কুমিল্লায় আ. লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, পুলিশ-সাংবাদিকসহ আহত ১৫
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ২৮শে নভেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার
| সকাল ১১:২৪
রাজনীতি
ই-বার্তা।। কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায় সোমবার আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশ-সাংবাদিকসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় চান্দিনা উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে প্রথমে সংঘর্ষ ঘটে। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের ভেতরে আবার সংঘর্ষ হয়।
আহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মো. দুলাল হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা মনু মিয়া প্রধান, উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সামিরুল খন্দকার রবি, অমল, ছাত্রলীগ নেতা সোহেল, সহসভাপতি শরীফুল ইসলাম, গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক মেহেদী হাসান, আরএ কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মো. জামিল, পৌর ছাত্রলীগ নেতা আরমান হোসেন শ্যামল, চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী মাহমুদ, দৈনিক কুমিল্লার কাগজ বিশেষ প্রতিবেদক রণবীর ঘোষসহ ১৫ জন। তাঁরা কম-বেশি আহত হলেও গুরুতর আহত হননি কেউ।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আজ বিকেল ৩টায় চান্দিনার পালকি সিনেমা হলের সামনে থেকে আওয়ামী লীগ নেতা শাহ্ সেলিম প্রধান, জাহাঙ্গীর আলম, আবদুল মান্নান সরকার, যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম, মনির খন্দকার, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা লিটন সরকারের নেতৃত্বে মিছিল শুরু করেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের সমর্থকরা। তাঁরা মিছিল নিয়ে চান্দিনা বাজার হয়ে উপজেলা গেট এলাকায় পৌঁছালে পেছন দিক থেকে অধ্যাপক আলী আশরাফ এমপির সমর্থকরা ঢিল ছোড়ে। শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ। এ সময় উভয় পক্ষের সমর্থকরা এলোপাতাড়ি ইট-পাটকেল ছোড়ে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন ডা. প্রাণ গোপালের সমর্থক নেতাকর্মীরা। তাঁরা প্রায় ২০ মিনিট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে এসে ঘটনার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন শুরু করেন ডা. প্রাণ গোপাল সমর্থিত নেতাকর্মীরা। সংবাদ সম্মেলন শুরু হওয়ার কয়েক মিনিট পর আরেক পক্ষ
এসে হামলা চালায়। এরপর আবার দুই পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সামিরুল খন্দকার রবি আহত হন।
ডা. প্রাণ গোপালের সমর্থক চান্দিনা উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মো. দুলাল হোসেন ও পৌর যুবলীগের সভাপতি আলহাজ মো. মনির খন্দকার জানান, গত ২৫ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের অনুসারী চান্দিনা উপজেলা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা উপজেলার নবাবপুরে আনন্দ র্যালি বের করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেসকোর বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় ওই র্যালি বের করা হয়। এ সময় উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. গিয়াস উদ্দিন ও যুবলীগ নেতা বাকীর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের র্যালিতে হামলা চালিয়ে ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে। ওই হামলার নিন্দা জানিয়ে তাঁরা আজ বিকেলে চান্দিনার পালকি সিনেমা হল এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি চান্দিনা বাজার হয়ে উপজেলা পরিষদ গেট এলাকায় পৌঁছালে সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ এমপি পক্ষের নেতাকর্মীরা মিছিলে হামলা চালায়।
চান্দিনার বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ বলেন, ‘আজ সোমবার সকাল থেকে আমি উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আইনশৃঙ্খলা সভা, স্বাস্থ্যবিষয়ক ও মাসিক সমন্বয় সভায় ছিলাম। আমার উপজেলা প্রশাসনের লোকজনসহ নেতাকর্মীরাও ছিলেন। আর আমার সমর্থিত লোকজন উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। সভা থেকে বের হয়ে জানতে পারি কিছু লোকজন একটি মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় তারা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
চান্দিনা থানার ওসি আলী মাহমুদ জানান, ‘কয়েকজন পুলিশের ওপর ইট পড়েছে, তবে কেউ গুরুতর নয়। ঘটনার তদন্ত চলছে। এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।