একটা সময় ছিল
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ২৪শে মার্চ ২০১৭, শুক্রবার
| সন্ধ্যা ০৬:৩২
গদ্য
আসাদুজ্জামান জীবন
একটা সময় ছিল,
যখন সপ্তাহ ঘুরে বৃহস্পতিবার এলেই বাতাসে এক রকমের মিষ্টি ঘ্রান পাওয়া যেত। শুক্রবার স্কুল বন্ধ। সকাল থেকে মাঠ ঘাট ঘুরে ঘুরে একাকার করে ফেলতাম। জুম্মার নামাজের আগে, দল বেধে গোসল করতে যেতাম মল্লিকদের পুকুরে।
ঘন্টার পর ঘন্টা পুকুরে সাঁতার কেটে, চোখ মুখ লাল করে বাড়ি ফিরে ভেজা জিন্স পেন্ট ফেলে রাখতাম উঠানের তারে শুকাতে দেয়া মায়ের শাড়ির উপর।
শুক্রবারের বিকেলের জন্য ছিল এক সপ্তাহের অপেক্ষা। এই দিন দুপুর ৩ টায় বিটিভি তে বাংলা সিনেমা দেখাতো। আমার প্রিয় নায়ক ছিল রাজ্জাক আর আলমগীর। আমাদের বাড়িতে তখন টেলিভিশন ছিলো না বলে, পাশের বাসায় যেয়ে সিনেমা দেখতাম। কখনো কখনো সিনেমা দেখা শেষ করে, রাস্তায় বের হয়ে এলাকার ছেলেদের সাথে মারামারি খেলতাম আর মুখ দিয়ে ডিসুম ডিসুম শব্দ করতাম।
একটা সময় ছিল,
যখন শুক্রবার রাতে আলিফ লায়লা দেখতে গেলে বলে উঠতাম "আল্লাহ সিনবাদ কে বাচিয়ে দাও"।
আহা! জীবনটা কত সহজ সরল ছিল। কোন জটিলতা নেই। একদম নিশ্চিন্তায় কেটে যেত দিন-রাত।
একটা সময় ছিল,
গ্রামের রাস্তার পাশে শুকাতে দেওয়া পাট থেকে ভেসে আসা পচা গন্ধটা আমার বেশ ভালো লাগতো। পলিথিন পোড়া গন্ধ আমার প্রিয় ঘ্রান ছিল। লাইফ বয় সাবান কে যে জীবনে কতবার খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে হয়েছে, তার হিসেব জানা নেই।
একটা সময় ছিল,
মুদি দোকান থেকে রাজা কন্ডম কিনে বেলুন ফুলিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা খেলা করতাম। আমার বেলুনটা সবচেয়ে বড় হলে, যে আনন্দ পেতাম, তা আর কিছুতে নেই।
একটা সময় ছিল,
যখন জীবনটা সুন্দর ছিল। মনে আনন্দ ছিল। চোখে উচ্ছাস ছিল। মুখে নিশ্পাপ হাসি ছিল।
এসময়টায় আশেপাশে কোন প্রতারক ছিল না, বিশ্বাসঘাতক ছিল না, ধান্দাবাজ ছিল না। এই সময়টাতে কারো জন্য রাত জাগতে হতো না, বিষন্নতা কাজ করতো না, ডিপ্রেশনে জীবন কাটাতে হতো না।
আজকাল আর বৃহস্পতিবার এলে, সেই ঘ্রান পাই না। শুক্রবারের সিনেমা দেখি না।
বয়স বেড়ে গ্যাছে। জীবন বদলে গ্যাছে। সময় পাল্টে গ্যাছে।
এখন আর জীবনে আনন্দের কিছু নেই। সব কেমন যান্ত্রিক হয়ে গ্যাছে।
আহা!
লাইফ বয় সাবানের ঘ্রান। আহা! পলিথিন পোড়া গন্ধ এখন আর নাকে আসেনা।
কত দিন বুক ভরে শ্বাস নেই না! কত দিন বাতাসের পরিচিত ঘ্রানে মুগ্ধ হইনা।
আহা জীবন, আর ফেরা হবেনা শৈশবে! আহারে!
আগের খবর গল্পঃ নাইসম্যান ক্লথ হাউজ
পরবর্তী খবর নীলা