রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি খালেদা জিয়ার আহবান
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ২৮শে আগস্ট ২০১৭, সোমবার
| বিকাল ০৩:০৭
রাজনীতি
ই-বার্তা ।। মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে সহিংসতায় অসংখ্য মানুষের নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি-রোহিঙ্গাদের জীবন ও বসবাসের নিরাপত্তা বিধান এবং তাদের ওপর রক্তাক্ত সহিংসতার পূনরাবৃত্তি বন্ধ করতে মিয়ানমার সরকার প্রাজ্ঞ ও দুরদর্শী নীতি নিয়ে অগ্রসর হবে।
এছাড়া তিনি বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গাদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানান।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে অমনোযোগী বাংলাদেশ সরকারের দুর্বল কুটনৈতিক তৎপরতার কারণেই পরিস্থিতি শোচনীয় রুপ ধারণ করেছে।
বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেন, রাখাইন রাজ্যে সহিংসতায় সে দেশের রোহিঙ্গাদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিবর্ষণে অসংখ্য মানুষ হতাহতের ঘটনায় আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং নিন্দা জানাচ্ছি। রোহিঙ্গারা বসতবাটি, সহায় সম্বল হারিয়ে প্রাণভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের সীমান্তগুলোতে ভিড় জমাচ্ছে। রাখাইন রাজ্যে গ্রামের পর গ্রামে আগুন জ্বলছে। প্রাণভয়ে রোহিঙ্গারা দিকবিদিক ছুটে বেড়াচ্ছে, গহীন অরণ্যে ঢুকে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করছে।
তিনি বলেন, আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের ওপরও মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষীবাহিনী অবিরাম গুলিবর্ষণ করে যে নারকীয় পরিবেশ তৈরী করেছে তা বর্ণনাতীত। গুলিবিদ্ধ গুরুতর আহত রোহিঙ্গা যারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসতে সক্ষম হয়েছে তাদের অনেকেই হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে এবং কারো কারো মৃত্যু হয়েছে।
খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশের সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার এলাকায় রোহিঙ্গা পুরুষ-নারী-শিশুরা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য নাফ নদীর বিস্তৃত এলাকা জুড়ে তীরে বসে ভয়ঙ্কর অনিশ্চয়তায় প্রহর গুণছে। এই দৃশ্য অমানবিক, বেদনাদায়ক ও হৃদয়বিদারক।
বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সুদীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার নিবিড় সম্পর্কে আবদ্ধ। সুপ্রাচীনকাল থেকে পশ্চিম হতে পূর্ব দিকে যাওয়ার সিংহ দুয়ার হচ্ছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত। এই দুয়ার দিয়েই দুই বিস্তৃত অঞ্চলের মধ্যে ভাব, ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, বাণিজ্য ও কুটনৈতিক আদান-প্রদান উত্তরোত্তর ক্রমবর্ধমানভাবে বিকশিত হয়েছে।
খালেদা জিয়া বলেন, আবহমানকাল ধরে দু’দেশের সম্পর্ক সমমর্যাদায় অভিষিক্ত। আমি বিশ্বাস করি-সমমর্যাদার এই ঐতিহ্যকে সম্মান দেখিয়ে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গারা সমাধানহীন একটি অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে নিপতিত থাকলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ক্রমাগতভাবে অবনতিশীল হতে থাকবে এবং এতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ঐতিহ্যগত স্থিতিশীলতায় বিরুপ প্রভাব ফেলবে। সুসম্পর্কের আবহমানধারা যাতে কোনভাবেই বিনষ্ট না হয়, সে বিষয়ে মিয়ানমার সরকারকে সতর্ক ও দায়িত্বশীল হয়ে রোহিঙ্গা সংকটের জরুরি অবসান ঘটাতে আহবান জানান খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে যে কোন সংকট আরও ঘনীভূত হয়। যুগ যুগ ধরে রোহিঙ্গারা অত্যাচারিত হচ্ছে, ভূমিচ্যুত হয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আশ্রয় নিতে আসছে প্রধানত: সীমান্তবর্তী বাংলাদেশে। এছাড়া আরও কিছু দেশেও রোহিঙ্গারা উদ্বাস্ত হয়ে জীবনযাপন করছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, গণতন্ত্র ও নাগরিক স্বাধীনতার যুগে জাতি, বর্ণ, ধর্ম সম্প্রদায় ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের নির্মূল করতে সহিংসতা সৃষ্টি অচিন্তনীয় ও বিশ্ববিবেককে গভীরভাবে স্পর্শ করে। কোনো পক্ষেরই প্রাণহানী কাম্য নয়।
তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি-রোহিঙ্গাদের জীবন ও বসবাসের নিরাপত্তা বিধান এবং তাদের ওপর রক্তাক্ত সহিংসতার পূণরাবৃত্তি বন্ধ করতে মিয়ানমার সরকার প্রাজ্ঞ ও দুরদর্শী নীতি নিয়ে অগ্রসর হবে।
খালেদা জিয়া বিবৃতিতে বলেন, জীবন ভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা পুরুষ-নারী-শিশুদের বাংলাদেশে আশ্রয় এবং তাদের সার্বিক নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আমি দায়িত্বরত বাংলাদেশের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে খালেদা জিয়া উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে অমনোযোগী বাংলাদেশ সরকারের দুর্বল কুটনৈতিক তৎপরতার কারণেই পরিস্থিতি শোচনীয় রুপ ধারণ করেছে। তিনি বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গাদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানান।