নীলা
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ২৯শে মার্চ ২০১৭, বুধবার
| রাত ০৯:৩২
গদ্য
আসাদুজ্জামান জীবন
কমলাপুর রেলস্টেশনে অপেক্ষা করছি।
নীলার আসার কথা দুপুর ৩ টায়। অথচ এখন ৪ টা ১৫ মিনিট।নীলার ফোন বন্ধ। একটু পরপর তার নাম্বারে ডায়াল করছি কিন্তু ফোন যাচ্ছে না। দুঃশ্চিন্তায় বারবার আমার শরীর ঘামছে। আমি রেল স্টেশনে এই মাথা থেকে ওই মাথায় হাটাহাটি করছি। কোথাও নীলাকে দেখা যায় না।
হুট করে পেছন থেকে কেউ একজন আমার হাত ধরলো। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম নীলা দাড়িয়ে আছে। মেয়েটা চোখে কাজল দিয়ে এসেছে। চোখে কাজল দিলে নীলাকে অসহ্য রকম সুন্দর দেখায়।
আমার দুঃশ্চিন্তা কিছুটা কমেছে। হৃদপিন্ডের সিস্টোল, ডায়াস্টোল প্রক্রিয়ার তীব্রতা কমে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে।
- এত লেট করলে কেন? রাস্তায় খুব জ্যাম ছিল?
- উহু, এমনি লেট হয়ে গ্যাছে।
- এমনি কারো লেট হয় নাকি?
- বকা দিচ্ছো কেন? কাজলটা খুজে পাচ্ছিলাম না, তাই লেট হয়ে গ্যাছে।
- ৫ টায় ট্রেন। এই সময় চোখে কাজল না দিলে কি এমন হতো?
- তুমিই তো বলো, কাজল দিলে আমাকে সুন্দর দেখায়।
- কাজল না দিলেও তোমাকে কখনো অসুন্দর দেখায় না।
- আর বকা দিও না তো। চলো চা খাই।
- হুম, চা খাওয়া যায়।
দু কাপ চা নিয়ে দুজন দাড়িয়ে আছি। এক চুমুক চা খাওয়ার পর আমি থেমে গেছি। নীলা দোকান থেকে দু চামচ চিনি নিয়ে আমার চায়ে মিশিয়ে দিলো। নীলা জানে, চায়ে চিনি না হলে আমি খেতে পারিনা।
ট্রেনের সময় হয়ে গ্যাছে। নীলা যাবে তার গ্রামের বাড়িতে। আমরা জামালপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। মেয়েটা একা যাবে তাই আমিও একটা টিকেট কেটেছি। স্টেশনে ওকে নামিয়ে, আমি পরের ট্রেনে ব্যাক করবো।
ট্রেন শোঁ শোঁ শব্দকরে ছুটে চলেছে। নীলা জানালার পাশে বসেছে।
জানালা দিয়ে চাঁদের আলো তার মুখে এসে পড়ছে। আমি ভীষন বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছি। ও প্রকৃতি দেখছে, আর আমি নীলাকে দেখছি। মেয়েটা প্রকৃতির চেয়েও বেশি সুন্দর। একজন মানুষের চোখে এত স্নিগ্ধতা কি করে হয়, কে জানে!
দেখতে দেখতে আমরা স্টেশনে চলে এসেছি। ট্রেন থেমে গ্যাছে। নীলাকে এখন নেমে যেতে হবে।
স্টেশন এমন যায়গা, যেখানে থেকে যাওয়ার সুযোগ নেই। পৃথিবীর সকল যাত্রাই শুধু এক স্টেশন থেকে উঠে, অন্য স্টেশনে নেমে যাওয়ার যাত্রা।
নীলা চলে গেলো। আমি দাড়িয়ে থেকে মানুষটার চলে যাওয়া দেখলাম।
এরপর ১৩ বছর নীলার সাথে আমার যোগাযোগ হয়নি। মেয়েটা আর কোন খবর নেয়নি। তার ফোনের সুইচ অফ ছিল বছরের পর বছর।
১৩ বছরে নীলার স্মৃতিরা প্রায় ঠান্ডা হয়ে গ্যাছে। আজকাল আর তেমন মনে পড়ে না। তবুও, হৃদয়ের কোথায় যেন মানুষটা ঠিকই রয়ে গ্যাছে। মাঝে মাঝে আমি টের পাই,স্মৃতিরা আসলে মরে না,স্মৃতিরা হৃদয়ের কোন না কোন জায়গায় ঠিকই রয়ে যায়।
হুট করে একটা ফোন এসেছে। ফোনের ওপাশ থেকে মেয়ে গলায় একজন বলছে " এ্যাই, তুমি কি দুপুর ৩ টায় একটু স্টেশনে আসবে? এত গুলো ব্যাগ আমি একা নিয়ে আসতে পারবো না।"
উহু, ওটা নীলা না। ও আমার স্ত্রী ইশিতা। চিটাগাং, তার বাবার বাড়ি থেকে ঢাকায় আসছে।
কি আশ্চর্য!
সেই একই স্টেশন,আগের মতোই দাড়িয়ে আছে। শুধু জীবন থেকে মানুষটা বদলে গ্যাছে।
আগের খবর একটা সময় ছিল
পরবর্তী খবর মুকুলিমা কিংবা জলপূর্ণিমার গল্প