গান করা সম্ভব সুরকে শাসন করেও
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ২৭শে আগস্ট ২০১৭, রবিবার
| বিকাল ০৪:৫১
সংগীত
ই-বার্তা।। এ সপ্তাহে দেশ টিভির বিরতিহীন নাটকের আলোচনা দিয়ে আমরা শুরু করব। ১৭ আগস্ট রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে আশরাফি িমঠুর রচনা ও পরিচালনায় দেশ টিভিতে প্রচারিত হলো সাপ্তাহিক বিরতিহীন নাটক ম্যাজিক। এতে অভিনয় করেছেন সজল, মম, ফজলুর রহমান বাবু প্রমুখ।
নাটকের গল্পটি সংক্ষেপে এ রকম, নবীন অধ্যাপক সজলের উদ্যোগে এলাকায় বিজয় দিবস অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এলাকার মেয়ে মম শহর থেকে এসেছে এ অনুষ্ঠানে গান করার জন্য। মমর সঙ্গে সজলের রয়েছে পূর্ব সখ্য। মম এসে জানান তিনি এবার তাঁর মামা আবদুল আলী মাস্টারের হত্যাকারীকে খুঁজে বের করবেন। একাত্তরের প্রত্যক্ষদর্শী ফজল ম্যাজেশিয়ানের কাছে যান তাঁরা। ম্যাজিশিয়ান প্রথমে ভীতি বা দ্বিধা করলেও পরে ওই অনুষ্ঠানে ম্যাজিক দেখাতে গিয়ে কৌশলে করম আলী মোল্লাকে স্টেজে ডেকে নিয়ে ম্যাজিকের মাধ্যমে দেখায় তার হাতে রক্ত। মমর মামা আবদুল আলী মাস্টারের রক্ত। এই হলো নাটকের গল্প।
একাত্তর নিয়ে গতানুগতিক বৃত্তের বাইরে গিয়ে নাটকটিতে কিছুটা নাটকীয় ও অভিনব উপস্থাপনার প্রয়াস লক্ষণীয়। অসংগতি তেমন বিস্তারিত বলার কিছু নেই। তবে কাহিনিটি আরেকটু বিস্তারের সুযোগ ছিল, প্রয়োজনও ছিল। মনে হয়েছে, একটু তাড়াহুড়ো করে শেষ করা হয়েছে। আর মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ সাক্ষী হিসেবে ফজলুর রহমান বাবুকে আরেকটু বয়সী দেখানো উচিত ছিল। শেষে বলব, দেশ টিভি প্রায় সূচনালগ্ন থেকেই সাপ্তাহিক বিরতিহীন নাটক প্রচার করার জন্য দর্শকের অভিনন্দন দাবিদার। যদিও এটি প্রচার করা হয় বেশ গভীর রাতে। তবু তো দর্শকের জন্য তাদের এ উপলব্ধি ও উদ্যোগটুকু আছে। সব চ্যানেল এটি অনুসরণ করুক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
১৮ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টায় শাহীন সরকারের পরিচালনায় আরটিভিতে প্রচারিত হলো সাপ্তাহিক নাটক প্রিয়। নাটকের গল্প হলো, মেহজাবিন কানাডা থেকে এসেছেন তার হবু বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে দেখা করতে। তাঁর বেস্টফ্রেন্ড অভীক তাঁকে নিয়ে গাড়িতে করে রওনা হয়েছেন। তারপর যাত্রাপথে মিষ্টি খাওয়া, পথিমধ্যে গাড়ি নষ্ট, গাড়িতে পানি দেওয়ার জন্য পানি আনতে গিয়ে ছিনতাইকারীর কবলে পড়া এবং মেকানিকের খোঁজে বাজারে যাওয়া—এভাবে একটির পর একটি ঘটনা সাজানো হয়েছে। এরপর শেষে নাটকীয়ভাবে পথশিশুদের হাতে প্ল্যাকার্ড দিয়ে মেহজাবিনকে নির্জনে ডেকে নিয়ে অভীক তাঁর হাতে ফুল ও আয়না বাক্স তুলে দিয়ে জানান, তিনিই তাঁকে ভালোবাসেন। তিনি নিজেই তাঁর সেই হবু বয়ফ্রেন্ড।
এক কথায় বলা যায় অত্যন্ত দুর্বল গল্প ও দুর্বল উপস্থাপনা। অনেক ঘটনাই দেখানো হয়েছে, যা বাস্তবতাবিবর্জিত। যেমন ছিনতাইকারীরা অভীকের সব কেড়ে নেয়, তারপর মেহজাবিনের কাছে যায়। আর মেহজাবিনের বীরত্বে ও সাহসিকতার ভয় পেয়ে তারা পড়িমরি করে পালিয়ে যায়। সিনেমায়ও বোধ হয় এমন অবিশ্বাস্য দৃশ্য দেখানো হয় না। শুধু তা-ই নয়, পানির জন্য যেভাবে গাড়ি বন্ধ হয়ে গেল, তাও অবাস্তব। আবার বন্ধ হওয়া সেই গাড়িতে বসে মেহজাবিন হরহামেশা জানালার গ্লাস ওঠাচ্ছেন-নামাচ্ছেন। মাঝে মাঝে বৃষ্টি নামছে, থেমে যাচ্ছে, সব আরোপিত। ভালোর মধ্যে, অল্প চরিত্র হওয়ায় নির্মাণ কিছুটা পরিচ্ছন্ন ছিল। আর লোকেশন ও দৃশ্যায়ন ভালো ছিল।
১৭ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে মাছরাঙা টিভিতে ময়ূখ বারীর পরিচালনায় প্রচারিত হলো টেলিছবি সিরিয়াল কিলার। প্রধান চরিত্রে ছিলেন শখ ও অপূর্ব। শখের চরিত্রটি দেখানো হয়েছে, আমাদের দেশে কলকাতার সিরিয়াল দেখার নেশাখোরদের একজন। ওই সব সিরিয়াল দেখতে দেখতে একসময় তাঁর চারপাশের মানুষগুলোকেও সিরিয়ালের চরিত্রের মতো ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারী ও প্যাঁচানো মনে হয়। হাঁপিয়ে ওঠেন তিনি।
টেলিছবিটিতে কলকাতার সিরিয়ালের বিদ্রূপ করতে গিয়ে যেভাবে নিজেদের অভিনয় ও নির্মাণ দুর্বলতা ধরা পড়েছে, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক।
শেষে আলোচনা করব সরাসরি প্রচারিত একটি গানের অনুষ্ঠান, সময় কাটুক গানে গানে। ১৮ আগস্ট রাত ১১টায় পরিহার উপস্থাপনায় বৈশাখী টিভিতে প্রচারিত হয় অনুষ্ঠানটি। অনুষ্ঠানে শিল্পী ছিলেন তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি ঐশী ও মেহরাব। প্রায় দুই ঘণ্টা গান করেছেন দুজন।
মেহরাবের কণ্ঠ একটু হালকা, তবে সুরেলা। তিনি অধিকাংশ গানই করেছেন অন্য শিল্পীদের এবং যেগুলো সবই একসময়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় গান। যেমন ঘুমন্ত শহরে, রুপালি রাতে, ওরে সালেকা ওরে মালেকা, এ মন কেন মানে না, মানে না, পাগলা হাওয়ার তোড়ে ইত্যাদি। অন্যের গান করার একটা সমস্যা হলো, তাঁর মতো করে গাওয়ার চেষ্টা করা। মেহরাবও তাই করেছেন। কখনো জেমস, কখনো আজম খান, কখনো-বা শাফিনের মতো করে গাইতে গিয়ে পুরো অনুষ্ঠানে তাঁকে নির্দিষ্টভাবে পাওয়া যায়নি। আবার অন্যের স্টাইল ফলো করতে গিয়ে কখনো কখনো বিকৃতিও মনে হয়েছে।
অন্যদিকে ঐশীর ক্ষেত্রে বিষয়টি ঘটেছে সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি প্রায় সব নিজের গানই করেছেন এবং সম্পূর্ণ নিজস্ব স্টাইলে। আর তাঁর স্টাইলটা মনে হয়েছে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম ও বিস্ময়কর। তাঁর গান শুনতে শুনতে মনে হয়েছে, তিনি যেন সুরকে শাসন করছেন, ধাক্কা দিচ্ছেন, ধমক দিচ্ছেন, কখনো বা চাবুক মারছেন। সুরকে আঘাত করেও যে গান হয়, ঐশীর গান যেন তারই উদাহরণ।
মজা হলো, তিনি যখন কথা বলছিলেন তখন এত সরল, নিষ্পাপ ও মিষ্টি অভিব্যক্তি, মনে হচ্ছিল যেন অভিনয়শিল্পী। আমাদের ধারণা, তিনি হয়তো অভিনয়ের প্রস্তাবও পেয়ে থাকবেন। কিন্তু গান করার সময় তিনি সম্পূর্ণ বদলে যান। স্বর বিকৃত করে উঁচু স্বরে তিনি গান করেন, কিন্তু বেসুরো হয় না। তাঁর অধিকাংশ গানই ছিল লোকসংগীত। সুরের সঙ্গে মিশে যায় তাঁর শরীর ও প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। বাংলা সংগীতের জগতে তাঁর এ স্টাইল ও ধারা কতটা গ্রহণযোগ্য ও আদৃত হবে, আমরা জানি না। কিন্তু এটি যে স্মরণীয় ও আলোচিত হবে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
পরবর্তী খবর অভিমান গান নিয়ে আসছেন তাহসান খান