ডায়াবেটিস নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা ভূলে যান


ই-বার্তা প্রকাশিত: ৩০শে আগস্ট ২০১৭, বুধবার  | দুপুর ০২:২৮ মেডিকেল

ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা শরীরের সকল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়। অনেকেই ডায়াবেটিস কে বলেন, মৃত্যু ডেকে আনা অসুখ। কিন্তু মানুষ দিনের পর দিন ডায়াবেটিস সম্পর্কে কিছু ভূল ধারনা নিয়ে ও দিয়ে আসছে। যা আসলে একেবারেই ভিত্তিহীন। এই যেমন,

-মিষ্টি বেশি খেলে ডায়াবেটিস হয়।
সরাসরি মিষ্টি খাওয়ার সঙ্গে ডায়াবেটিস হওয়ার কোনোই যোগসূত্র নেই। মিষ্টি বেশি না খেলেও ডায়াবেটিস হতে পারে। আসলে পারিবারিক ইতিহাস, ওজন বৃদ্ধি, অস্বাস্থ্যকর খাবার, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা ইত্যাদি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। মিষ্টি বেশি খেলে ওজন বাড়ার আশঙ্কা থাকে কারণ মিষ্টি জাতীয় খাবারে ক্যালরি বেশি। আর এ কারণে পরোক্ষভাবে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কিছুটা বাড়ে তাই বলে মিষ্টি একমাত্র দায়ী নয়। বরং পরিমিত মিষ্টি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীও খেতে পারে।
-ডায়াবেটিসে ইনসুলিন সর্বশেষ চিকিৎসা।
ইনসুলিন একজন ডায়াবেটিস রোগীর জীবনে যেকোনো সময়ই লাগতে পারে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায়, যেকোনো বড় অস্ত্রোপচারের আগে-পরে, কোনো গুরুতর রোগে হাসপাতালে থাকাকালীন যেমন- হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা মারাত্মক কোনো সংক্রমণের সময়, কিডনি বা যকৃতের জটিলতায় ইনসুলিনই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ চিকিৎসা। এ ছাড়া কোনো কারণে রক্তে শর্করা অনেক বেড়ে গেলেও ইনসুলিন দরকার হবে। ব্যাপারটা এমন নয় যে ইনসুলিন দেওয়া হচ্ছে মানে আপনার অবস্থা খুব জটিল বা আপনি মরণাপন্ন।
-একবার ইনসুলিন ব্যবহার করলে সারা জীবনই তা দিতে হবে।
বিষয়টা আসলে তা নয়। নানা কারণে ইনসুলিনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। আবার পরে তা পরিবর্তন করে ওষুধ খাওয়াও যেতে পারে। যেমন গর্ভাবস্থা কেটে যাওয়ার পর বা অস্ত্রোপচারের ঘা শুকিয়ে যাওয়ার পর একসময় ইনসুলিন বন্ধ করে আবার ওষুধ খাওয়া যায়। তবে টাইপ ১ ডায়াবেটিস, কিডনি ও যকৃতের গুরুতর সমস্যা এবং সর্বোচ্চ মাত্রায় ওষুধ ব্যবহার করেও যদি শর্করা নিয়ন্ত্রিত না হয়, এসব ক্ষেত্রে সব সময়ের জন্য ইনসুলিন ব্যবহার করতে হবে।
-ডায়াবেটিস হলে কোন ফলমূল খাওয়া যাবে না।
তাজা ফলমূল সবসময় আপনার শরীরের জন্য ভালো। ডায়াবেটিস হলে যে আপনি সব ফলমূল থেকে দূরে থাকবেন এমনটি ভাবা বোকামি। ডায়াবেটিস
হলে কী খাওয়া যাবে বা যাবে না, তা নির্ভর করে ওই খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের ওপর। কোনো একটি খাবার রক্তে কত দ্রুত শর্করা বাড়িয়ে দিতে পারে। তার পরিমাপই হলো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স। বেশির ভাগ ফলমূলে প্রচুর আঁশ থাকায় রক্তে ধীরে ধীরে শোষিত হয় এবং এদের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অত বেশি নয়। কোনো কোনো ফলে শর্করার মাত্রা একটু বেশি, সেগুলোও নির্দিষ্ট মাত্রায় খাওয়া যাবে।
-গর্ভবতী মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে শিশুরও ডায়াবেটিস হয়।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থাকলে সেই মায়ের অনাগত শিশু নানা রকম ঝুঁকিতে ভোগে। তবে সেই শিশু ডায়াবেটিস নিয়ে জন্ম নেবে, তা ঠিক নয়। তবে পরবর্তী সময়ে বড় হওয়ার পর অন্যদের তুলনায় তার ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি একটু বেশি।
-ডায়াবেটিস হলে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব নয়।
শর্করা সুনিয়ন্ত্রিত থাকলে এবং সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করলে একজন ডায়াবেটিস রোগী আর দশজনের মতোই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন। ডায়াবেটিস হলে নিজেকে অভিশপ্ত মনে করার কিছুই নেই। বরং ডায়াবেটিস হওয়ায় আপনি নিয়ম মাফিক চলবেন এবং সে অনুযায়ী খাবার গ্জীরহণ করবেন যা আপনার জীবনীশক্তিকে আরোও সুন্দর করে তুলবে।

সর্বশেষ সংবাদ

মেডিকেল এর আরও সংবাদ