চলচ্চিত্রের প্রাণপুরুষ


ই-বার্তা প্রকাশিত: ২রা মে ২০১৭, মঙ্গলবার  | দুপুর ০১:২৬ সিনেমা

আফিফা মোহসিনা অরণি।। সিনেমা দেখতে ভালোবাসে কিন্তু সত্যজিৎ রায়ের নাম শোনে নি, তাঁর সিনেমা দেখেনি, তাঁর লেখা পড়েনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া সত্যিই অসম্ভব। তিনি শুধু ভারতের না, বিংশ শতাব্দীর একজন সেরা পরিচালক। সত্যজিৎ রায়ের কাহিনি, চিত্রনাট্য, ও পরিচালনায় মোট ৩২ টি সিনেমা নির্মিত হয়েছে। তাঁর বানানো সিনেমা পথের পাঁচালী এবং ব্যোমকেশ বকশী ও ফেলুদা সিরিজের কথা নতুন করে বলার কিছুই নেই।

চলচ্চিত্র যে একই সাথে ‘পারফর্মিং আর্ট’ হতে পারে, সত্যজিৎ রায় সেটা তাঁর সিনেমার মধ্যে দিয়ে দেখিয়েছেন। অসাধারণ দক্ষতার সাথে তিনি তাঁর প্রতিটি সিনেমা বানাতে সক্ষম হয়েছেন। মূলত তিনি চলচ্চিত্র ও মঞ্চকে নিজ পর্যবেক্ষণ থেকে যেভাবে উপলব্ধি করেছেন, সেভাবে অনেক পরিচালকই করতে পারেননি।

মঞ্চ ও চলচ্চিত্র শক্তির আদ্যোপান্ত তিনি তাঁর একটি সিনেমা দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন। ১৯৬৬ সালে নির্মিত সিনেমা ‘নায়ক’, সেখানে তিনি মঞ্চ অভিনেতাকে মুক্ত আকাশের পাখির সাথে মিলাতে চেয়েছেন আর চলচ্চিত্র অভিনেতাকে খাঁচায় বন্দি পাখির সাথে তুলনা করেছেন। তাঁর মতে অভিনেতা হবে স্বাধীন মুক্তমনা, অভিনয়ে বাধা দেয়া যাবে না, তাই চিরদিনই তিনি মঞ্চ আর চলচ্চিত্রকে সাংঘর্ষিক বলে মনে করেছেন। তাঁর মতে মঞ্চ আর চলচ্চিত্র এক হতে পারে না। তাঁর এই চিন্তাগুলো নিখুঁতভাবে তিনি ‘নায়ক’ সিনেমায় অভিনেতা উত্তম কুমারের মধ্য দিয়ে দর্শকের সামনে তুলে ধরেছেন।

সত্যজিতের সিনেমার সংলাপগুলো যে এতটা শিল্পনৈপূণ্যে ভরা ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এছাড়াও সত্যজিতের সিনেমা দ্বন্দ্ব ও উৎকন্ঠায় ভরপুর ছিল। দর্শকেরা অধীর আগ্রহ নিয়ে তাঁর সিনেমা উপভোগ করতেন। তাঁর পরিচালনায় অভিনেতা-অভিনেত্রীর বাচনভঙ্গি, শব্দচয়ন ও সংলাপ যেকোন নবীন পরিচালক ও অভিনেতার জন্য শিক্ষণীয়। বর্তমান কালের কমার্শিয়াল সিনেমার সাথে কোনভাবেই তুলনা হয়না ষাটের দশকের সত্যজিতের সিনেমা গুলোর।

এখনকার পরিচালকেরা তাঁদের আধুনিক সিনেমায় সত্যজিতের ছায়া অবলম্বন করছেন। ২০০৩ সালের ‘আবার অরণ্যে’ সিনেমায় এই সময়ের জনপ্রিয় পরিচালক গৌতম ঘোষ সত্যজিৎ রায়ের তিনটি চরিত্র নিয়ে আসেন। এরপর ২০০৮ সালে অঞ্জন দত্ত তাঁর সিনেমা ‘চলো, লেটস গো’-তে সত্যজিতের ‘অরণ্যের দিনরাত্রির’ চারটি চরিত্রই নিয়ে আসেন। অনেকেই এটাকে ‘চরিত্রের রিমেক’ বলে থাকেন। একইভাবে ২০১০ সালে শ্রীজিত মুখার্জি ‘অটোগ্রাফ’ সিনেমাটি সত্যজিৎ-উত্তম জুটির ‘নায়ক’ সিনেমার ছায়া অবলম্বনে নির্মাণ করেছেন। বাংলাদেশি অভিনেত্রী জয়া আহসান অভিনীত ‘আবর্ত’ সিনেমার সব চরিত্রের নাম দেওয়া হয়েছে সত্যজিতের বিখ্যাত সব চরিত্রের নামে।


প্রতিটি সিনেমাপ্রেমী বাঙালির হৃদয়ে সত্যজিৎ চিরদিনের জন্য স্থান করে নিয়েছেন তাঁর সিনেমার মধ্য দিয়ে। বর্তমানে একজন মঞ্চ ও সিনেমার পরিচালক হিসেবে তাঁর সৃষ্টিকে সম্মান রেখে কাজ করার অনুপ্রেরণা নিলে দর্শক ভালো কিছু পাবে।

সর্বশেষ সংবাদ

সিনেমা এর আরও সংবাদ