বৈশাখের সেকাল একাল
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ২৩শে এপ্রিল ২০১৭, রবিবার
| সকাল ১০:৫৮
ছবি
আফিফা মোহসিনা অরণি।। বৈশাখ পুরাতন বছরের বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার মাস। চৈত্রের গরমে জীবন যখন মরুপ্রায়, রোদে পুড়ে মাটি পানিশূন্য, তখনি বৈশাখ আনে ঝড় ও সাথে পানির ফোয়ারা । যখন ঝড় আসে , তখন সে সব কিছু ভেঙ্গে চুরে তছনছ করে দিয়ে যায়। এজন্য বৈশাখ ঝড় ও ধবংসের প্রতীক । কিন্তু সেই বৈশাখই আবার সৃষ্টির সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তোলে। মাটির বুকে আবারো প্রাণ ফিরে আসে এই বৈশাখে।
বৈশাখ আমাদের বাঙালীদের জন্য মূলত দুটি বিষয়ে গুরুত্তপুর্ণ। বাঙালীর ঐতহ্য এবং প্রাকৃতিক বিচিত্রতা। বৈশাখ কে কেন্দ্র করে বাঙালীরা মেতে উঠে উৎসবে। পহেলা বৈশাখের উন্মাদনা কে না জানে? শুধুমাত্র বাংলাদেশেই নয় পৃথিবীর আনাচে কানাচে যত বাঙালী আছে তাঁরা সবাই পালন করে এই দিনটিকে। বরণ করে নেয় বাংলা নতুন বছরকে। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলা। ৩ দিন, ৭ দিন, ১০ দিন এমনকি মাসব্যাপী এই মেলা চলে।
এরপর আসে কাল-বৈশাখী। আচমকা প্রকৃতি তার রুপ বদলে ভয়ংকর সাজ নেয়। বাড়ির খুঁটিটি আরেকটু মজবুদ করে নেয় অনেকেই। বাঙালী যেন এই ঝড়কেও বরণ করে নেয় সাদরে। বৈশাখী ঝড়ে বাড়ির উঠানে বা আম বাগানে গিয়ে আম কুড়ায়নি এরকম মানুষ খুব কম আছে।
দাদি-নানি এমনকি বাবা-মায়ের মুখেও আমরা এরকম একেকটি আনন্দঘন বৈশাখের বর্ননা শুনেছি অনেক। কিন্তু এখনো কি বৈশাখ তেমনি আছে? প্রকৃতি কি আগের মতই সুন্দর রঙিন রুপ নিয়ে নতুন বছরে দেখা দেয়?
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে অস্থায়ী কিংবা স্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তবে একথা অনস্বীকার্য যে, বিশ্বব্যাপি জলবায়ুর পরিবর্তন শুধুমাত্র প্রাকৃতিক কারণেই নয়, এর মধ্যে মানবসৃষ্ট কারণও সামিল। দিনে দিনে বৃষ্টিপাত কমে যাচ্ছে ফলে বেড়ে যাচ্ছে তাপমাত্রা। গ্রীষ্মকালে যেখানে তাপমাত্রা বাড়ছে, শীতকালে ঠিক একইভাবে তাপমাত্রা মারাত্মকভাবে কমছে। প্রকৃতির রুপ বদলে গেছে। বদলে গেছে মানুষও। আমরা আমাদের প্রিয় দেশ কে, প্রিয় ঋতু কে ধরে রাখতে পারছিনা তার পূর্বের অবস্থায়। বৈশাখে আগে যেমন নদী, পুকুর থাকত পানিতে ভরা, এখন সেই নদী বা পুকুরে দেখা যায় জলহীন শক্ত মাটি।
আজ বৈশাখের আসল রুপ থেকে আমরা বঞ্চিত। যেভাবে সুন্দর একেকটি বৈশাখ আমাদের পূর্বপুরুষেরা কাটিয়েছে, সেগুলো আজ শুধুই স্মৃতি। কিন্তু আমরা চাই সেই স্মৃতিই আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসুক। আর এখনকার বৈশাখের আবহাওয়ার যে নেতিবাচক অবস্থা, তা একটি দুঃস্বপ্নের স্মৃতি হয়ে যাক। পরবর্তী প্রজন্ম যেন আগের মতো সেই সুন্দর বৈশাখ কে বরণ করে নিয়ে প্রাণ খুলে গাইতে পারে, “এসো হে বৈশাখ এসো এসো”।