চিংড়ী চাষে সফলতার দ্বারপ্রান্তে কুড়িগ্রাম


ই-বার্তা প্রকাশিত: ২৭শে এপ্রিল ২০১৭, বৃহঃস্পতিবার  | দুপুর ১২:৫১ বিশেষ প্রতিবেদন

আফিফা মোহসিনা অরণি।। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত পানিতে দ্রুত বর্ধণশীল গলদা চিংড়ী, কুড়িগ্রাম জেলায় মিঠা পানিতে চাষ করে সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন কুড়িগ্রাম মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের খামার ব্যাবস্থাপক মো. মূসা কালিমুল্লাহ। এর ফলে কুড়িগ্রাম জেলার অর্থনীতির ভীত মজবুত হবে বলে আশাবাদী তিনি।

সাধারণত যেসব নদী সমুদ্রের সাথে সংযুক্ত, গলদা চিংড়ী সেসব নদীতেই প্রাকৃতিক ভাবে উৎপন্ন হয়ে থাকে। ২০১৫ সালে পরীক্ষামূলকভাবে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারে প্রথমবারের মত গলদা চিংড়ি চাষ ও রেনুপোনা উৎপাদনের উদ্যোগ নেন বর্তমান খামার ব্যাবস্থাপক মো. মূসা কালিমুল্লাহ। কিন্তু উপযুক্ত পানির অভাবে প্রথমবারে অনেকদুর অগ্রসর হওয়ার পরেও বাঁচানো যায়নি চিংড়ীর রেনুকে। তাই দ্বিতীয়বার কোন ভুল করেননি তিনি। সুদুর পেকুয়া, কক্সবাজার থেকে ব্রাইন ওয়াটার (লোনা পানি) এবং পটুয়াখালী জেলার পায়ড়া নদী থেকে মা-গলদা চিংড়ি নিজেই সংগ্রহ করেন খামার ব্যাবস্থাপক। সাথে ছিলেন একজন টেকনিশিয়ান এবং একজন সহযোগী, যারা সার্বক্ষণিক সাহায্য করেছেন এই সফরে।

খামারে ফিরে এসে গলদা চিংড়ীর হ্যাচারীতে মা-চিংড়ী থেকে ৩ দিনে প্রায় ৮ লক্ষ ডিম সংগ্রহ করা হয়। এরপর সেগুলোকে রাখা হয়েছে একটি বড় কক্ষে যেখানে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা ডিম থেকে পাওয়া লার্ভাগুলোকে দেখভাল করা হয়েছে। চিংড়ীর লার্ভা-পরবর্তী অবস্থার নাম পিএল বা পোস্ট লার্ভা। এখন চিংড়ী রেনুগুলোর(পিএল) বয়স ২৬ দিন। টেকনিশিয়ান এবং তাঁর সহযোগী অক্লান্ত শ্রম দিয়ে এই রেনুগুলোকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করছেন। এই কক্ষটি বিশেষভাবে শুধুমাত্র চিংড়ী উৎপাদনের জন্য আলাদা করা হয়েছে। সেখানে কারোর প্রবেশের অনুমতি নেই। খামার ব্যবস্থাপক বিশেষ পোশাক পরে সেই কক্ষে প্রবেশ করে চিংড়ী রেনুর অগ্রগতি পর্জবেক্ষন করেন। এছাড়া মানসম্মত খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ থেকে শুরু করে সকল কার্যক্রম সতর্কতার সাথে দেখাশুনা করছেন খামার ব্যাবস্থাপক নিজেই।

টেকনিশিয়ান দেলোয়ার হোসেন ই-বার্তা কে বলেন, "সার্বক্ষণিক দেখাশুনার ফলে খুব দ্রুত চিংড়ী রেনুগুলো সুস্থভাবে বেড়ে উঠছে। ৩৫ দিন বয়স হলে এগুলোকে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় নিয়ে আশা হবে।"

বর্তমানে রেনু গুলোকে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রার পানিতে রাখা হয়েছে। সেখানে ইলেক্ট্রিসিটির মাধ্যমে সার্বক্ষণিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। খামার ব্যবস্থাপক মুসা কালিমুল্লাহ বলেন, "পানির তাপমাত্রা কিছু পরিমাণ কম-বেশি হলেই সব রেনু মারা যাবে। তাই দিন রাত ২৪ ঘন্টা আমাদের সজাগ থাকতে হয়।" চিংড়ী পোনার বয়স ৩৫ দিন হলে মৎস্যচাষিদের মধ্যে সেগুলো উৎপাদনের জন্য বিতরণ করা হবে। এবং খামারেও এর চাষ করা হবে নিয়মিত। গলদা চিংড়ীর পোনাকে কার্প জাতীয় মাছের সঙ্গে একই পুকুরে চাষ করা যাবে বলে জানিয়েছেন খামার ব্যাবস্থাপক। এর ফলে চাষীদের বাড়তি কোন খরচ হবেনা।
তিনি বলেন, "গলদা চিংড়ী চাষ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক বিরাট অবদান রাখবে। শুধুমাত্র ৫ লক্ষ চিংড়ী পোনা যদি সুস্থভাবে টিকে থাকে, তবে এর থেকে আয় হবে কমপক্ষে ১৫ লক্ষ টাকা"।

আমাদের দেশে গলদা চিংড়ির আধুনিক চাষ গুটি কয়েক জন চাষী ছাড়া ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়নি। আধুনিক পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষ করে সহজে প্রতি একরে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা লাভ করা যায়। এর রপ্তানিতে বিপূল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান ই-বার্তা কে বলেন, “গলদা চিংড়ী চাষের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করা সম্ভব।কার্প জাতীয় অন্যান্য মাছের সাথে এর মিশ্র চাষ করা যায়। গলদা চিংড়ী যেহেতু আমাদের দেশের রপ্তানিকৃত পণ্যের মধ্যে অন্যতম স্থানে, সেহেতু আমাদের দেশের যেকোনো চাষী এর চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবেন”।

৩৫ দিন বয়সী চিংড়ী পোনাগুলো যেন সুস্থভাবে মৎস্য চাষীদের মধ্যে বিতরণ করা হয় এবং কুড়িগ্রাম জেলায় সফল গলদা চিংড়ী চাষের সূচনা হয়, এই চাওয়া সংশ্লিষ্টদের।

সর্বশেষ সংবাদ

বিশেষ প্রতিবেদন এর আরও সংবাদ