কুমিল্লা-৫ আসন আওয়ামী লীগে অন্তদ্বন্দ্ব একাধিক গ্রুপিং মাঠে নেই বিএনপি
ই-বার্তা
প্রকাশিত: ৩০শে আগস্ট ২০১৭, বুধবার
| বিকাল ০৫:৫০
রাজনীতি
ই-বার্তা ।। কুমিল্লা প্রতিনিধি।। কুমিল্লা বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়া নিয়ে ৫ সংসদীয় আসন। জাতীয় নির্বাচনের একবছর বাকী। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে প্রার্থী হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতা। কেউ ছুটছেন হাওয়া ভবন নিয়ন্ত্রণকারী একাধিক মামলার ফেরারী আসামী লন্ডনে থাকা বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বিএনপির আগামী দিনের কান্ডারী তারেক রহমানের নিকট। কেউ আলীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আলীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার নিকট ধর্না দিচ্ছেন।
আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার মাঝি হওয়ার টিকেট পাওয়ার জন্য। এই টিকেট কজনের ভাগ্যে জোটে সেটা বিবেচনা করবে দুদলের প্রধান। জেলার সীমান্তবর্তী বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া দুটি উপজেলা নিয়ে কুমিল্লা ৫ সংসদীয় আসন গঠিত। এই দুটি উপজেলায় রয়েছে ১৭ টি ইউনিয়ন। তার মধ্যে বুড়িচংয়ে ৯ টি এবং ব্রাহ্মণপাড়ায় ৮ টি ইউনিয়ন রয়েছে।
এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক আইন মন্ত্রী আলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর অন্যতম সদস্য এড. আব্দুল মতিন খসরু। ১৫/১৬ বছর যাবত দলীয় কমিটিগুলো না করায় কর্মী সমর্থকরা হতাশ। এক্টিভ কর্মীদেরকে বাদ রেখেই তিনি চলতি বছরের রমজান মাসে অর্ধশতাধিক সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। দুউপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাস্তা-ঘাট বিদ্যূৎ,মসজিদ মাদ্রাসাসহ উন্নয়ন করলেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল উন্নয়ন করেছে এই মেয়াদে।
বলতে গেলে ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের পরে এই দুই উপজেলায় কোন উন্নয়নই হয়নি। তা এলাকার রাস্তাঘাট দেখলেই বুঝা যায়। দলীয় কমিটি নামক মুলা ঝুলিয়ে রেখে ২০০১ সাল থেকে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আসছেন তিনি। পদলোভী কিছুসংখ্যক কর্মীসমর্থক নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দাওয়াত খেয়ে বেড়ান। ফলে কমিটি না পাওয়া আলীগ সহ অঙ্গসংগঠনে একাধিক গ্রুপিং সৃষ্টি হয়। এই বিভেদের কারণে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জামায়াত ফায়দা লুটে নেওয়ার চেষ্টা করবে। সাধারন মানুষকে বিভ্রান্ত করে তাদের স্বার্থ হাসিল করে ভোটের বাজার চাঙ্গা করে তুলছেন। ২০১৩ সালে জামায়াতের নাশকতাকারীরা পালিয়ে থাকা নেতা-কর্মীরা ইতিমধ্যে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে ভোট ব্যাংক তাদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী ও উপজেলা নির্বাচনে পরাজিত আলীগ নেতা আলহাজ্ব আবু তাহের দুইভাগে বিভক্ত। মিস্টার পারসেন্টিজখ্যাত উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী ৮টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। দলীয় কমিটির সদস্যদেরকেও কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রন করেন। প্রশ্নবিদ্ধ পকেট কমিটির পদপদবী হারানোর ভয়ে টু শব্দ করার সাহস নেই কারোর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রভাবশালী নেতা বলেন সময়মত ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যানের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরা হবে। রাস্ট্রীয় কোন সভাসমাবেশে আবু তাহের অংশগ্রহণ না করলেও তার ব্যক্তিগত অর্থায়নে এলাকার বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে প্রতিনিয়ত।
স্থানীয় লোকজন জানান, তাদের এই দ্বন্দ্বের সুত্রপাত বিগত উপজেলা নির্বাচনে দল থেকে আলহাজ্ব আবু তাহের মনোনয়নের জন্য জোর দাবী জানিয়েছিল ওই আসনের এমপি আব্দুল মতিন খসরুর কাছে। উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীতায় দলীয় সিদ্ধান্ত জাহাঙ্গীর খান চৌধুরীকে দেয় এবং কথিত আছে গোপনে শপথ করে আলহাজ্ব আবু তাহেরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী করিয়ে দেন তিনি। নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে তখন এমপি আব্দুল মতিন খসরুর অবস্থান জানতে বাধ্য করা হলে এবং প্রশ্নবিদ্ধ পদ্ধতিতে দলীয় প্রার্থীকে জিতিয়ে আনেন। সে থেকে দুই ব্যক্তির দ্বন্দ্বে দলের মধ্যে যেমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি করে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও দুভাগে বিভক্ত।
এরই মাঝে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া থেকে নতুন সংযোজন হলো জাহাঙ্গীর খান চৌধুরীর নাতি ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরীর আওয়ামীলীগের এমপি প্রার্থী হিসেবে মাঠে বিচরন। বিবদমান গ্রুপগুলোই গোপনে গোপনে ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরীকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যদি আবার নতুন মুখ হিসেবে দলীয় প্রার্থীতা পেয়ে যায়।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা নাজুক হলেও এখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ আগামী সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষনা দিলে তৃণমূল পর্যাযের নেতা-কর্মীরা চাঙ্গা হয়ে উঠে। তিনি কুমিল্লায় আসলে ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা শ্লোগানে শ্লোগানে মূখরিত হয়ে উঠে মওকত মাহমুদের আগমনে। তিনি চলে গেলে নেতা-কর্মীদের আর খুঁজে পাওয়া যায়না।
বুড়িচং উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদে মিজানুর রহমান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আত্মগোপনে থেকে দল পরিচালনা করলে ও উপজেলা প্রশাসন কৌশলে চালিয়ে যাচ্ছেন উপজেলার কার্যক্রম। লুটপাট করা হচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা। উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা মিটিং, উপজেলা চেয়ারম্যান না হাজির থাকলও হাজিরা খাতায় তার স্বাক্ষর থাকে। নেতা-কর্মীরা বিপদে আপদে তাকে পাশে পায়না। আলীগের সাথে গোপন যোগাযোগ করে কোন রকমে টিকে আছেন।
জনগণের প্রশ্ন তিনি নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েও কেন উপজেলায় থাকেন না। আর ময়নামতি ইউনিয়ন এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছেন ইউপি চেয়ারম্যান লালন হায়দার তার বড় ভাই কুমিল্লা জেলা পরিষদ সদস্য তারিখ হায়দার। ওই এলাকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান,বুড়িচং এলাকার পশ্চিম অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ ও রাজত্ব করছেন তারা তিন ভাই। এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি বিশাল বাহিনী। যাদের দ্বারা এলাকায় সন্ত্রাসী চাঁদাবাজি,খুন,ডাকাতি ,জমিদখল ,সংখ্যা লঘু যুবতীদের রাতের আধাঁরে ধর্ষন,মাদক ব্যবসা সবই হয়। কিন্তু কেউ প্রতিবাদকরার সাহস পাচ্ছেনা।
এদের কাউকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আটকের চেষ্টা করলে তাদের উপরও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার। কখনো পুলিশের হ্যান্ডকাপ নিয়ে আসামী ছিনতাই,কখনো পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে আসামী ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এলাকার কোন মানুষ নির্যাতিত হলে প্রতিবাদকরলে তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করা হয়। ফলে ময়নামতি,ভারেল্লা উত্তর ও দক্ষিণ এবং মোকাম ইউনিয়নের মানুষ তাদেও নেতৃত্বের কারণে আলীগ বিমূখ হয়ে পড়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে অভিযোগ করলে এমপি সাহেব ও আমলে নেয় না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধীক ব্যাক্তি। যা আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেন নেতা কর্মীরা।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বুড়িচং উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন স্বপন। তিনি দক্ষিণ জেলা আলীগ সাধারণ সম্পাদক রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব অনুসারী হওয়াতে তার নির্বাচনী এলাকার এমপি ছাড়া উপজেলা আলীগ ও এর অংগসগঠনের নেতা-কর্মীদেও সাথে তেমন কোন যোগাযোগ রাখছেন না বিগত সময়ের মত। আওয়ামী লীগ দলীয় নির্দেশ অমান্য করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে কুমিল্লা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় ও দলীয় ভাবে কোনঠাসা হওয়ায় উপজেলায় আ’লীগের অংগসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সাথেও কোন রাজনৈতিক সম্পর্ক তেমন একটা রাখছেননা বলেও একাধিক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুত্র দাবি করে।
তাছাড়া গ্রুপিংয়ের কারনে বুড়িচং উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সারোয়ার আলম পলাশ হত্যা মামলার অভিযোগ তো আছেই এই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের উপর এবং বুড়িচং উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট রেজাউল করিম খোকনকে ২০০১ সালে হত্যা চেস্টার অভিযোগ সহ দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব তো আছেই তার বিরুদ্ধে। বুড়িচং উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালে লাগামহীন দুর্নীতির করনে গঠিত তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ করেনি। ফলে বুড়িচং উপজেলায় ত্রিধাবিভক্ত আ’লীগের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, দুস্কৃতিকারীদের দলের প্রভাবমুক্ত সাধারন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে নৌকার প্রার্থীর পরাজয় সুনিশ্চিত বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আওয়ামীলীগ ও বিএনপি উভয় দলের কর্মীদের চাওয়া নতুন মুখের প্রার্থী দিলে আভ্যন্তরিণ কোন্দল প্রশমিত হয়ে সুষ্ঠ নির্বাচন হতে পারে। সেক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির সত্যিকারের জনপ্রিয়তা প্রকাশ পাবে।
কুমিল্লা ৫ সংসদীয় আসনে যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী আলীগের বর্তমান এমপি আব্দুল মতিন খসরু, ব্যারিষ্টার সোহরাব খান চৌধুরী, বিএনপির দলছুট নেতা সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মোঃ ইউনুছ, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ, বিএনপির সিনিয়র ভাইন চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ট বন্ধু শিল্পপতি এএসএম আলাউদ্দিন প্রমূখ। বুড়িচং ভোটার সংখ্যা দু’লাখ ৬৬ হাজার ৯৩ জন। ব্রাহ্মণপাড়ায় ১ লাখ ৪৬ হাজার ১শ০৬ জন ভোটার রয়েছেন। দুই উপজেলার সংখ্যালঘু ভোটার প্রায় ৩০ হাজার। এরাই নির্ধারন করবে কে হবে আগামীতে এই আসনের সংসদ সদস্য।