোঁয়া নেই এমন একটি পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেও নিজের কণ্ঠ দিয়ে বাঁচাচ্ছেন হাজারো দরিদ্র শিশুদের।
চাকুরীজীবী বাবা আর গৃহিণী মা বাবার কোলে ১৯৯২ সালের ৩০ মার্চ মাসে প্রথম সন্তান হিসেবে ভারতের মধ্য প্রদেশ এর ইন্দোর শহরে জন্ম গ্রহণ করেন পলক মুচ্ছল। একটি ছোট ভাইও রয়েছে তার। বর্তমানে পরিচয় তার বলিউডের প্লেব্যাক সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে।
পলকের বয়স তখন আড়াই বছর, হঠাৎ একদিন পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানে সবাই যখন কিছু না কিছু পরিবেশন করছে তখন ছোট্ট পলক মঞ্চে উঠে একটি গান পরিবেশন করলো। পলকের মা তখন থেকেই সিদ্ধান্ত নিলেন তাকে গান শেখাবেন। চার বছর বয়সে সে আনন্দ কল্যাণজি লিটল স্টার নামের সংগঠনের সদস্য হলো।
১৯৯৯ সালে ভারতে শুরু হল কারগিল যুদ্ধ। পলকের বয়স তখন সাত। পলকের মা তাকে পত্রিকা থেকে যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং সৈনিকদের
দুর্দশার কথা পড়ে শোনাতেন। সেই বয়সেই কোমল হৃদয় কেঁদে উঠলো পলকের। ভাবল শুধু ঘরে বসে না থেকে তার কিছু করতে হবে। একটি দানবাক্স নিয়ে দোকানে দোকনে গিয়ে বলল, "আমি আপনাদের একটি গান শোনাবো। বিনিময়ে আপনার যা খুশি কিছু এই বাক্সে দান করবেন"। মেয়েটি গান গেয়ে গেয়ে সেই সময়ে ২৫ হাজার ভারতীয় টাকা সংগ্রহ করলো এবং সুনির্দিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে সেটি জমা দিলো। এই খবরটি স্থানীয় মিডিয়ায় ব্যাপক সাড়া ফেলে। মেয়েটি পায় সামনে চলার এক অনুপ্রেরণা।
একই বছর ভারতের অঙ্গরাজ্য ওড়িশ্যায় সাইক্লোনে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্যও গান গেয়ে অর্থ সংগ্রহ করে পলক। এগুলো হল তার শুরুর গল্প। পাশাপাশি সে প্রায় দেখতো তার বয়সী ছেলে মেয়েরা নিজের পড়নের পোশাক দিয়ে ট্রেনের বগি, গাড়ি প্রভৃতি ধোয়া মোছা করে। তখন তার মনে ভাবনার উদয় হয়েছে যে, সে তার কণ্ঠ দিয়ে মানুষের সাহায্য করবে। সে তার বাবা মাকে তার এই ইচ্ছার কথা জানালে তারা স্বানন্দে গ্রহণ করে।
কাকতালীয়ভাবে সেই সময়কালে ইন্দোরের একটি স্কুলের একজন শিক্ষক তার স্কুলের লোকেশ নামের একজন হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসার জন্য পলকের পরিবারের কাছে সাহায্যের জন্য আসে। তখন মেয়েটি লোকেশের জন্য একটি ভ্রাম্যমাণ মঞ্চ করে সেখানে গান গেয়ে অর্থ সংগ্রহ শুরু করে। ২০০০ সালের মার্চ মাসে অনেকগুলো মঞ্চ পরিবেশনার পর ভারতীয় ৫১ হাজার রুপি সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। মেয়েটির এই কাজ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হলে কারডিওলজিস্ট দেব প্রসাদ শেটি লোকেশের অপারেশন বিনামুল্যে করেন। পলক এবং তার পরিবার চিন্তায় পড়ে গেল এখন এই টাকা তারা কি করবে? তারা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলেন যে, যদি কোন শিশু হৃদরোগে আক্রান্ত থাকে তাহলে যেন অতিসত্তর যোগাযোগ করে। পরের দিন ৩৩ জন শিশুর পরিবার যোগাযোগ করে যাদের প্রত্যেকের হৃদরোগের অপারেশন করা লাগবে। পলক এবং তার পরিবার খুবই চিন্তায় পড়ে যান। এতো শিশু হৃদরোগে আক্রান্ত। তারা এই সমস্ত শিশুদের অপারেশন করার জন্য ঐ বছরই একাধিক মঞ্চ পরিবেশনা করে এবং প্রায় ২ লক্ষ ২৫ হাজার ভারতীয় রুপি সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়।
এভাবেই পরিবারের সহায়তায় নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে লেগে যায় পলক যা আজ পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। মানুষরুপি এই মহান মানুষদের জন্যেই আজো পৃথিবী সুন্দর। বেচে থাকুক পলক। বেচে থাক তার সাহায্যে হাজার ফুলের মত শিশু।
আগের খবর কি করির মিউজিক ভিডিও নিয়ে মিনার
পরবর্তী খবর ডিভোর্স নয়, ন্যায় বিচার চাই- মিলা