নজরুলের খুশির ঈদ


ই-বার্তা প্রকাশিত: ২৫শে জুন ২০১৭, রবিবার  | সন্ধ্যা ০৭:১৫ গদ্য

আফিফা মোহসিনা অরণি।। “ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ”- কাজী নজরুল ইসলামের এই অমর গান টি কখনোই শোনেনি অথবা এই গানের মধ্যে দিয়ে কারো ঈদ শুরু হয়নি একথা বিশ্বাস করা খুব কঠিন।

ছোট থেকে বৃদ্ধ হওয়া পর্যন্ত ঈদুল ফিতরের চাঁদ রাত এবং ঈদের দিন সকালবেলা এই বিখ্যাত গান দিয়েই শুরু হয় বাঙালীর ঈদ। এখন পর্যন্ত ঈদ নিয়ে লেখা অন্য কোন গান নজরুলের এই সৃষ্টির পাশে দাঁড়াতে পারেনি। এমনই তাঁর শব্দ চয়ন, এমনই তাঁর সুর যে যেকোনো ধর্মপ্রাণ মুসলমান এই গানের কথা শুনে নিজেকে ঈদের আনন্দ থেকে সরিয়ে রাখতে পারবেনা। সব ভেদাভেদ-রেষারেষি ভুলে হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন মুসলিম সম্প্রদায়। এ যেন নজরুলের সেই কথা, “আজ ভুলে যা তোর দোস্ত দুশমন, হাত মিলাও হাতে। তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরিদ”।

ঈদগাহ ময়দানে থাকেনা কোন শ্রেণীভেদ। সকল পেশার মানুষ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন। একটি মাত্র পরিচয়ে সবাই পরিচিত, একটি মাত্র উপলক্ষে সবাই আনন্দিত। তা হল পবিত্র খুশির ঈদ। নজরুল, ঈদের মাহাত্ম তাঁর একটি গানের মধ্যে দিয়েই মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছেন। ঈদ হোলো সব ভেদাভেদ ভুলে মানুষকে ভালোবাসার দিন। জাতীয় কবির মতো করেই আমরা বলতে পারি, “তোরে মারল ছুঁড়ে জীবন জুড়ে ইট পাথর যারা,
সেই পাথর দিয়ে তোল রে গড়ে প্রেমেরই মসজিদ”।
“নতুন ঈদের চাঁদ” গানে নজরুল একই অর্থে বলেন, “শত্রুরে আজি ধরিতে বুকে, শেখাও ভালবেসে, তোমায় দেখে টুটে গেছে অসীম প্রেমের বাঁধা”।
“চল্ ঈদগাহে” গানের আবেদন আবার একেবারে খোলামেলা। তিনি এখানে বলেন, “শিয়া সুন্নী লা-মজহাবী একই জামাতে,
এই ঈদ্ মোবারকে মিলিবে একসাথে,
ভাই পাবে ভাইকে বুকে, হাত মিলাবে হাতে,
(আজ) এক আকাশের নীচে মোদের একই সে মসজিদ-
চল্ ঈদগাহে”।

ঈদ নিয়ে সবচেয়ে বেশি কবিতা ও গান লিখেছেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর লেখা কবিতা “ঈদ মোবারক”, “কৃষকের ঈদ” ও “ঈদের চাঁদ” বহুল আলোচিত। “ঈদ মোবারক” কবিতায় কবি লিখেছেন,
“শত যোজনের কত মরুভূমি পারায়ে গো,
কত বালুচরে কত আঁখি-ধারা ঝরায়ে গো,
বরষের পরে আনিলে ঈদ”।

এ কবিতায় নজরুল দেখেছেন অসংখ্য মরুভূমি, বালুচর আর অনাবিল আঁখিজল পেরিয়ে এসেছে ঈদ। তিনি বলতে চেয়েছেন, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে সুখ-দুঃখের সমভাগী হয়ে অধিকার ভোগ আর দায়িত্ব পালনের মধ্যে যে প্রকৃত আনন্দ, সে শিক্ষা যেন রয়েছে ঈদের মাহাত্ম্যে। ধর্মীয় অনুশাসন না মানার কারণে সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের ঈদ সচরাচর দেখা যায় না। এ দিনও দেখা যায় গ্রামের দরিদ্র কৃষকরা শীর্ণ গরুর পাল নিয়ে মাঠে যায় জমিতে লাঙল দিতে। এদিকে ইঙ্গিত করে তিনি রচনা করেছেন তার “কৃষকের ঈদ” কবিতাটি। কবির ভাষায়-
“জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসেনা নিদ
মুমূর্ষু সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ?
একটি বিন্দু দুধ নাহি পেয়ে যে খোকা মরিল তার
উঠেছে ঈদের চাঁদ হয়ে কি সে শিশু-পুঁজরের হাড়”?

সর্বশেষ সংবাদ

গদ্য এর আরও সংবাদ