পিলখানা ট্র্যাজেডির আজ রায়
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ২৬শে নভেম্বর ২০১৭, রবিবার
| বিকাল ০৩:৪৬
অন্যান্য
ই-বার্তা।। পিলখানা ট্র্যাজেডি বা বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) হত্যাকাণ্ডের ৯ বছর পূর্ণ হবে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি। ২০০৯ সালের এদিন তৎকালীন বিডিআরের বিপথগামী সদস্যরা বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করে।
নিহতদের স্বজনরা রয়েছেন সেই হত্যাকাণ্ডের দ্বিতীয় ধাপের বিচারের অপেক্ষায়। আলোচিত এই হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় ঘোষণা হবে আজ (রোববার)।
বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করবেন।
এদিন জানা যাবে সর্বোচ্চ আদালতে কী রায় আসে। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এই হত্যা মামলায় ১৫২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন ও ২৭৭ জনকে বেকসুর খালাস দিয়ে রায় দেন ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. আখতারুজ্জামান।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আমার প্রত্যাশা মামলায় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আমরা দেখিয়েছি কাদের অপরাধ গুরুতর, যা কোনোভাবেই মার্জনা করা যায় না। সেভাবেই বিচার পাবে বলে আমি আশা করছি।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালে বিডিআর বিদ্রোহের ফলে সেনাবাহিনীর অনেক সদস্য প্রাণ হারিয়েছিলেন। বিচারে যাদের ফাঁসির দণ্ড হয়েছিল তাদের বিষয়ে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে বহু দিন শুনানি হয়েছে।
এ ছাড়া রাষ্ট্রপক্ষও আপিল করে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মামলা করার পর আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলাম। পরিদর্শনে ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে, মানুষের ভেতর অনেক সময় মানবিক মূল্যবোধ সম্পূর্ণ লোপ পেয়ে যায়। পাশবিক শক্তি তার ভেতর জাগ্রত হয়। এ ধরনের পরিস্থিতি হলেই এ রকম হত্যাকাণ্ড হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সারোয়ার কাজল বলেন, এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় ঘোষণার জন্য কার্যতালিকায় রাখা হয়েছে। আশা করছি, যথাসময়েই রায় ঘোষণা হবে। আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী আমিনুল সাংবাদিকদের বলেন, আশা করছি ন্যায়বিচার পাব। অধিকাংশ আসামি খালাস পাবেন।
১৩ এপ্রিল এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন।
বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার। আসামির সংখ্যার দিক দিয়ে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য ২০১৫ সালে এই বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করা হয়।
আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সারোয়ার কাজল। এর আগে বিভিন্ন সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও শুনানিতে অংশ নেন। পিলখানা হত্যা মামলায় হাইকোর্টে ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি আসামিদের মৃত্যুদণ্ডের অনুমোদন ও আপিল শুনানি শুরুর পর মোট ৩৭০ কার্যদিবস শুনানি হয়।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দফতরে রক্তাক্ত বিদ্রোহের এ ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। ঘটনার পর ৫৭টি বিদ্রোহের মামলার বিচার হয় বাহিনীর নিজস্ব আদালতে। আর হত্যাকাণ্ডের বিচার চলে বকশিবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত মহানগর দায়রা জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে।
ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. আখতারুজ্জামান ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এ হত্যা মামলার যে রায় ঘোষণা করেন, তাতে ১৫২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এ মামলার সাড়ে ৮০০ আসামির মধ্যে ওই রায়ের দিন পর্যন্ত ৮৪৬ জন জীবিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ১৬১ জনকে দেয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। পাশাপাশি অস্ত্র লুটের দায়ে তাদের আরও ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা জারিমানা, অনাদায়ে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারক। এ ছাড়া ২৫৬ আসামিকে তিন থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয়া হয়। কারও কারও সাজার আদেশ হয় একাধিক ধারায়। অপরাধে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় রায়ে ২৭৭ জনকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।
মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিতরা সবাই বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য ছিলেন। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিতদের মধ্যে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু ও আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীও রয়েছেন। ওই রায়ের এক বছরেরও বেশি সময় পর ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল ও জেল আপিল করে আসামিপক্ষ। এ ছাড়া রাষ্ট্রপক্ষও খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে ও সাজা বাড়াতে আপিল করে। এর মধ্যে পিন্টু ২০১৫ সালের ৩ মে রাজশাহী কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।